বাড়ির ময়লা খালে !
যুগের চিন্তা অনলাইন
যুগের চিন্তা
প্রকাশিত : ০৮:৩৩ পিএম, ২৯ জুন ২০২১ মঙ্গলবার
গৃহস্থালীর ময়লা ফেলার নির্দিষ্ট ডাম্পিং পয়েন্ট নেই নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা ও এনায়েতনগর ইউনিয়নে। ফলে অত্যন্ত ঘনবসতিপূর্ণ এসব এলাকার গৃহস্থালীর ময়লা ফেলা হচ্ছে যত্রতত্র বা যেখানে সেখানে। এমনকি প্রবাহমান খালেও সৃষ্টি হয়েছে ময়লার ভাগার। এতে করে, খাল ভরাট হয়ে পানিপ্রবাহ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে এসব ইউনিয়নের অভ্যান্তরিণ খালগুলোর। সৃষ্টি হচ্ছে জলাবদ্ধতা।
সংশ্লিষ্ট জনপ্রতিনিধিরা বলছেন, বছর বছর ভেকু দিয়ে খাল খনন করা হলেও স্থানীয় বাসিন্দারা আবারও ময়লা ফেলে খাল ভরাট করে ফেলছেন। তাই খালে পানি প্রবাহের উদ্যোগ নিলেও তা দীর্ঘ মেয়াদী হচ্ছে না। এদিকে, খালে ময়লা ফেলার কারণ হিসেবে স্থানীয়রা বলছেন, আগে এসব ইউনিয়নে ব্যাপক খালি জায়গা ছিলো। তাই ময়লা ফালানো নিয়ে চিন্তিত থাকতে হতো না। কিন্তু ঘনবসতি হওয়ার পর ময়লা ফেলার মত নির্দিষ্ট কোন জায়গা পাওয়া যাচ্ছে না।
তাই, খালের পার্শ্ববর্তী মানুষ তাদের গৃহস্থালীর ময়লা খালের মধ্যে ফেলছে। এমনকি ময়লা নিতে আসা লোকজনও ভ্যানে করে ময়লা নিয়ে খালে ফেলছে। ফলে খালগুলো ভরাট হয়ে পানি প্রবাহ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এতে জলাবদ্ধতাও হচ্ছে এলাকার বিভিন্ন স্থানে। এর থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে ময়লা ফালানোর জন্য নির্দিষ্ট কোন জায়গা বের করতেই হবে।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে সদর উপজেলার এনায়েতনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান আসাদ দৈনিক যুগের চিন্তাকে বলেন, ‘আমাদের এখানে ময়লা ফালানোর জন্য নির্দিষ্ট কোন জায়গা না থাকায় মানুষ খালের মধ্যেই ময়লা ফেলছে। আমরা ভেকু দিয়ে খাল পরিস্কার করলেও সুফল পাওয়া যায় না। খাল আটকে গিয়ে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে। এজন্য জেলা বা উপজেলা প্রশাসন থেকে আমাদের ইউনিয়নে নির্দিষ্ট জায়গা দেয়া উচিৎ, যেখানে আমরা ময়লা ফেলার ডাম্পিং স্টেশন করতে পারি।’
তিনি বলেন, ‘জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আমাদের এনায়েতনগর ইউনিয়নের ময়লা ফালানোর জন্য বক্তাবলী ফেরীঘাট সংলগ্ন একটি জায়গা দিয়েছিলো। ওই জায়গাটি নাল জমি। কিন্তু স্থানীয়রা বাধা দিচ্ছে। তাদের দাবী, সেখানে ময়লা ফেলা হলে তারা ময়লার দূর্গন্ধে আশপাশে বসবাস করতে পারবে না। তাই আমাদের বিকল্প জায়গা দেয়া উচিৎ।’ ফতুল্লা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান খন্দকার লুৎফুর রহমান স্বপন বলেন, ‘ময়লা ফেলার জন্য ফতুল্লায় নির্দিষ্ট কোন জায়গা নেই। আমরা ফতুল্লার কোতালেরবাগ বাংলাদেশ খাদ নামক এলাকায় একটি জায়গা দেখেছিলাম। সেখানে ময়লার ডাম্পিং স্পট করার জন্য সাবেক ইউএনও নাহিদা বারিক মেডামের মাধ্যমে তৎকালিন জেলা প্রশাসক মহোদয় বরাবর আবেদন করা হয়েছিল। কিন্তু সেখানে ময়লা ফেলতে পরিচ্ছন্ন কর্মীরা বাধার সম্মূখিন হয়েছেন।
