নয়ামাটি-উকিলপাড়ায় ঝুঁকিতে শিশু শ্রমিকরা
যুগের চিন্তা অনলাইন
যুগের চিন্তা
প্রকাশিত : ০৭:৫২ পিএম, ৭ আগস্ট ২০২১ শনিবার
শহরে হাজারো ঝুঁকিপূর্ণ কারখানা চলছে শিশুদের দিয়ে। শিশুশ্রম নিষিদ্ধ হলেও ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে গড়ে ওঠা কারখানায় অল্প বেতনে কাজ করছে হোসিয়ারিতে। কারখানাগুলোতে নিয়োজিত রয়েছে অসংখ্য শ্রমিকও। তবে অধিকাংশ কারখানায় নেই অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা। সরু গলিতে গড়ে ওঠা কারখানার ভবনগুলোও ঝুঁকিপূর্ণ তাই যে কোন সময় দুর্ঘটনা ঘটলে হতে পারে বড় ধরনের প্রাণহানি।
ফায়ার সার্ভিস বলছে, অমানুবিক ব্যবসায়ীরা জেনে বুঝে শ্রমিক ও শিশুদের ঝুঁকিতে রাখছে। তবে ব্যবসায়ী নেতাদের দাবি তাদের কিছুই করার নেই। কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান অধিদপ্তরের তথ্য মতে, এ জেলায় নিবন্ধিত কলকারখানা রয়েছে ৩ হাজার ৪৫০টি। তবে নিবন্ধন ছাড়াই চলছে কয়েক হাজার কারখানা। এর মধ্যে শুধু নারায়ণগঞ্জ শহরের নয়ামাটি ও উকিল পাড়া এলাকায় দুই হাজারের বেশি হোসিয়ারি কারখানা রয়েছে। এসব কারখানার মধ্যে ১ হাজার ২০টি কারখানা পরিদর্শন করেছে সংস্থাটি। সেখানে অনেক কারখানায় শিশুদের দিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করানোয় শ্রম আইনে মামলা হয়েছে ২৫টি কারখানার মালিকের বিরুদ্ধে।
সরেজমিনে নয়ামাটি, উকিলপাড়াসহ নগরীর টানবাজার এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ ও ঘিঞ্জি পরিবেশে হোসিয়ারি কারখানাগুলোতে কাজ করছে অনেকে। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত এসব কারখানায় কাজ করেন তারা। অলিগলি ও সরু পথের পাশে থাকা অধিকাংশ বহুতল ভবনে নেই অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা। এ ছাড়া কারখানাগুলো কাছাকাছি হওয়ায় বিদ্যুতের সংযোগের জন্য সড়কে বৈদ্যুতিক তারের জঞ্জাল তৈরি হয়েছে। এতে শর্টসার্কিট থেকে যেকোনো সময় আগুন লাগতে পারে কারখানায়। হোসিয়ারি কারখানায় এক শিশু বলেন, মালিক যা কাম দেয়, তাই করি। সকালে কারখানায় আসি, রাতে যাই। কারখানার গলিটা অন্ধকার। তার সঙ্গে আরও কয়েকজন শিশুকে ওই কারখানায় কাজ করে।
পাশের আরেকটি কারখানার শ্রমিক মোবারক হোসেন বলেন আমি হোসিয়ারিতে থাকি, মেসে খাই। বিল্ডিংয়ের শেষ মাথায় আমাগো বিল্ডিংয়ের সিঁড়ি। ওপরে কাম করতে ডর করে। তাদের মতো ভয়পায় নয়ামাটিতে কর্মরত বিভিন্ন কারখানার শ্রমিকরাও। একাধিক শ্রমিক বলেন, কারখানাগুলো অনেক আগে থেকে এখানে। প্রায় সময় আগুন লাগে। এছাড়া অন্যান্য দূর্ঘটনাও ঘটে। তবে মালিকরা সবাইকে সাবধানে থাকতে বলেন। এর বাইরে তাদের কোন উদ্যোগ নেই। ঝুঁিকপূর্ণ ভবনগুলোতে কোন ঘটনা ঘটলে যে যার মতো করেই নীচে নামার চেষ্টা করে। তবে ভবনগুলোর বাইরে কোন সিঁড়ি নেই তাই ভেতরে সিঁড়ি দিয়েই তাদের চলাচল করতে হয় বলে জানান অনেকে।
ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে থাকা একটি কারখানার মালিক সাইদুর রহমান বলেন, গ্রাম থেকে শহরে আসার পর অভাবের কারণে শিশুরা কাজে লাগে। কারখানার শ্রমিকসহ বিভিন্ন মাধ্যমে তারা কাজে আসে। কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে তখন কী হবে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সবার যে গতি হবে ওদেরও একই গতি হবে। ফায়ার সার্ভিসের নারায়ণগঞ্জের উপসহকারী পরিচালক আবদুল্লাহ আল আরেফিন যুগের চিন্তাকে জানান, নয়ামাটি ও উকিলপাড়া এলাকায় গড়ে ওঠা কারখানাগুলোতে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা অনেক দুর্বল। আশপাশে কোনো পুকুর বা পানি সংগ্রহের জায়গা নেই। একটি গলিতে শত শত কারখানা। আবার বড় ভবনগুলোর সিঁড়িও একটা। তাই আগুন লাগলে অনেক ভয়াবহ হয়ে উঠবে। কারখানা ও ভবনগুলো ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় অনেকবার নোটিশ দেয়া হয়েছে কিন্তু অমানুবিক ব্যবসায়ীরা জেনে বুঝে শ্রমিক ও শিশুদের ঝুঁকিতে রাখছেন।
এ ব্যাপারে তৈরি পোশাক শিল্প ব্যবসায়ীদের সংগঠন হোসিয়ারী সমিতির সভাপতি নাজমুল আলম সজল যুগের চিন্তাকে বলেন, এ এলাকায় তারের জঞ্জাল, ঝূঁকিপূর্ণ ভবন সহ নানা বিষয়ে অনেক আলোচনা হয়েছে পূর্বে। তবে এসব বিষয়ে আমাদের কিছু করার নেই। কারণন বিভিন্ন এলাকার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা এসব এলাকা চিনেন এ কারনে আমাদের এখানেই শো রুম গুলো রাখতে হবে তবে সরকারি কোন সংস্থা যদি কারখানাগুলো হস্তান্তর করার জন্য শহরের ভেতর জায়গা দেয় তাহলে সেটা হবে পারে।