বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ নিয়ে বিপাকে নাসিক
যুগের চিন্তা অনলাইন
যুগের চিন্তা
প্রকাশিত : ০৯:২৮ পিএম, ২১ জুন ২০২১ সোমবার
নষ্ট হয়ে যায় পাম্প, ট্রিটমেন্টের পর পানি পরিষ্কার হয় তবে দুর্গন্ধ থেকে যায় : প্রকৌশলী
নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের বেশিরভাগ এলাকায় ওয়াসার পানিতে ময়লা ভাসে। দুর্গন্ধ বের হয়। পান তো দূরে থাক, গৃহস্থালির কাজেও ব্যবহার করা যাচ্ছে না। এতে নগরবাসী চরম ভোগান্তি পোহাচ্ছেন। বিকল্প হিসেবে খাবার পানির জন্য তাদের স্থানীয় মসজিদের গভীর নলক‚পের (সাব-মার্সিবল পাম্প) ওপর ভরসা করতে হচ্ছে। এছাড়াও নারায়ণগঞ্জ সিটি কপোর্রেশনের নতুন নিয়মেও ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে নগরবাসীকে।
অভিযোগ রয়েছে সঠিক সময়ের মধ্যে লাইনে পাওয়া যায় না ওয়াসার পানি। ৮ ঘন্টা করে ১৬ ঘন্টা পানি সরবরাহের কথা থাকলেও নির্দিষ্ট সময়ের আগেই ওয়াসার লাইনে পানি থাকে না। ওয়াসার পানিতে ময়লা ও দুর্গন্ধ নতুন নিয়মে নির্দিষ্ট সময়ে পানি না পাওয়া সবমিলিয়ে চরমে ভোগান্তিতে নগরবাসী। আর বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ নিয়ে বিপাকে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন। আর পাম্প বিকল হয়ে যাওয়ায় দুদিন বিশুদ্ধ পানি নিয়ে ঝামেলা পোহাচ্ছে নগরবাসী।
নগরবাসীর অভিযোগ, অনেক আগে থেকেই ওয়াসার পানিতে সমস্যা। সিটি করপোরেশন দায়িত্ব নেয়ার বছর পেরোলেও দুর্ভোগ কমেনি। ময়লা ও দুর্গন্ধে পানি ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। ময়লা পানি দিয়ে গোসলে বাচ্চাদের চর্মরোগ হচ্ছে। বড়রাও আক্রান্ত হচ্ছেন রোগব্যাধিতে। ফলে নগরবাসী খাবার পানির চাহিদা মেটাতে ওয়াসার পরিবর্তে শহরের মসজিদগুলোর দ্বারস্থ হচ্ছেন। প্রতিদিন সকাল-বিকেলে মানুষ লাইন ধরে অপেক্ষা করেন পানি নিতে হচ্ছে।
সরজমিনে নগরীর নিতাইগঞ্জের নলুয়া পাড়া, উকিল পাড়া, চাষাড়া, কালীবাজার, আমলাপাড়া, ডন চেম্বার, কলেজ রোড, গলাচিপা, দেওভোগ, থানা পুকুরপাড়, বন্দর ও সিদ্ধিরগঞ্জের বিভিন্ন ওয়ার্ডে এলাকায় ঘুরে এমন অভিযোগ পাওয়া গেছে। নারায়ণগঞ্জ সদর, বন্দর ও সিদ্ধিরগঞ্জের নাসিককের পুরো এলাকায় দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকট। পানি সরবরাহ ঠিক মতো হচ্ছে না বলে অভিযোগ করেন সাধারন মানুষ। বিশুদ্ধ পানিরসংকটের কারণে তাদের রান্নাবান্না, গোসলসহ দৈনন্দিন কাজকর্ম ব্যাহত হচ্ছে। আর এই নতুন নিয়মে পানি সরবরাহের কারনে সাধারন মানুষকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
