মঙ্গলবার   ২৬ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ১২ ১৪৩১   ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

নেতা আমেরিকায়, ডুবছে মানুষ

যুগের চিন্তা অনলাইন

যুগের চিন্তা

প্রকাশিত : ১০:১২ পিএম, ১৩ জুন ২০২১ রোববার

নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য শামীম ওসমান এখন আমেরিকায়। তার ঘনিষ্ঠ একাধিক সূত্রে জানা গেছে তিন দিন আগে তিনি আমেরিকায় গিয়েছেন বেড়াতে। এরই মাঝে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে দেখা গেছে তিনি সেখানে বেড়াচ্ছেন। বন্ধুদের সাথে চুটিয়ে আড্ডা মারছেন। এই ছবি ফেসবুকে পোষ্ট দেয়া হয়েছে। এমন এক সময় তিনি আমেরিকায় গেলেন যখন নাকি তার নিজের এলাকার জনগণ বৃষ্টির পানিতে চরম দুর্ভোগের মাঝে রয়েছেন।

 

শামীম ওসমানের নির্বাচনী এলাকা ফতুল্লায় এখন ঘরে ঘরে পানি। বৃষ্টির পানিতে ডুবে গেছে রাস্তাঘাট, মসজিদ, মাদ্রাসা, স্কুল, হাটবাজারসহ সব কিছু। বিশেষ করে ফতুল্লা ইউনিয়নের ইসদাইর থেকে লালপুর পর্যন্ত বিশাল এলাকা বৃষ্টির পানিতে ডুবে আছে। এসব এলাকার সব রাস্তায় এখন হাঁটু পানির উপরে। এছাড়া এনায়েতনগর ইউনিয়নের মুসলিম নগর এবং মাসদাইরসহ অনেক এলাকার মানুষই এখন জলাবদ্ধতায় নাকানি চুবানি খাচ্ছে। অসহায় এলাকাবাসী নানা মাধ্যমে শামীম ওসমানকে তাদের এই সকল দুর্দশার কথা জানিয়েছেন। তিনি সবই জেনেছেন।

 

শামীম ওসমান বিগত বছরগুলিতে এসব এলাকায় কোনো ড্রেনেজ ব্যাবস্থা গড়ে তোলেননি বা জলাবদ্ধতা নিরসনের কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি। ফলে যা হবার তাই হয়েছে। এসব এলাকায় দিনে দিনে জলাবদ্ধতা আরো বাড়ছে। এই মুহুর্তে এসব এলাকার সাধারণ মানুষের দুঃখ দুদর্শার কোনো সীমাপরিসীমা নেই। ডিএনডির ফতুল্লা এলাকার বহু বাড়িতে বৃষ্টির পানি ঢোকার কারণে ওই সকল বাড়ির ভাড়াটিয়ারা বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র চলে যাচ্ছেন। ফলে ফতুল্লার মানুষ এখন এই এমপির তীব্র সমালোচনা করছেন।

 


এবিষয়ে ফতুল্লা ইউনিয়নের টাগারের পাড় এলাকার বাসিন্দা মনির হোসেন বলেন, জলাবদ্ধতার কারণে আমরা যে কি পরিমাণ কষ্টের মাঝে দিন যাপন করছি সেটা এখন সকলেই জানেন। বৃষ্টির পানি আর মানুষের বাড়িঘরের পানি একাকার হয়ে গোটা এলাকা এখন ভাসছে। আমাদের ঘরের ভেতর পানি। আর রাস্তাতো ডুবে আছে হাঁটু পানির নিচে। ঘর থেকে বের হওয়ার কোনো উপায় নেই।

 

অথচ শামীম ওসমানের মতো এমপি আমাদের নেতা। তিনি নিজেকে দাবি করেন উন্নয়নের রূপকার। তার চেলাচামুন্ডরা তার গুণগান করে মুখে ফেনা তুলে ফেলেন। আসলে এই এমপি কোনো কাজই করেন না। কখনো তিনি এলাকায় আসেন না। আমরা কেমন আছি দেখতেও চান না। তাইতো তার এই বিশাল ব্যর্থতার কারণে আমরা এখন নিদারুণ কষ্টের মাঝে জীবনযাপন করছি। তাই বলতে বাধ্য হচ্ছি শামীম ওসমান আসলে একজন চাঁপাবাজ এমপি। শুধু বড় বড় কথা বলেন। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই করেন না। তার ব্যর্থতার কারণেই গোটা এলাকা ডুবে গেছে। প্রতি বর্ষায়ই এমন হচ্ছে। চার/পাঁচ মাস আমরা বৃষ্টির পানিতে ডুবে থাকি। এমন কি শীতকালেও ঘর গৃহস্থালির পানি সরে না। রাস্তায় পানি জমে থাকে। কারণ শামীম ওসমান আমাদের জন্য কিছুই করছেন না। তিনি যদি আন্তরিক হতেন তাহলে আমাদের এই সমস্যা থাকতো না।

