গরজ বেড়েছে, আসছে সমাধান
যুগের চিন্তা অনলাইন
যুগের চিন্তা
প্রকাশিত : ০৭:৫৪ পিএম, ৫ জুলাই ২০২১ সোমবার
# দুটো খাল উদ্ধার করে ডিএনডি’র খালে সংযুক্ত করার প্রস্তাবনা
# মন্ত্রী আসার আগে ড্রেজারে পানি সরানো হবে
# সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো নিয়ে চলতি সপ্তাহেই বিশেষ সভা
অবশেষে ফতুল্লাবাসীর জলাবদ্ধতা নিরসনে যৌথভাবে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। বছরের পর বছর জলাবদ্ধতায় ফতুল্লাবাসীর প্রাণ যখন ওষ্ঠাগত তখন এই ইতিবাবক পদক্ষেপ নতুন আশার সঞ্চার করেছে তাদের মনে। তারা বলছেন, সমস্যা সমাধানে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের এমপি শামীম ওসমান, ডিসি, ডিএনডি প্রজেক্ট ডিরেক্টর, পানি উন্নয়ন বোর্ড, এলজিইডি, ডিপিডিসি, রেলওয়ে, সওজ, নারায়ণগঞ্জ ও ঢাকা, জনস্বাস্থ্য সমন্বিতভাবে রোববার যেসভা হয়েছে তাতে তারা আশান্বিত।
দীর্ঘ কয়েকবছর ক্রমাগত এই সমস্যার স্থায়ী সমাধান চেয়ে আসছিলেন ফতুল্লাবাসী। ডিএনডি প্রজেক্টে সুফল মিলবে এই আশায় গত দুইবছর মুখ না খুললেও এবার পরিস্থিতি ভয়াবহ। সমাধানের জোর প্রচেষ্টা চলছে সেটি বোঝা গেছে, জেলা প্রশাসকের আয়োজিত সভায় পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক এমপি’র ফোনালাপ। সেই সভায় এবার স্থায়ী সমাধানের ব্যাপারে আশ্বস্ত করেছেন তিনি। এমনকি আগামী রোববার তিনি বিস্তীর্ণ ফতুল্লাবাসীর দুর্ভোগের সমাধান দিতে পরিদর্শনে আসছেন।
সূত্র জানিয়েছেন, রোববার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে ফতুল্লা ও সিদ্ধিরগঞ্জের জলাবদ্ধতা নিরসনে আয়োজিত সভাটি ছিল মাইলফলক। এতে বেশ কিছু সমস্যা প্রকাশ্যে উঠে এসেছে। এমপি শামীম ওসমান সভায় জানিয়েছেন, ডিএনডি প্রজেক্টে আর অর্থ বাড়ানো সম্ভবপর নয়। যেহুতু ফতুল্লার অংশটি ডিএনডি প্রজেক্টের বাইরে পড়েছে সেহুতু তিনি একাজে সহযোগিতার জন্য ডিএনডি প্রজেক্ট ডিরেক্টরকে অনুরোধ জানান। শামীম ওসমান বলেন, গত বছর এতো বৃষ্টির পরেও এতো বাজে অবস্থা হলোনা কিন্তু এবার হলো।
শামীম ওসমান বলেন, এবার জলাবদ্ধতা বেড়েছে কারণ সিটি করপোরেশনের পানি মাসদাইর গোরস্থানের পাশ দিয়ে ফতুল্লায় ঢুকছে। কিন্তু এরপর পানি কোথায় বেরুবে সেই পথ নেই। ড্রেনেজ সিস্টেমও অকোজো। আড়াইবছর আগে ডাম্পিংয়ের জন্য জালুকড়ির মানুষের বিরোধিকার পর জায়গা নির্ধারণ করা হলেও সেটিতে সুফল এখনো মেলেনি, কাজেও অগ্রগতি নেই। শামীম ওসমান বলেন, এসমস্যা সমাধানে একটি রোডম্যাপ তৈরি করতে হবে। ঘরে বসে নকশা করলে হবেনা, সরেজমিনে গিয়ে সমাধান করতে হবে। এখানে সমন্বয় দরকার। যদি আমাকে বলা হয় সাতদিন পানিতে থাকলে পানি সমস্যার সমাধান হবে, রাস্তায় পাহারা দিলে সমাধান হবে তবে আমি রাজী আছি। জনগণের কাছ থেকে ভালবাসা পেয়েছি সেটি রিটার্ন দেয়া দায়িত্ব।
ডিএনডি প্রজেক্ট ডিরেক্টর একটি পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশের মাধ্যমে একটি সমাধানের রাস্তা প্রস্তাবনা দেন। তিনি বলেন, গতবারের তুলনায় এবার আমরা পানির পাম্প বেশি চালাচ্ছি, তবে সমাধান হচ্ছেনা। এখানে পানি না কমার ব্যাপারে যেসব সমস্যা উঠে এসেছে সেগুলো হলো, রেলওয়ের এবং সওজের কারণে যেসব সমস্যা তৈরি হয়েছে সেটি গতবার ছিলনা। বাধ থাকার কারণে পানি অন্যত্র যাচ্ছে। আমাদের আওতাভুক্ত না হওয়ার পরেও আমরা এটির সমাধানে সহযোগিতা করতে চাই। এখানে সবচাইতে বেশি প্রয়োজন সমন্বয়। মূল সমস্যা হচ্ছে, পানি প্রজেক্টের ক্যানেলে না আসলে যতই পাম্প ব্যবহার করা হোক না কেন সমাধান হবেনা। ডিএনডি প্রজেক্টের অংশে ৩৬টি ক্যানেলই সচল আছে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে এর বাইরে যেসব ক্যানেল রয়েছে সেপানিগুলো ডিএনডি প্রজেক্টের ক্যানেলে আসতে পারছেনা। ফলে পাম্পচালু করলেও লাভ হচ্ছেনা। জনগণকে পানিমুক্ত করার চেষ্টাটাই আমরা করছি।