বর্তমানে বিভিন্ন স্থানে যত্রতত্র ময়লা ফালানো হচ্ছে। অনেকে খালের উপর ময়লা ফেলে খাল ভরাট করে ফেলছে। এর ফলে আমাদের এলাকার বিভিন্ন স্থানে জলাবদ্ধতা হচ্ছে।’ এই বিষয়ে জানতে চাইলে সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আরিফা জহুরা দৈনিক যুগের চিন্তাকে বলেন, ‘গত ২৭ জুন আমরা জেলা প্রশাসক মহোদয়ের কার্যালয়ে মিটিং করেছিলাম। সেখানে ডাম্পিং ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট নিয়ে আমাদের আলোচনা হয়েছে। এমন সিদ্ধান্ত হয়েছে যে, সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদ থেকে জায়গার প্রস্তাব পেয়ে তা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব আকারে পাঠাবো। কারণ এগুলো বড় বাজেটের বিষয়, উচ্চ পর্যায়ের সিদ্ধান্ত প্রয়োজন।’
সরেজমিনে দেখা যায়, নিরাপদ ও নির্দিষ্ট ভাবে ময়লার ডাম্পিং পয়েন্ট না থাকায় ময়লা নিয়ে বিড়ম্বনার মধ্যে পড়তে হচ্ছে বাসীন্দাদের। শহর ও শহরতলীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ন স্থান পরিণত হয়েছে ময়লার ভাগারে। বাতাসে ময়লার তীব্র দুর্গন্ধ ছড়িয়ে নষ্ট হচ্ছে পরিবেশ। এর বিরুপ প্রভাব পড়ছে জনজীবনে। মোড়ে মোড়ে ময়লার ভাগারে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে স্থানীয় বাসিন্দারা। বিশেষ করে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডের অবস্থা একেবারেই নাজুক। সড়কটির বিভিন্ন স্থানতো বটেই জালকুড়ি ও ভূইগড় এলাকায় লিংক রোডের দুই পাশ পরিণত হয়েছে বিস্তীর্ন ময়লার ভাগারে। ওই স্থানসহ ফতুল্লা খান সাহেব ওসমান আলী ক্রিকেট স্টেডিয়াম সংলগ্ন লিংক রোডের উপরেই গৃহস্থালীর ময়লা ফেলছে পরিচ্ছন্ন কর্মীরা। যদিও জালকুড়িতে বিজিবি ক্যাম্প এবং লিংক রোডে ৬ লেনের কাজ চলমান থাকায় সেখানেও ময়লা ফেলা যাচ্ছে না নিয়মিত।
এতে করে, আশপাশের ডোবা ও খালেই ময়লা ফেলছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। বছরের পর বছর ভুগতে হচ্ছে সকলকে। অঘোষিতভাবে লিংক রোড জুড়ে বিভিন্ন স্থানে ময়লা ফালানোর স্থান বানানোয় সেখানে প্রায় সময়ই মৃত গরু পর্যন্ত ফেলে রাখে কেউ কেউ। এতে করে ভয়ানক ভাবে নষ্ট হচ্ছে পরিবেশ। অন্যদিকে শিল্পনগরী নারায়ণগঞ্জে জনসংখ্যা তুলনামূলক বাড়তে থাকায় আগামীতে গৃহস্থালীর ময়লা হয়ে উঠবে হুমকি স্বরুপ, সে কথা বলাই যায়।