যানবাহন কম থাকলেও নানা বাহানায় ছুটছে মানুষ
লতিফ রানা
যুগের চিন্তা
প্রকাশিত : ০৭:৪৪ পিএম, ২৬ জুলাই ২০২১ সোমবার
করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সর্বশেষ ঘোষিত ১৪ দিনের লকডাউনে পরিবহন অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে থাকলেও নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হচ্ছে না মানুষের চলাচলকে। কঠিন এই মহামারির ভয়াবহতা বেড়ে চললেও মানুষের মনে যেন তার কোন প্রভাব বিস্তার লাভ করতে পারেনি। বিভিন্ন বাহানায় এবং মিথ্যে অজুহাতে মানুষজন রাস্তায় বের হচ্ছেন অহরহ। তবে বেড়েছে মাস্ক এর ব্যবহার। প্রশাসনের কড়া তদারকির ও বাধ্যবাধকতার কারণেই হয়তো মাস্ক ব্যবহার অনেকটাই বেড়েছে।
গতকাল জেলার বিভিন্ন গুরুত্বপুর্ণ এলাকা ঘুরে এমন চিত্রই লক্ষ্য করা যায়। শহরের চাষাঢ়া, সাইনবোর্ড, চিটাগাংরোড, কাঁচপুর ও মদনপুর এলাকা ঘুরে দেখা যায় এসব এলাকায় যানবাহন চলাচল স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক কম। এসব এলাকায় গণপরিবহন ছিল বন্ধ। এছাড়াও প্রশাসনের কড়া নজরদারির কারণে স্বাভাবিক যানবাহনসহ ব্যক্তিগত গাড়ি চলাচল ছিল অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে। প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তাসহ আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর লোকজনকে এ সময় বিভিন্ন যানবাহনকে তল্লাশি করতে দেখা যায়।
তবে যানবাহন ছাড়া সাধারণ মানুষের চলাফেরা ছিল প্রত্যাশার চেয়েও অনেক বেশী। সাইনবোর্ড, চিটাগাংরোড, কাঁচপুর এবং মদনপুর এলাকায় দেখা যায় লোকজন পরিবার পরিজন নিয়ে পায়ে হেঁটেই এদিক সেদিক ছুটছে। অনেকে আবার পরিবহন সংকটের অভিযোগও করেন। লকডাউনে পরিবহন বন্ধ থাকবে এবং মানুষজনকে অতি প্রয়োজন ছাড়া বের হওয়া নিষেধের বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে তারা এড়িয়ে যান। অনেকে আবার বিভিন্ন অজুহাত দেখাতেও চান। মদনপুর এলাকায় দুই শিশুকে নিয়ে একটি পরিবারকে রাস্তা পার হওয়ার সময় নাম জানাতে অস্বীকৃতি জানিয়ে বলেন, তাদের বাড়ি বন্দর উপজেলার কুশিয়ারা এলাকায়। ঈদের পরেরদিন সে তার স্ত্রী ও দুই শিশুকে নিয়ে সোনারগাঁ উপজেলার নয়াপুর সাদিপুর তার শ্বশুর বাড়িতে গিয়েছিলেন। যানবাহন না থাকায় অনেক কষ্টে এবং অরিক্তি ভাড়া দিয়ে আসতে হয়েছে। লকডাউনের খবর তিনি জানেন, তবে যেহেতু কোরবানির ঈদ, তাই ঈদের পর বেড়াতে যেতে হবে তাই গিয়েছিলেন।
এ সময় খেয়াঘাট এলাকাগুলোতে দেখা যায় মানুষের ব্যপক সমাগমের আরো ভয়াবহ চিত্র। দুপুর বারোটার দিকে বন্দর উপজেলার নবীগঞ্জ গুদারা ঘাটে দেখা যায় মানুষের ভিড়। সেখানে নৌকায় ওঠার জন্য লাইনে সারিবদ্ধভাবে দাড়িয়ে আছে লোকজন। উদ্দেশ্য, নদী পাড়ি দিয়ে শহরে প্রবেশ করা। তিনটির মতো নৌকা চালু রাখা হয়েছে জরুরী প্রয়োজনে পারাপারের জন্য। সেই নৌকাগুলোতে সাধারণর যাত্রিদের দশজন করে নিয়ে পারাপার করা হয় বলে জানায় মাঝিরা। কিন্তু কার্যত দেখা যায় প্রতি নৌকায়ই ডুবু ডুবু করে ১৫ থেকে ২০ জন যাত্রী নেওয়া হচ্ছে এবং তারপরও আরো যাত্রী ওঠার জন্য চেষ্টা করছে। সেখানে বিভিন্ন যাত্রিদের সাথে শহরে যাওয়ার কারণ জিজ্ঞেস করলে তাদের বেশীর ভাগই ডাক্তারের কাছে যাবেন বলে জানান। আবার অনেকে নদীর পশ্চিম পার অর্থাৎ শহর থেকে পূর্ব পার অর্থাৎ বন্দরে দলবেধে ডাক্তার দেখাতে গিয়াছিলেন বলেও জানান। অনেকের হাতেই বাজারের ব্যাগ থাকা সত্ত্বেও এবং তাতে মাছ বা সব্জি থাকা সত্ত্বেও তারা জানান, তারা ডাক্তারের কাছে যাচ্ছেন।
