মঙ্গলবার   ২৬ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ১২ ১৪৩১   ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

লকডাউনের চেয়ে ক্ষুধাকে ভয়

যুগের চিন্তা অনলাইন

যুগের চিন্তা

প্রকাশিত : ০৮:৪৭ পিএম, ১ জুলাই ২০২১ বৃহস্পতিবার

দেশে ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে করোনা ভাইরাস। প্রতিদিন লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে করোনা সংক্রমণ রোগীর সংখ্যা। আক্রান্তের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মৃতের সংখ্যাও। করোনা সংক্রমন রোধে আজ বৃহস্পতিবার (১ জুলাই) থেকে দেশে সর্বাত্মক লকডাউনের ঘোষণা দিয়েছে সরকার। আরও হঠাৎ করে করোনা পরিস্থিতি বৃদ্ধি পাওয়ায় তিনদিনের জন্য সীমিত আকারে লকডাউন বাড়ানো হয়েছে।

 

লকডাউনের খবরে এরমধ্যেই নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে। আবার অন্যদিকে লকডাউনে নিম্ন আয়ের মানুয়ের রুজি-রোজগার বন্ধ। জীবন-জীবিকা নিয়ে তাই চিন্তায় পড়েছেন তারা। এই লকডাউনে মহাদুর্বিপাকে সবচেয়ে বিপন্ন অবস্থায় পড়েছে দৈনিক খেটে খাওয়া হতদরিদ্র মানুষ গুলো। অনাহারে, অর্ধাহারে নিত্যজীবন কাটানো এক দুঃসহ করুণ অবস্থা তাঁদের। এছাড়াও বিভিন্ন গণপরিবহন চালক, রিকশা, ভ্যান এবং অটোচালকরাও পড়েছে সঙ্কটাপন্ন পরিস্থিতিতে। শহরের নিম্নআয়ের  খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষেরা বলছেন, জমানো টাকা যা ছিল শেষ। দোকান থেকে বাকীতে এবং ধার করে চলছে সংসার । আবারও নাকি নতুন করে সাত দিনের সর্বাত্মক লকডাউন আসছে। আর এখনতো চলছেই।

 

আগামী দিনগুলো কীভাবে পার করবেন, তা ভেবে কুলকিনারা পাচ্ছেন না। এখনো পর্যন্ত কেউ নাকি সাহায্যেরও হাত বাড়ায়নি। নারায়ণগঞ্জ জেলায় বিভিন্ন অঞ্চলে বসবাস করা দিনমজুর, রিকশাচালক, অটোচালকসহ খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলে এমনটাই জানা গেছে। তারা বলছেন, নিম্ন আয়ের মানুষ করোনাকে ভয় পায় না, ভয় পায় লকডাউনকে। চলতি লকডাউনের কারণে বেশ কিছুদিন ধরে মানবেতর দিন পার করছেন তারা। এরমধ্যে নতুন করে আবারও আসছে সর্বাত্মক লকডাউন। তা আবার বাড়াতেও পারে সরকার।

 

লকডাউন বাড়ানোর ঘোষণায় তাদের কাছে ‘মরার ওপর খাড়ার ঘা’ হয়ে দাঁড়িয়েছে। দিনমজুর আব্দুর রাজ্জাক বলেন, প্রতিদিন ভোর সকাল থেকেই কাজের জন্য শহরের দুই নং গেইট এলাকায় এসে বসে থাকি। ক’দিন ধরে সকালে আসলেও, লকডাউনে কাজ না থাকায় ফিরে  যেতে হচ্ছে। দুঃখভারা মুখ নিয়ে তিনি বলেন, ‘কারো কাছে হাত পাততে পারি না। লকডাউনে গত এক সপ্তাহ ধরে অনেক কষ্ট করে চলেছি। কাজ নেই। দিন আনি, দিন খায়। ধার আর জমানো টাকা দিয়ে কোনো মতে এই কয়টা দিন পার করলাম। ফিরতি লকডাউনে কীভাবে যে খেয়ে পড়ে থাকব, তাই এখন বড় সমস্যা। আর আমাদেরকে কেউ তো আর সাহায্য করে না। গত বছর অনেকই লকডাউনে খাদ্য সামগ্রী নিয়ে সাহায্য সহযোগিতা করছিলো। কিন্তু এবার তো কারও দেখা নেই।


 
রিকশা চালক শহিদুল্লাহ বলেন, লকডাউনে অনেক চিন্তার মধ্যে দিন পার করেছি। কীভাবে চলব পরিবার-পরিজন নিয়ে। আমরা রিকশাচালকরা দিন আনি দিন খাই। আমাদের জমানো টাকা থাকে না। এজন্য সমস্যায় পড়তে হয়। আবারও বৃহস্পতিববার থেকে নাকি সর্বাত্মক লকডাউন আসছে, ঘর থেকে নাকি একধম বের হওয়া যাবেনা। এখন কী খাব, কী করব কিছুই মাথায় আসছে না। অটোচালক রুবেল বলেন, লকডাউনে প্রথম দুই দিন অটো চালিয়েছিলাম। কিন্তু পুলিশ আটকে দেড় হাজার টাকা জরিমানা করছে। যাকে বলে মরার ওপর খাড়ার ঘা। এমনিতেই ভাড়া নেই, তার ওপর আবার জরিমানা গুণতে হলো। জমানো যা ছিল, তাও শেষ। এখন পরিবার নিয়ে কী খাব, সেটাই চিন্তা করছি।

 

এদিকে প্রতিদিনের আয় না থাকায় মহাদুর্বিপাকে সবচেয়ে বিপন্ন অবস্থায় পড়েছে  দৈনিক খেটে খাওয়া হতদরিদ্র মানুষ গুলো। এমন দুরবস্থায় সরকারি অর্থ ও খাদ্যপণ্য সহায়তা নেই। একজন নিম্ন আয়ের দিন আনা, দিন খাওয়া মানুষের পক্ষে বসে থেকে এক সপ্তাহ পার করা খুব দুর্বিষহ ব্যাপার। যেহেতু এক সপ্তাহ পার হয়েছে, আবার এক সপ্তাহ লকডাউন বাড়ানো হবে। এই পরিস্থিতিতে নিম্ন আয়ের মানুষের ঘরে ঘরে খাদ্যসংকট দেখা দিয়েছে। তাঁদের দাবি, এই করোনার দুঃসময়ে নিম্ম আয়ের মানুষ গুলোকে সরকারিভাবে সহযোগিতা করার আহবান।