মঙ্গলবার   ২৬ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ১২ ১৪৩১   ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বাড়ছে পানি, মিলছে না প্রতিকার

যুগের চিন্তা অনলাইন

যুগের চিন্তা

প্রকাশিত : ০৭:৪৭ পিএম, ৩ জুলাই ২০২১ শনিবার

# ছয় দিনেও ড্রেজার মেশিন পাচ্ছেনা হেভীওয়েট দুই নেতা 


# জলাবদ্ধতার নতুন রেকর্ড লালপুরে

 

ফতুল্লায় জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য গত ১৭ই জুন জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ১১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়েছিলো। এর কিছু দিন পর গত ২৭ জুন নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাংসদ শামীম ওসমানের বরাত দিয়ে মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শাহ-নিজাম ও জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মীর সোহেল আলী জানিয়েছিলেন, লালপুরসহ ফতুল্লার জলাবদ্ধতা দুরকরণে তাদের নির্দেশ দিয়েছেন শামীম ওসমানও।

 

তারা জানিয়েছিলেন, লালপুরের জলাবদ্ধতা দূরকরণের ব্যয় শামীম ওসমান তার ব্যক্তিগত তহবিল থেকেই বহন করবেন। এর বাস্তবায়নে মাঠে তদারকি করবেন শাহ-নিজাম ও মীর সোহেল। একদিকে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগ, অন্যদিকে শাহ-নিজাম ও মীর সোহেলের মাধ্যমে শামীম ওসমানের আশ্বাস, দুটো মিলিয়ে খানিকটা আশার আলো দেখছিলেন লালপুর ও ফতুল্লার নিম্নাঞ্চলের লাখো মানুষ। তবে, সময়ের ব্যবধানে সেই আশাও এখন মিইয়ে গেছে। জানা গেছে, লালপুর ও ইসদাইর এলাকার জলাবদ্ধতা প্রাথমিক ভাবে দূরকরণের জন্য ড্রেজার সংযোগের উদ্যোগ নিয়েছিলো শাহ-নিজাম ও মীর সোহেল। কিন্তু গত মাসের ২৭ তারিখে ড্রেজার ব্যবহারের ওই সিদ্ধান্ত গ্রহণের পর ৬ দিন অতিবাহিত হলেও এখনো ড্রেজার বসানো হয়নি।

 

তা নিয়ে ক্ষোভ ও হতাশা প্রকাশ করছেন স্থানীয়রা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক লালপুর এলাকার একাধিক বাসিন্দা ক্ষোভ ও হতাশা প্রকাশ করে বলছেন, ‘জেলা প্রশাসন দখল হয়ে যাওয়া খালগুলো দখলমুক্ত করার উদ্যোগ নিয়েছেন। কালিয়ানিসহ বিভিন্ন স্থানে সেই কাজ চলছে। কিন্তু লালপুরের ড্রেনেজ ব্যবস্থা ভালো না হওয়ায় ড্রেনের সাথে এখন খালের সংযোগ নেই। এই অবস্থায় ড্রেনের কাজ ধরতে হলেও আগে জমে থাকা পানি সরাতে হবে। সেই জন্য স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা সাংসদ শামীম ওসমানের সহযোগিতায় লালপুরে ড্রেজার লাগিয়ে পানি নিস্কাশনের উদ্যোগ নিয়েছিলো। কিন্তু এখনো এর বাস্তবায়ন নেই।

 

উল্টো আজ (গতকাল) বৃষ্টিতে বৃষ্টিতে লালপুরে জলাবদ্ধতার সব রেকর্ড ছাপিয়ে গেছে। রাস্তায় কোমড়ের উপরে উঠেছে পানিরস্তর। বাসাবাড়িগুলো সব তলিয়ে গেছে। জেলা প্রশাসন ও আওয়ামী লীগ নেতারা যৌথভাবে উদ্যোগ নিয়েও সমাধান করতে পারছে না। আর ড্রেজারের বিষয়ে বলা হচ্ছে যে, তারা নাকি ড্রেজারের মেশিন ব্যবস্থা করতে পারছে না! শামীম ওসমানের অনুসারী হেভীওয়েট আওয়ামী লীগ নেতারা মিলে এতো দিনেও একটি ড্রেজার মেশিন ব্যবস্থা করতে পারছে না- এটা খুবই হতাশাজনক কথা। আসলে তারা কতটুকু আগ্রহী সেটা নিয়েই অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন।’ এইবিষয়ে গতকাল রাতে শাহ-নিজামের মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। তাই তার পক্ষ থেকে কোন প্রতিক্রিয়া জানা যায়নি।

 

এদিকে, স্থানীয়রা জানান, ‘গত ফুটবল বিশ্বকাপে ফতুল্লার লালপুরে ঐতিহ্যবাহি ব্রাজিল বাড়িতে এসেছিলো ব্রাজিলের রাষ্ট্রদূত, দূতাবাসের কর্মকর্তা ও ব্রাজিলের সংবাদ কর্মীরা। তারা আসার প্রক্কালেও ব্রাজিল বাড়ির সড়ক পথ তথা গোটা লালপুর এলাকা ছিলো ভয়াবহ জলাবদ্ধতায় নিমজ্জিত। এই অবস্থায় ব্রাজিলের প্রতিনিধি দল লালপুরে আসলে জলাবদ্ধতা নিয়ে পড়তে হবে লজ্জায় ও বিড়ম্বনায়, তাই ব্রাজিল বাড়ির মালিক জয়নাল আবেদীন টুটুল ও ‘ব্রাজিল ফ্যান্স গ্রæপের’ সদস্যদের সমন্বয়ে লালপুরের জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য উদ্যোগ নেয়া হয় এবং তারা ব্যক্তিগত অর্থায়নে স্বল্প সময়ের মধ্যে ড্রেজার পাইপ ও মেশিন ব্যবস্থা করে লালপুরের জলাবদ্ধতা নিশ্চিহ্ন করতে সক্ষম হয়। কিন্তু বর্তমানে এতো প্রভাবশালী নেতারাও একটি ড্রেজার মেশিন ব্যবস্থা করতে পারছে না শুনে স্থানীয়দের মাঝে নানামুখি আলোচনা হচ্ছে।’

 

জানা গেছে, জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য বিকেএমইএ ও চেম্বার অব কমার্স সহ অন্যান্য বিভাগের ব্যক্তিদের সমন্বয়ে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে গঠিত ১১ সদস্যের ওই কমিটির সাথে গত ২৭ জুন মিটিং করেছিলো জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ। মিটিংয়ে স্থায়ী সমাধানের লক্ষ্যে সিদ্ধান্ত হয়- দখল হয়ে যাওয়া খালগুলো সনাক্ত করণের। পরবর্তীতে তালিকা ধরে খালে উচ্ছেদ অভিযান চালানো হবে বলেও ইঙ্গিত দেন জেলা প্রশাসক। যদিও দখলে যাওয়া খালের তালিকা ও দখলদারদের তালিকা প্রস্তুত করতে ১৫ দিনের সময় বেধে দেয়া হয়েছে। অতঃপর তালিকা ধরে করা হবে অভিযান। শেষ পর্যন্ত তা হয়ে উঠে কিনা- তা নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন স্থানীয়রা।