 


এদিকে গতকাল ইসদাইর বাজার এলাকায় গিয়ে দেখা যায় হাঁটু পানির নিচে ডুবে আছে ওই এলাকার সব রাস্তাঘাট। পক্কু নামক এক ব্যক্তির দোকানে এবং আসপাশের সব দোকানপাটে পানি। দোকানের বাহিরে ইট বালু সিমেন্ট দিয়ে বাঁধ দিয়েও তিনি দোকান বাঁচাতে পারেননি। তার কাছে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে বলেন, কি আর বলবো দেখতেইতো পারছেন। আমাদের দুঃখ দেখার কেউ নেই। গত প্রায় এক মাস ধরেই বৃষ্টির পানিতে ডুবে আছে এই রাস্তা। কিন্তু কিছু বলতেও ভয় লাগে। আসলে আমাদের আল্লাহ ছাড়া আর কেউ নেই।

 

অপরদিকে প্রায় কোমড় সমান পানিতে ডুবে আছে ফতুল্লার লালপুর। ওই এলাকায় বাস করেন শামীম ওসমানের অনুসারী জেলা ও থানা পর্যায়ের বেশ বড় কিছু আওয়ামী লীগ নেতা। যেমন, শওকত আলী, মীর সোহেল, শরীফুল হক এবং স্বপন চেয়ারম্যানের মতো নেতারা বাস করেন লালপুরে। তাদের বাড়ির সামানের রাস্তায়ও পানি। তাই অনেকে মনে করেন তারাও সম্ভবত শামীম ওসমানকে ভয় পান। অথবা তাদেরকে শামীম ওসমান কোনো পাত্তা দেন না। নইলে তাদের মতো নেতারা থাকতে কেনো বছরের পর বছর এলাকাটি ডুবে থাকবে?

 


এদিকে শুধু ফতুল্লা ইউনিয়ন নয়, বরং কুতুবপুর এবং এনায়েতনগরেও ভয়াবহ জলজটের সৃষ্টি হচ্ছে। কুতুবপুরে বিভিন্ন পাড়া মহল্লার রাস্তাঘাট বৃষ্টির পানিতে ডুবে আছে। তারা বাজার থেকে এক বস্তা চাল কিনে বাড়িতে নিতে পারছেন না। একই অবস্থা বিরাজ করছে এনায়েতনগরের মাসদাইর বিসিক রোড, গাবতলী এবং মুসলিম নগর এলাকায়। তাই এসব এলাকার সাধারন মানুষ নানা ভাষায় শামীম ওসমানের সমালোচনা করছেন। তারা বলছেন শামীম ওসমান যে একজন ব্যার্থ এমপি সেটা প্রমাণ হয়ে গেছে। তিনি শুধু ব্যর্থই নন বরং তিনি নিষ্ঠুরও বটে। নইলে এ সময় তিনি এলাকাবাসীকে এমন কষ্টের মাঝে ফেলে রেখে আমেরিকায় গিয়ে আনন্দ ফূর্তি করতে পারতেন না।

 


প্রসঙ্গত, এবার বর্ষা শুরু না হতেই ফতুল্লা অঞ্চলে ভয়াবহ জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। আর এই জলাবদ্ধতার খবর স্থানীয় পত্রিকাগুলিতে ফলাও করে প্রচার হয়। এছাড়া এলাকাবাসী নিজেরা ছবি তুলে ফেসবুকে পোষ্ট দিয়ে তাদের এমপি শামীম ওসমানের হস্তক্ষেপ চান। কিন্তু এমতাবস্থায় জনগণকে বাঁচানোর কোনো ব্যবস্থা না করেই তিনি সূদুর আমেরিকা ভ্রমণে চলে যান। তার এই আমেরিকা ভ্রমণের ছবি ফেসবুকে পোষ্ট দেয়া হলে নারায়ণগঞ্জবাসীর মাঝে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। বিশেষ করে দুর্ভোগকবলিত এলাকার মানুষ শামীম ওসমানের এমন আচরণে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যাক্ত করেন। ফলে তারা এখন বলছেন আসলে তিনি কোনো জননেতা হতে পারেন না। একজন জননেতা তার এলাকার জনগণকে এমন দুর্ভোগের মাঝে ফেলে রেখে বিদেশে বেড়াতে যেতে পারেন না। শামীম ওসমানের নিষ্ঠুরতায় হতবাক তার এলাকার দুর্ভোগে থাকা সাধারণ মানুষ।