তিনি বলেন, আমরা নারায়ণগঞ্জকে জলাবদ্ধমুক্ত করতে যেসব ক্যানেল ক্লিয়ার করতে হবে সেগুলো চিহ্নিত করারা চেষ্টা করছি। শুধু ডিএনডি প্রজেক্ট দিয়ে সমস্যা সমাধান হবেনা। ডিএনডির ক্যানেলগুলো পরিষ্কার করা হচ্ছে, কিন্তু মানুষ অসচেতনভাবে ময়লা দিয়ে সেটি ভরাট করে ফেলছে। ডিএনডি প্রজেক্ট ডিরেক্টর বলে, জলাবদ্ধমুক্ত করতে অন্যক্যানেলগুলো ডিএনডি প্রজেক্টে লিংক আপ করতে হবে। তিনি বলেন, প্রজেক্টের বাইরে হলেও লালপুর এলাকা নিয়ে ওয়ার্কআউট করা হয়েছে। লালপুর, ইসদাইর এলাকাটি সস্তাপুর এলাকার আশেপাশে।এখানে দুটো খাল রয়েছে। এনআরটু-আইএ, এনআরটুআইবি। এগুলো ম্যাপে রয়েছে গ্রাউন্ড নেই। সিএস ম্যাপে এটি দেখাচ্ছে। নিচুঁ জায়গা হওয়ায় এই খাল উদ্ধার করতে হবে। এখানে দুটো অপশন রয়েছে।
প্রথমত ফতুল্লার সাথে কানেক্ট করতে পারি। কিন্তু সমস্যা ডিএনডির ফতুল্লা পয়েন্টটি উচুঁ। লালপুর, ইসদাইর নিচু এলাকা। পানি যাবেনা। কিন্তু যদি ভরাট হয়ে যাওয়া দুটি খাল এনআরটু-আইএ এবং এনআরটুআইবি দিয়ে পানি ফতুল্লায় যায় তবে জলাবদ্ধতা নিরসন সম্ভব। কিন্তু সেটি সম্ভব হচ্ছেনা, এনআরটু-আইএ এখন বর্তমানে একটি ড্রেন, আর এনআরটু-আইবি’র কোন অস্তিত্বই বর্তমানে নেই। তিনি প্রস্তাবনা রাখেন, যতদ্রæত সম্ভব এনআরটু-আইএ, এনআরটুআইবি খালদুটো যতদ্রæত বুঝিয়ে দেয়া হোক, তবে উচ্ছেদ চালিয়ে ডিএনডি প্রজেক্টের খালে সংযুক্ত করে দেয়া। এছাড়া সেগুলোতে মাছের খামার করে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা বলেন, লালপুর, ইসদাইর, কুতুবপুর এলাকার পানি ডিএনডি প্রজেক্ট পর্যন্ত আসছেনা। ১ দশমিক ২৫ বর্গকিলোমিটার বিস্তীর্ন এলাকা পানিবন্দী। তিনি দাবি করেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাছে ডিপিডিসির বকেয়া পরিশোধিত হয়েছে।
সভায় ডিএনডি প্রজেক্ট ডিরেক্টরের প্রস্তাবনা অনুযায়ী জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ বলেন, আমরা এনওসি দিতে পারি। এটা খাস ক্যানেল এটা আমরা করে দিতে পারবো। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে আরো দেখে নিতে হবে। আমরা কোঅর্ডিনেশন করছি আশা করছি সেটি সমাধান হবে। তবে আমার কাছে মনে হয়েছে ডিএনডির বাইরের ক্যানেলগুলোকে ডিএনডি প্রজেক্টে অন্তর্ভুক্ত করা। এখানে এলজিইডিসহ অন্যান্য দপ্তরের সমন্বিত সভা করা প্রয়োজন। বিশেষ সভা এসপ্তাহেই আয়োজন করা হবে। রেলওয়ে, ওয়াসা,ডিএনডি, সওজ,এলজিইডি, জনস্বাস্থ্য, সদর উপজেলা পরিষদ, পানি উন্নয়ন বোর্ড, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন, আদমজী ইপিজেড, ইউপি চেয়ারম্যান এবং সাংবাদিকদের নিয়ে এই বিশেষ সভা অনুষ্ঠিত হবে।
এছাড়া সভায় জলাবদ্ধতা সমাধানে যাতে লিংকরোড এবং ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ পুরাতন সড়ক এবং রেলওয়ের ডুয়েলগেজ ডাবললাইনও সমন্বয় করে পয়েন্টিং করে কাজ করা হয়। এছাড়া পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী আসার আগে লালপুর, ইসদাইর, কুতুবপুর এলাকার পানি ড্রেজারের মাধ্যমে কমানো হবে। এছাড়া কালিয়ানী খালের অংশে এনায়েননগরে জলাবদ্ধতা নিরসনেও ডিএনডি প্রজেক্ট থেকে সহযোগিতার আশ্বাস দেয়া হয়।