কেউ জানান, নদীর পশ্চিম পাড়ে তাদের আত্মীয়স্বজন আছে তাই সেখানে যাচ্ছেন। মোট কথা প্রয়োজনের বাইরে অনেক অপ্রয়োজনে এবং বিনা কারণেই তারা বাড়ি থেকে বের হচ্ছেন। এ সময় সেখানে বন্দর থানার অফিসার্স ইনচার্জ (ওসি) দ্বীপক চন্দ্র সাহা পুলিশের একটি দল নিয়ে ঘাটে আসেন এবং সেখানকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করেন। বিকেলে বেলা এই ঘাটে লোক চলাচল আরো বেড়ে গেলে ঘাট থেকে দুইটি ট্রলার চালানোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় এবং ট্রলারে ২৫ জন করে যাত্রী তোলা হয়। জনপ্রতি যেখানে স্বাভাবিক অবস্থায় ২ টাকা করে ভাড়া নেওয়া হতো সেখানে এ সময় জনপ্রতি ভাড়া নেওয়া হচ্ছে ১০টাকা। এ সময় হাজীগঞ্জ ফেরি ঘাট এলাকায় মেজিস্ট্রেটসহ পুলিশ প্রশাসন উপস্থিত থেকে জনগণকে নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করেন, তাদের লাইনে দাঁড় করিয়ে নিয়ম শৃঙ্খলে এসে ট্রলারে উঠতে এবং অতিরিক্ত লোক ওঠার চেষ্টা থেকে বিরত রাখেন।
এসব বিষয় নিয়ে বন্দর উপজেলা নির্বাহী অফিসার শুক্লা সরকারের সাথে আলাপকালে তিনি জানান, মানুষ রাস্তায় বের হওয়ার জন্য এত কারণ দেখায় যে তার কোন অভাব নেই। আমরা কয়টা কারণের কথা বলবো। যারা প্রয়োজনে বের হচ্ছে তাদের কথা আলাদা। কিন্তু যারা অপ্রয়োজনে বের হচ্ছে, বাতাস খেতে বের হচ্ছে, লকডাউন দেখতে বের হচ্ছে, সেনাবাহিনী দেখতে বের হচ্ছে, আমাদের মোবাইল কোর্ট দেখতে বের হচ্ছে, তাদের প্রতিকারের সমাধান কি হতে পারে। তাদের এই অপ্রয়োজনে বের হওয়ার কারণে কি সমস্যা হতে পারে সে বিষয়ে তাদেরকে প্রতিদিনই ম্যাসেজ দিচ্ছি। করোনা শুরু হওয়ার পর থেকেই ম্যাসেজ দিয়ে যাচ্ছি। তিনি জানান, গতকাল রোববার বন্দর উপজেলার বিভিন্ন জায়গায় এই অভিযানে মামলা হয়েছে ৫টি এবং জরিমানা হয়েছে ২৭ হাজার ৫শত টাকা।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ শামীম বেপারী জানান, আমাদের মোবাইল কোর্ট কাজ করতেছে। প্রতিদিন মোবাইল কোর্ট হচ্ছে প্রতিদিন জরিমানা হচ্ছে। তিানি জানান, গতকালও বালুর চর, কাইকারটেক, নবীগঞ্জের রসুলবাগসহ বিভিন্ন এলাকায় মামলা হয়েছে, জরিমানা হয়েছে ২৭হাজার ৫শত টাকা। এসব কার্যক্রম পুরো নারায়ণগঞ্জে চলমান থাকার পরও লোকজন বিভিন্ন বাহানা করছে। তবে আমরা প্রশাসন খুব শক্তভাবেই দেখতেছি। সবাইকে মাস্ক পরিধান করানোর চেষ্টা করছি, বিনামূল্যে মাস্ক বিতরণ করছি। এখানে সেনাবাহিনী, পুলিশ ও র্যাবসহ বিভিন্ন বিভাগ মাঠে কাজ করতেছে, বিনা কারণে মানুষকে বাইরে বের না হতে আহবান জানাচ্ছে। জেলা প্রসাশনের বিভিন্ন ম্যাজিস্ট্রেটগণ বিভিন্ন জায়গায় দায়িত্ব পালন করছেন।