লিংক রোডে চাঁদাবাজির মহোৎসব!
যুগের চিন্তা অনলাইন
যুগের চিন্তা
প্রকাশিত : ১২:১৯ এএম, ১৫ জুন ২০২১ মঙ্গলবার
শ্রমিক সংগঠনের নামে ঢাকা নারায়ণগঞ্জ লিংক-রোডে চাঁদাবাজির মহোৎসবে মেতেছে একটি মহল। চাঁদা না দিলে চালকদের উপর চলে নির্যাতনের খড়গ। নানা ভাবে প্রতিবন্ধকতাও সৃষ্টি করা হয় চালকদের। এমনকি চাদা না দিলে সাইনবোর্ডে গাড়ি পার্কিং করে যাত্রীও উঠাতে দেয়া হয়না বলে অভিযোগ করছেন চালকরা। চালাকরা জানান, ইজিবাইকগুলোতে বিভিন্ন স্টীকার লাগিয়ে মাসিক হারে মোটা অংকের চাঁদা উত্তোলন করছে ওই মহলটি।
অনুসন্ধানে জানা যায়, অটোরিক্সা (ইজিবাইক), অটোটেম্পু শ্রমিক ইউনিয়ন (রেজিঃ নং- ৪০৪১) এর নামে একটি সংগঠন গড়ে উঠেছে। ওই সংগঠনের নেতা জাহাঙ্গীর ঢালী, মো. রাশেদ, মো. হাসেম, হাবিব ও আলী। তাদের পেছনে রয়েছে কুতুবপুর ইউনিয়নের ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি আলমগীর। মূলত আওয়ামী লীগ নেতা আলমগীরের নিয়ন্ত্রণে পরিচালিত ওই সংগঠনটি চাঁদাবাজীর গভীর কৌশল এঁটেছে। ইতিপূর্বে চাঁদাবাজরা সড়ক থেকে সরাসরি চাঁদা উত্তোলন করতো। কিন্তু আইন শৃঙ্খলা বাহিনী তথা র্যাবের অভিযানের ভয়ে কৌশল পরিবর্তন করে স্টীকার প্রদানের মাসে মাসে ইজিবাইক মালিকদের কাছ থেকেই নির্বিঘেœ চাঁদার টাকা উত্তোলন করে পকেট ভারি করছে মহলটি।
জানা গেছে, গত বছরও র্যাবের অভিযানে ওই সংগঠনের বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী হাতে নাতে গ্রেফতার হয়। মামলাটি এখনো চলমান। অনুসন্ধান বলছে, সংগঠনটি প্রতিমাসে বিভিন্ন ধরনের স্টীকার করে তা লিংক রোডে চলাচলরত ইজিবাইকগুলোতে লাগিয়ে দিচ্ছে। স্টীকার বাবদ প্রতিটি ইজিবাইক থেকে মাসে ১ হাজার টাকা করে চাঁদা উত্তোলন করা হয়। গত কয়েক বছরে ওই শ্রমিক সংগঠনের নেতারা অন্তত ৪ শতাধিক ইজিবাইকে স্টীকার লাগিয়েছেন। ৪ শত ইজিবাইকে স্টীকার লাগানো বাবদ ১ হাজার টাকা করে চাঁদা উত্তোলন হলে মাসে এর অংক দাঁড়ায় ৪ লাখ টাকা। চালকদের অভিযোগ, শ্রমিক সংগঠনের নামে চাঁদা উত্তোলন হলেও ওই সংগঠনটির শ্রমিক কল্যাণ ফান্ড নেই। কোন শ্রমিক ক্ষতিগ্রস্থ হলে তাদের সহায়তাও করা হয়না।
পুলিশ প্রশাসনের নাম করে ওই সংগঠনের নেতারা চালকদের কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে। চালক ইয়াসিন মিয়া বলেন, ‘স্টীকার থাকলে আমাদের গাড়ি পুলিশ বা ট্রাফিকরা আটক করে না। আর স্টীকার না থাকলে যেকোন সময়ে যেকোন স্থানে গাড়ি আটকের পর রেকার বিল উত্তোলণ করে। রেকার লাগালে ২২শত টাকা করে দিতে হয়। তাই ঝামেলা এড়াতেই আমরা ওই সংগঠনের নেতাদের মাসে মাসে ১ হাজার টাকা করে দিয়ে দিই। আগে সড়ক থেকে প্রতিদিন চাঁদা উত্তোলন করা হতো। এখন মালিকরা আমাদের কাছ থেকে নিয়ে প্রতিমাসে তাদের হাতে হাতে চাঁদার টাকা দিয়ে দেয়।’
এদিকে, অটোরিক্সা (ইজিবাইক), অটোটেম্পু শ্রমিক ইউনিয়ন অভিযুক্ত নেতা জাহাঙ্গীর ঢালির সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘সড়কে লাইনম্যান থাকে। তাদের বেতনের জন্য প্রতি মাসে ইজিবাইক থেকে ৫শ’ টাকা করে নেই। আর স্টীকার লাগিয়েছি এই কারণেই যে, কোন কোন ইজিবাইক লাইন খরচ দেয় তা সনাক্ত করার জন্য। বিষয়টি স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা আলমগীর ও ট্রাফিক পুলিশের লোকজন অবগত আছেন। লাইন চালালেতো অনেক খরচই বহন করতে হয়।’ এদিকে, স্টীকার লাগিয়ে চাঁদাবাজি করায় এর প্রতিবাদ জানিয়ে ওই সংগঠনের কার্যকরি সভাপতির পদে থাকা অহিদুল ইসলাম নামে এক নেতা পদত্যাপ করলেও বর্তমানে তার নাম করেও কিছু ইজিবাইক থেকে ওই মহলটি চাঁদা উত্তোলণ করে যাচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
পুলিশ সুপার, ফতুল্লা মডেল থানা ও র্যাব-১১’র কার্যালয়ে দায়েরকৃত অভিযোগে অহিদুল ইসলাম অহিদ বলেন, ‘আমি পদত্যাগ করার পরও জাহাঙ্গীর ঢালী, মো. রাশেদ, মো. হাসেম, হাবিব ও আলী আমার নাম করে চাঁদা উত্তোলন করছে বলে জানতে পেরে আমি এর প্রতিবাদ জানাই। অতঃপর তারা আমাকে গালিগালাজ করাসহ মারধর করতে চেষ্টা করে এবং প্রাণনাশের হুমকি দেয়। এই বিষয়ে পুলিশ সুপার, ফতুল্লা মডেল থানা ও র্যাব-১১’র কার্যালয়ে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছি।’ এদিকে, লিংক রোডে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনীর নাম ভাঙ্গিয়ে চাঁদাবাজির বিষয়ে জানতে চাইলে নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশের এএসপি (ট্রাফিক) মো. সালেহ উদ্দিন বলেছেন, ইজিবাইকগুলো এমনিতেই অবৈধ। এগুলো আমরা চাষাঢ়ায় ঢুকতে দেই না। রেকার লাগিয়ে জরিমানা আদায় করা হয় আবার ডাম্পিংও করা হয়। এখানে প্রশাসনের নাম ভাঙ্গিয়ে যদি কেউ চাঁদাবাজী করে থাকে, তাহলে তাদের অবশ্যই আইনের আওতায় আনা হবে।