মঙ্গলবার   ২৬ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ১২ ১৪৩১   ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

না.গঞ্জে ফাঁকিবাজিতে চলে হাসপাতাল

ফরিদ আহম্মেদ বাধন

যুগের চিন্তা

প্রকাশিত : ০৭:৩৬ পিএম, ১৯ জুন ২০২১ শনিবার

নারায়ণগঞ্জের হাসপাতালগুলোতে ভুল চিকিৎসায় প্রসুতী থেকে অন্য রোগীরও মৃত্যুর হার বেড়েই চলছে। নিহতের স্বজনদের কাছ থেকে বারবার অভিযোগ উঠলেও সংশ্লিষ্ট মহলকে তেমন কোনো ব্যবস্থা নিতে দেখা যায় না। ব্যাঙের ছাতার মতো যত্রতত্র গড়ে উঠছে ক্লিনিক নামের মানুষ মারার কসাই খানা। হাসপাতাল বা ক্লিনিকগুলোর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠার পর সেগুলোর বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিলে সঠিক চিকিৎসা এবং চিকিৎসকের ব্যাপারে ক্লিনিকগুলো সচেতন হতো বলে মনে করেন  অনেকে।

 

শহর ও শহরের বাইরের ক্লিনিকগুলো আদৌ অনুমোদিত কিনা এই ব্যাপারে সিভিল সার্জন অফিসও সচেতন নয় বলে অভিযোগ উঠেছে। হাসপাতালগুলোতে প্রসূতি মৃত্যুর হার দিন দিন বেড়ে চলছে। সেই সাথে ইসলাম হার্ট সেন্টারের মতো একটি নাম সর্বস্ব হাসপাতালে এখন পর্যন্ত কোনো হার্টের রোগী জীবিত ফিরেছে কিনা তা নিয়েও সন্দিহান অনেকে। শহরের রিজিয়া ক্লিনিকে বুধবার বন্দরের গৃহবঁধুকে অপারেশনের সময় ভুল ইনজেকশন দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। ঐ নারী ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বৃহস্পতিবার মৃত্যুবরণ করেছে। 

 


বুধবার বন্দরের কলাগাছিয়া এলাকার আখি আক্তারের সন্তান প্রসবের ব্যাথা উঠে। প্রথমে তাকে বন্দর এলাকার সূর্যমুখী হাসপাতালে নিয়ে যান তাঁর স্বজনরা। রোগীর অবস্থা খারাপ দেখে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সরকারী হাসপাতালে রোগীকে নেয়ার পারমর্শ দেয়। তবে ঐ হাসপাতালে থাকা দালাল রিয়াজ প্রসুতির পরিবারকে শহরের রিজিয়া ক্লিনিকে ভর্তি করানোর কথা বলে। তার কথা মতো প্রসূতিকে বুধবার বিকেলে রিজিয়া ক্লিনিকে আনা হয়। এরপর তাকে অপারেশন থিয়েটারে নেয়া হয়। সেখানে আংশিক অপারেশনের পর রোগীকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে রেফার্ড করে ডা.আজগর আলী। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে আঁখিকে নেয়ার পর সেখানে নব জাতকের জন্ম হয়। তবে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে আঁখি। নিহতের পরিবারের অভিযোগ ডা. আজগর আলী প্রসূতি আখিকে ভুল ইনজেকশন প্রয়োগ করেছিলেন। আর এ কারণেই তার মৃত্যু হয়েছে।   

 


আখির মতো এমন অনেক নারী এ যাবৎকালে নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন ক্লিনিকে চিকিৎসকের ভুল চিকিৎসায় মৃত্যু হয়েছে। নিহতের পরিবারগুলোর দাবির প্রেক্ষিতে একটি হাসপাতালের বিরুদ্ধেও দৃষ্টান্তমূলক কোনো পদক্ষেপ নেয়নি কর্তৃপক্ষ। এমনিভাবে অনেক শিশু হারাচ্ছেন তার মাকে। আবার অনেক মা তার সন্তানকে হারাচ্ছেন। বর্তমানে যে সমস্ত নারী সন্তান প্রসবের আগে  যে সব চিকিৎসকের তত্বাবধানে থেকে চিকিৎসা নেন,প্রসবের সময় এলেই পরিবারের লোকজনদের সিজারের পরামর্শ দেন ঐ চিকিৎসক। আর বেশিরভাগ প্রসূতিই সন্তান প্রসবের সময় চিকিৎসকের কারণে অপারেশনের সম্মুখীন হন।

 

