মঙ্গলবার   ২৬ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ১১ ১৪৩১   ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিশুদের দিয়ে চলছিলো কারখানাটি

যুগের চিন্তা অনলাইন

যুগের চিন্তা

প্রকাশিত : ০৮:৪৫ পিএম, ১০ জুলাই ২০২১ শনিবার

দেশে ঝুঁকিপূর্ণ কাজে শিশুশ্রম নিষিদ্ধ হলেও শিশুদের দিয়েই চলছিল হাশেম ফুড লিমিটেড কারখানাটি। বৃহস্পতিবার বিকেলে লাগা আগুনে গতকাল রাত অব্দি ৫২ জন প্রাণ হারিয়েছেন। তাদের অধিকাংশই শিশু বলে জানিয়েছেন বেঁচে ফেরা শ্রমিকরা। জুস, নুডলসসহ বিভিন্ন প্যাকটজাত খাদ্য উৎপাদনের এই কারখানাটি ছয়তলা। বিভিন্ন ফ্লোরে বিভিন্ন ধরনের খাদ্যপণ্য তৈরি হয়।

 

কারখানাটির শ্রমিক রাজিব বলেন, ‘এখানকার বেশির ভাগ ওয়ার্কার শিশু। তাদের মধ্যে যারা মেয়ে, তাদের বয়স ১২ বছর থেকে শুরু আর ছেলেশিশুদের বয়স ১৪ থেকে।’ যে ভবনে আগুন লেগেছে, সেটির পাশে একই কোম্পানির আরেকটি ভবনের দায়িত্বশীল একজন জানান, মূলত কম বেতনের কারণে এটিতে শিশুদের কাজে নিয়োগ দেয়া হতো। ২০০৬ সালের বাংলাদেশ শ্রম আইনে ১৪ বছরের নিচে কোনো শিশুকে কাজে নেয়া নিষিদ্ধ। ১৪ থেকে ১৮ বছর পর্যন্ত কাজে নেয়া গেলেও ঝুকিপূর্ণ কাজে নেয়া যাবে না।

 

জাতীয় শিশুনীতি ২০১১ অনুসারে, ৫-১৮ বছরের শিশু কোনো ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করতে পারবে না। ৫-১৪ বছর পর্যন্ত শিশুশ্রম নিয়োগকর্তার জন্য দন্ডনীয় অপরাধ। রূপগঞ্জের ওই কারখানার শ্রমিকরা জানান, বেশির ভাগ শিশু ভোলা ও কিশোরগঞ্জ থেকে আনা। সাড়ে ৬ হাজার টাকা বেতনে তাদের চাকরি শুরু হতো। ছয় মাস পরে যাদের নিয়োগ স্থায়ী করা হতো, তাদের দেয়া হতো ১০ হাজার ৫০০ টাকা। শুরুর দিকে হাতের কাজ করলেও চাকরি স্থায়ী হওয়ার পর বিভিন্ন পণ্য তৈরির মেশিনের সহকারী হিসেবে কাজ করত শিশুরা।

 

ভোলা ও কিশোরগঞ্জ থেকে যেসব শিশুকে নিয়ে আসা হতো, তাদের একটি বড় অংশ কারখানার পাশে কোয়ার্টারে রাখা হতো। সেখানে থাকা ও খাওয়া বাবদ ১ হাজার টাকা প্রতি মাসে প্রত্যেক শিশুর কাছ থেকে নেয়া হতো। কারখানাটির ইলেক্ট্রিক বিভাগের একজন কর্মী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘আমি নিচে ছিলাম। আগুন লাগার পর কোথায় লাগছে, তা দেখতে ওপরে যাই। তখন অনেকগুলো ছেলে ও মেয়েশিশুকে সিঁড়ি দিয়ে ওপরে উঠতে দেখি। আমি দোতলা পর্যন্ত উঠে আবার নিচ দিয়ে নেমে আসি। তখনও দেখছি, বাচ্চাগুলো ছুটতাছে। তারা শুধু ওপরে উঠতেছিল। শেষে চারতলায় গিয়ে আটকা পড়ছে, আর ওপরে উঠতে পারে নাই।’ অধিকাংশ মরদেহ ভবনের একই জায়গায় পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা।

 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ফায়ার সার্ভিসের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘আগুনের ক্ষেত্রে প্রাপ্তবয়স্করাই কী করবেন বুঝতে পারেন না। শিশুরা আরও বেশি আতঙ্কিত ছিল। এ কারণে মৃত্যুর সংখ্যা বেশি হয়েছে।’ ঘটনাস্থল পরিদর্শনে এসে শ্রম ও কর্মসংস্থানবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান বলেন, যদি কারখানাটি শিশু শ্রমিকদের দিয়ে কাজ করানোর বিষয়টি তদন্ত প্রতিবেদনে পাওয়া যায়, তবে মালিকের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।