অকেজো নৌযানে সরু নৌপথ
যুগের চিন্তা অনলাইন
যুগের চিন্তা
প্রকাশিত : ০৯:১৪ পিএম, ৩ জুলাই ২০২১ শনিবার
নদীর তীরে সারিবদ্ধভাবে পড়ে আছে সরকারি নয়টি অকেজো জাহাজ। পানিতে ডুবে আছে আরও কয়েকটি। একই পাশে পড়ে আছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) ১২টি ড্রেজার । বছরের পর বছর পড়ে থাকায় জাহাজগুলোয় মরিচা ধরে গেছে। নষ্ট হয়ে যাচ্ছে যন্ত্রাংশ। চুরি হয়ে যাচ্ছে মালামাল। নদী দখল করে জাহাজ পড়ে থাকায় সংকীর্ণ হয়ে পড়েছে দেশের গুরুত্বপূর্ণ নৌ চ্যানেল শীতলক্ষ্যা নদী।
নদী রক্ষা কমিটির সভায় জাহাজগুলো সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত হলেও দেড় বছরেও সেগুলো সরিয়ে নেয়নি বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন সংস্থা (বিআইডব্লিউটসি) ও পাউবো। গত বৃহস্পতিবার দুপুরে সরেজমিনে দেখা গেছে, শহরের হাজীগঞ্জ বিআইডব্লিউটিসি বাংলো ঘাট এলাকায় শীতলক্ষ্যার পশ্চিম পাড়ে জ্বালানি তেল বহনকারী অকেজো পাঁচটি ট্যাংকার পাশাপাশি নদীর এক-তৃতীয়াংশ জায়গাজুড়ে নোঙর করে রাখা হয়েছে। ট্যাংকারগুলোর ইঞ্জিন ও বডি নষ্ট হয়ে যাওয়ায় সেগুলো বাংলোঘাটে তীরে এনে রাখা হয়েছে।
এ ছাড়া টাগবোটসহ আরও চারটি জাহাজ পড়ে আছে বিআইডব্লিউটিসির। ডুবে রয়েছে আরও বেশ কয়েকটি জাহাজ দুই মাসের মধ্যে জাহাজগুলো সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত হলেও গত দেড় বছরেও সেগুলো সরিয়ে নেয়নি পাউবো ও বিআইডব্লিউটিসি। বিআইডবিøউটিসির অকেজো টি-১০৫৭ ট্যাংকারের নিরাপত্তার দায়িত্বে রয়েছেন লস্কর আবুল খায়ের ও বাবুর্চি ইসমাঈল হোসেন। লস্কর আবুল খায়ের জানান, ট্যাংকারের ইঞ্জিন ও বডি নষ্ট হওয়ায় এখানে এনে রাখা হয়েছে। নষ্ট হলেও জাহাজের নিরাপত্তার দায়িত্ব তাঁদেরই। তিনি বলেন, অনেক সময় মাদকসেবীরা জাহাজের মালামাল ভেঙে ও কেটে নিয়ে যায়। হাজীগঞ্জ এলাকার বাসিন্দা গার্মেন্টসকর্মী শিহাব উদ্দিন বলেন, ১০ থেকে ১৫ বছরের বেশি সময় ধরে নদীর তীরে জাহাজ পড়ে আছে। পানিতে যন্ত্রাংশ নষ্ট ও অনেক মালামাল চুরি হয়ে যাচ্ছে। কোনোটি ২০ থেকে ৩০ বছর যাবৎ পড়ে আছে। ফুল চাঁন জানান, এর আগে ডুবন্ত জাহাজের ধাক্কায় কোরবানির গরুবাহী ট্রলার ডুবিতে ৪০টি গরুরু মৃত্যু হয়েছে।
নৌ চলাচল অধ্যাদেশ ১৯৭৬ অনুযায়ী ৫৭(ক) ধারায় বলা আছে, কোনো ব্যক্তি মাছ ধরার জাল পেতে বা অন্য কোনো উপায়ে নাব্য নৌপথে কোনো অভ্যন্তরীণ নৌযানের চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি করতে পারবে না। এই ধারা ভঙ্গকারী ব্যক্তিকে এক বছর পর্যন্ত কারাদন্ড বা ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা অর্থদন্ড বা উভয় দন্ডে দন্ডিত করার বিধান আছে। এক্ষেত্রে আদালত নৌ চলাচলে বাধার সৃষ্টিকারী বস্তুদি বাজেয়াপ্ত করতে সরকারকে নির্দেশ দিতে পারেন।