 
সূত্রের দাবি, নারায়ণগঞ্জের যে হাসপাতাল বা ক্লিনিক রয়েছে বেশির ভাগ হাসপাতালগুলো টিকে আছে প্রসুতির সিজারের উপরা ভিত্তি করে। প্রতিদিন কোনো না কোনো হাসাপাতাল বা ক্লিনিকে প্রসুতীদের সিজার করা হয়। সিজার জেনো বাধ্যতামূলক। নরমাল ডেলিভারী যেনো অলীক কল্পনা। কিছু দালাল চক্র হাসপাতালের সাথে যোগাযোগ রাখে। তারাই একজন প্রসূতির পরিবারকে নানা রকম ভুলভাল বুঝায়। অপরদিকে চিকিৎসকদেরও বিভিন্ন এলাকা ও থানা ভিত্তিক দালাল রয়েছে । একজন প্রসূতির অপারেশন বাবদ যে টাকা আদায় করা হয়,সে টাকার একটি অংশ চিকিৎসক, কিছু অংশ দালাল আর বাকি টাকা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের থেকে যায়। কেবল মাত্র ব্যবসা করার উদ্দেশ্যেই নারায়ণগঞ্জে বেশির ভাগ হাসপাতাল নামে বেনামে গড়ে উঠেছে। সেবা পাওয়া এখানে শুধুই কল্পনা। 

 


গত ১৫ মার্চ রাতে খানপুর জোড়া ট্যাংকি সংলগ্ন সেন্ট্রাল জেনারেল হাসপাতালে প্রসুতী পান্নার মৃত্যু হয়। তিনি শহরের ডনচেম্বার এলাকার বাসিন্দা জিসান আহমেদের স্ত্রী। নিহতের পরিবারের অভিযোগ, সোমবার দুপুর বারোটার দিকে প্রসব যন্ত্রণা শুরু হলে পান্না বেগমকে খানপুর এলাকার সেন্ট্রাল জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। তাঁর অপারেশন করেচিলেন খানপুর ৩শ’ শয্যা হাসপাতালের গাইনি চিকিৎসক মিশকাত জাহান হেনা।  সন্তান প্রসবের পর রোগীকে হাসপাতালে নার্স ভুল ইনজেকশন পুশ করার অভিযোগ উঠে।  এ ঘটনায় হাসপাতাল ভাঙচুর করে স্বজনরা। 

 


২০১৯ সালের ১৮ অক্টোবর সোনারগাঁয়ের মোগরাপাড়া চৌরাস্তা এলাকায় পুরাতন সেবা জেনারেল হাসপাতাল নামে এ ক্লিনিকে চিকিৎসকের অবহেলায় রোগী মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে।  সোনারগাঁ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জুনিয়র সার্জারি কনসাল্ট্যান্ট রিয়াজ মোর্শেদের তত্ত¡বধানে ভর্তি হওয়ার পর মালেকাকে বিকেল তিনটার দিকে  অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যায়। রোগীর স্বজনরা রোগীর অবস্থা জানতে চাইলে অপসারিত পিত্তথলি পাথর এনে দেখিয়ে রোগী ভালো আছেন বলে জানান।শেষ পর্যন্ত তিনি আর ঐ হাসপাতাল থেকে জীবীত ফিরতে পারেনি। ২০১৭ সালের  ২৪ মে  সিদ্ধিরগঞ্জের কদমতলী এলাকায় এম হোসেন জেনারেল হাসপাতালে ময়না নামের এক নারীর মৃত্যু হয় । জরায়ুর টিউমার অপারেশন করতে গিয়ে ক্লিনিকের চিকিৎসকের ভুল চিকিৎসায় তার মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ উঠে। রোগীর মৃত্যুর পর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ  হাসাপাতাল থেকে সটকে পড়ে।

 


২০২০ সালের ২৩ আগষ্ট নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার পাগলাস্থ গ্রিণ ডেল্টা নামের হাসপাতালে ভুল চিকিৎসায় আয়েশা আক্তার আলফি (১৪) নামে এক কিশোরীর মৃত্যু হয়। চিকিৎসকের ভুল চিকিৎসায় ঐ কিশোরীর মৃত্যু হয় বলেও ছিল পরিবারে অভিযোগ। সিড়ি থেকে পড়ে গিয়ে পায়ে ব্যাথা জনিত কারনে হাসপাতালটিতে ভর্তি হয়েছিলো স্কুল ছাত্রী আলফি। জেলা সিভিল সার্জন অফিস থেকে সাময়িক সময়ের জন্য হাসপাতালটি বন্ধ করে দিলেও পুনরায় সেই হাসপাতালটি বীরদর্পে  চালিয়ে আসছে।