শহরের গলাচিপা ডিএন রোডের অধিকাংশ মানুষ বায়তুল মাহফুজ জামে মসজিদ থেকে খাবার পানি সংগ্রহ করেন।
এলাকার সেলিম মিয়া জানান, ওয়াসার পানির অবস্থা খুবই খারাপ । ময়লা ও দুর্গন্ধ পানি পান করা যায় না। কাপড়চোপড় ধোয়া আর গোসল ছাড়া কিছুই করা যায় না। কষ্ট হলেও প্রতিদিন মসজিদ থেকে পানি সংগ্রহ করি। নলুয়া পাড়ার সুফিয়া বেগম জানান, ওয়াসার পানিতে লালসা লালসা। দুর্গন্ধ মুখে দেওয়া যায় না। পানি ফুটিয়েও খাওয়া যাচ্ছে না। আর ওয়াসার নতুন নিয়মে পানি ঠিক মতো থাকে না। নির্দিষ্ট টাইমের আগেই লাইনে পানি থাকেনা। এতে করে আমরা পানির সমস্যা ভুগছি। কিন্তু নিয়মিত বিল দিয়ে দিতাছি। বাধ্য হয়ে আমরা কষ্ট করে মসজিদ থেকে পানি সংগ্রহ করে ব্যবহার করছি।
বন্দরের সোনাকান্দা এলাকার বাসিন্দা আলী হোসেন বলেন, গত তিনদিন ধরে পাম্প নষ্ট। এই পাম্পটি প্রায়ই নষ্ট হয়ে যায়। আর নষ্ট হলে দুই হতে তিনদিন লেগে যায়। এরজন্য আমাদেরকে পানির সংকটে পড়তে হয়। ওয়াসার কর্তপক্ষের অবহেলার জন্য আজকে এই অবস্থা। মাঝে মাঝে ওয়াসার পানি থেকে আসে দুর্গন্ধ । এতটাই খারাপ যে আমরা পান করতে পারছি না। শুনছি সিটি কর্পোরেশন নাকি এখন ওয়াসার দায়িত্ব নিয়েছেন তাহলে নগরবাসীকে দুর্গন্ধ মুক্ত পানি সরবরাহের তাদের দায়িত্ব। তাহলে আমরা কেনো নিরবিচ্ছনো পানি পাই না।
নাসিকের নির্বাহী প্রকৌশলী (ওয়াসার দায়িত্বে থাকা) আজগর হোসেন ওয়াসার পানিতে কিছুটা দুর্গন্ধ আছে বলে স্বীকার করে বলেন, ওয়াসার পানিতে কিছুটা দুর্গন্ধ আছে। আমাদের ট্রিটমেন্ট করার পরও পানিটা কিছুটা পরিস্কার হয়। কিন্তু তারপরেও র্দুগন্ধ থেকে যায়। কারন টিটমেন্ট প্ল্যান্টটা তো আজ থেকে ১০ থেকে ১২ বছর আগে করা হয়েছে। তখন কিন্তু শীতলক্ষ্যার পানিটা লেভেল ছিলো এখন কিন্তু অনেক উপরে এর কারণে। আবার কিছু জায়গায় পাইপ ছিদ্র হয়ে আছে। এর কারণে পাইপের ভিতরে ময়লা ঢুকে যায় এতে করে পানিতে দুর্গন্ধ আসে। তারপর জলার্বদ্ধাতো আছেই। আমরা পুরো ওয়াসার পাইন নতুন করে সংস্কার করার উদ্যোগ নিয়েছি। এর জন্য সময় লাগবে।
তিনি আর বলেন, আমরা এখন ২২ ঘন্টা নিরবিচ্ছিন্নভাবে পানি সরবরাহ করছি। আমাদের সবগুলো পাম্প এখন সচল আছে। মাঝে মাঝে দুই একটা পাম্প নষ্ট হয়। আমরা তা দ্রæত চালু করার ব্যবস্থা করে থাকি। আর বন্দরের সোনাকান্দা এলাকার পাম্পটি নষ্ট হয়েছে গত তিনদিন আগে আমরা আজকে এই পাম্পটি চালু করে দিয়েছি। এর জন্য এই এলাকার মানুষ দুইদিন পানির সমস্যায় পড়তে হয়েছে।