২০২০ সালের ২৩ জানুয়ারি নিরাপদ নৌপথ সংক্রান্ত জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে সভা হয়। ওই সভায় দুই মাসের মধ্যে ডুবে থাকা জাহাজসহ পরিত্যক্ত জাহাজগুলো সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। সভায় সিদ্ধান্ত হলেও গত দেড় বছরেও সেগুলো সরিয়ে নেয়নি দুটি সংস্থাই।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌযান চলাচল ও যাত্রী পরিবহন সংস্থার জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি বদিউজ্জামান বাদল বলেন, তদারকি না থাকায় বছরের পর বছর জাহাজগুলো নদীতে ডুবে ও তীরে ফেলে রাখা হয়েছে। সেগুলো নিলামে তোলার আহবান জানান তিনি। বিআইডব্লিউটিএর ভারপ্রাপ্ত উপপরিচালক (নৌ চলাচল ও নিরাপত্তা) বাবু লাল বৈদ্য বলেন, ডুবন্ত জাহাজগুলো সরিয়ে নেওয়ার জন্য পাউবো ও বিআইডব্লিউটিসিকে কয়েক দফা চিঠি দেওয়া হলেও তারা কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। অকেজো জাহাজগুলোর কারণে নদীর চ্যানেল সরু হয়ে যাচ্ছে। বিআইডব্লিউটিএ নারায়ণগঞ্জ নদীবন্দরের যুগ্ম পরিচালক শেখ মাসুদ কামাল বলেন, জাহাজগুলো সরিয়ে নেওয়ার বিষয়ে প্রতিষ্ঠান দুটির উদাসীনতা বিস্ময়কর।
আগামী ঈদুল আজহার আগে সেগুলো সরিয়ে নিতে হবে। না হলে নৌ নিরাপত্তা অধ্যাদেশ ৫৭ (ক) ধারা অনুযায়ী জেলা প্রশাসনকে সঙ্গে নিয়ে অকেজো জাহাজগুলো অপসারণে উদ্যোগ নেওয়া হবে। জাহাজগুলো কেন সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে না জানতে চাইলে বিআইডবিøউটিসি নারায়ণগঞ্জ কার্যালয়ের সহকারী ব্যবস্থাপক মো. সেলিম জানান, জাহাজগুলোর লোহা ড্যাম হয়ে যাওয়ায় সার্ভেয়ার রিপোর্টে গ্রহণ করছে না। ইতিমধ্যে দুটি ট্যাংকার বিক্রির দরপত্র হয়ে গেছে। অন্যগুলো পর্যায়ক্রমে দেওয়া হবে। নদীর নাব্যতা ও নৌযান চলাচল ঝুঁকির বিষয়টি স্বীকার করে তিনি বলেন, সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা চলছে, করোনার কারণে বিলম্ব হচ্ছে। পাউবোর প্রধান প্রকোশলী আজিজুল হক জানান, পরিত্যক্ত সাতটি ড্রেজার বিক্রির জন্য তৃতীয়বারের মতো দরপত্র আহবান করা হয়েছে। কিন্তু ক্রেতা পাওয়া যাচ্ছে না। তৃতীয়বারে ক্রেতা পাওয়া না গেল ভিন্ন চিন্তা করা হবে। অপর পাঁচটি ড্রেজার মেরামত করে ব্যবহারের উপযোগী হবে বলে তিনি জানান।
জেলা নদী রক্ষা কমিটির আহবায়ক ও জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ বলেন, নদীর নাব্যতা রক্ষা ও সংকীর্ণতা রোধে বিআইডবিøউটিসি ও পাউবোকে আবার চিঠি দেওয়া হবে। কোনোভাবেই নদীপথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা যাবে না। তথ্যসূত্র : প্রথম আলো।