ফতুল্লায় ২৮ স্পটে চলে ছিনতাই !
ফরিদ আহম্মেদ বাধন
যুগের চিন্তা
প্রকাশিত : ০৬:৪৮ পিএম, ১৭ আগস্ট ২০২১ মঙ্গলবার
# ভোর সকালে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, গার্মেন্টকর্মী ছিনতাইকারীদের টার্গেটে পড়েন
# ছিনতাইয়ের কাছে ইজিবাইক ও সিএনজি ব্যবহার করে
# ছিনতাই ঠেকাতে যা যা করণীয় তা করা হবে : ওসি রকিবুজ্জামান
রহিম শেখ তার পরিবার পরিজন নিয়ে বসবাস করেন মাসদাইর পাকাপুল এলাকায়। গত কয়েক মাস আগে গ্রামের বাড়ি বরিশাল থেকে ভোর আনুমানিক ৪টার দিকে ফতুল্লা লঞ্চঘাটে লঞ্চ থেকে নেমেছিলেন। লঞ্চঘাট থেকে ভোর সাড়ে ৪ টার দিকে পরিবারের সদস্য নিয়ে একটি ইজি বাইক নিয়ে মাসদাইরে দিকে যাচ্ছিলেন।
এসময় পঞ্চবটি বহুতল ভবনের সামনে তাদের ইজি বাইকটি থামিয়ে তাদের কাছ থেকে টাকা পয়সা হাতিয়ে নেয় ছিনতাইকারীরা। এমনটিই জানিয়েছেন রহিম শেখ। ফতুল্লা মডেল থানা এলাকার প্রতিটি এলাকা অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ। শিল্প কল কারখানা সমৃদ্ধ এই অঞ্চলে সম্প্রতি বেড়ে চলেছে ছিনতাইয়ের ঘটনা। ভুক্তভোগী মানুষ ঝুট ঝামেলা এড়াতে থানা পর্যন্ত এসে অজ্ঞাতনামা ছিনতাইকারীদের বিরুদ্ধে তেমন কোনো অভিযোগ করেননা।
বিশেষ করে মাছ ও সব্জী ব্যবসায়ী যারা পাইকারী ক্রয় করতে ভোরে বের হন এবং গার্মেন্টস ফেরা শ্রমিকরা পড়ছে ছিনতাইয়ের কবলে। ছিনতাইকারীরা ছিনতাইয়ের কাছে ইজি বাইক ও সিএনজি ব্যবহার করে। এসময় তাদের হাতে ধারালো ছোড়া থাকে বলেও একাধিক ব্যাক্তি নিশ্চিত করেছেন। ফতুল্লায় ২৮টি স্পটে প্রতিদিন রাত ১ টা থেকে ভোর ৬ টা পর্যন্ত একাধিক চক্র চালিয়ে যাচ্ছে ছিনতাই।
গত কয়েক মাস আগে ফতুল্লায় ইজি বাইক চালককে হত্যা করে বেশ কয়েকটি ইজি বাইক ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ ঘটনার পরপরই আসামী গ্রেফতার করেছিল। তবে ফতুল্লায় এখন পুরো দমে চলছে জনসাধারণের কাছ থেকে টাকা ছিনতাই। প্রতিদিন রাত ১ টার পর থেকে একাধিক চক্র ভিন্ন ভিন্ন স্পটে ছিনতাই করছে। এতে সর্বশান্ত হচ্ছে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা।
মাছ বিক্রেতা করিম জানান, তিনি বক্তাবলী এলাকায় বসবাস করেন। গত শুক্রবার রাতে তিনিসহ আরো ৪/৫ জন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী বক্তাবলী ঘাট থেকে ভোর ৪ টার দিকে একটি ইজ বাইক নিয়ে যাত্রাবাড়ি থেকে মাছ আনতে যাচ্ছিলেন। ইজি বাইকটি মুসলিমনগর মোল্লা গার্মেন্টস সংলগ্ন ব্রিজ থেকে নামার পরপরই বেশ কয়েকজন যুবক তাদের ইজি বাইকটি আটক করে ৪/৫ জনের সাথে থাকা ব্যবসার সব টাকা হাতিয়ে নিয়ে যায়। এসময় ছিনতাইকারীদের হাতে ধারালো অস্ত্র ছিলো বলেও তিনি জানান।
তিনি আরো জানান,ভোর ৩ টা থেকে সকাল ৬ টা পর্যন্ত ফতুল্লার সড়কগুলো ফাঁকা থাকে যার কারণে ছিনতাইকারীরা এই সুযোগে ছিনতাই করে থাকে। শুধু করিমই নন মুসলিমনগরে মাছ বিক্রেতা সুমন, আজাহার, সেলিম শেখ ,সব্জি বিক্রেতা কাউসার, নবী শেখ, কাশিপুর বাংলাবাজার এলাকার সজিব, আনোয়ার, সাদ্দামসহ বেশ কয়েকজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ছিনতাইয়ের কবলে পড়েছেন বলেও জানানা।
ফতুল্লার যে সমস্ত এলাকা ছিনতাইকারীদের অভয়ারণ্য :
এনায়েতনগরের শাসনগাও আরএস গার্মেন্টসের সামনের সড়ক,মোল্লা গার্মেন্টসের সামনের ব্রিজ, হরিহর পাড়া আমতলা রোডের লাইলী পাগলনীর বাড়ির মোচড়, মুসলিমনগর এতিম খানার কসাই বাড়ির সামনে,শাহিল গ্রুপ সংলগ্ন সড়ক, বিসিক রোডের মেথর খোলা,পঞ্চবটি বহুতল ভবনের সামনের সড়ক, চাঁদনী হাউজিং, জামতলা ঈদ গা, ইসদাইরস্থ ওসমানী স্টেডিয়ামের সড়ক, মাসদাইর পাকাপুল, ফতুল্লা গরুর হাটের পিছনের গলির সড়ক, পোষ্ট অফিস রোডের রেল লাইন বটতলা, দাপা ইদ্রাকপুর এলাকার শাহ জাহান রোলিং মিল সংলগ্ন উইজডমের গলি, রেইনবো ডাইংয়ের মোড়, ভোলাইল দেওভোগ মাদ্রাসা রোডের বাঁশ মুলি পট্রি রোড, কাশিপুর দেওয়ান বাড়ি ব্রিজ, কাশিপুর মাদ্রাসা রোডের ব্রিজ, ধর্মগঞ্জ পাকাপুল, পোষ্ট অফিস রোডের রেল লাইন স্টেশন রোড, প্যারাডাইস সিটি, কুতুবপুর ইউনিয়ন পরিষদের পাশের মাঠ, নন্দলালপুর মেডিক্যাল গলি, নয়ামাটি মোচড়, শাহি বাজার কবরস্থান, বৌ বাজার,পাগলা রেল স্টেশন, পাগলা মেরিএন্ডারসন সংলগ্ন সড়ক, লিংক রোডের খান সাহেব ওসমান আলী স্টেডিয়াম থেকে সাইন বোর্ড সড়কের ভুইঘর, মাহমুদ পুর, রঘুনাথ পুর, কড়ই তলা এলাকায় প্রতিদিন রাত ১টা থেকে ভোর ৬ টা পর্যন্ত একাধিক সংঘবদ্ধ চক্র ছিনতাই করে যাচ্ছে।
এব্যাপারে ফতুল্লা মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মো.রকিবুজ্জামান বলেন, রাতে ইজিবাইক চালকদের হত্যা করে একটি চক্র ইজি বাইক ছিনতাই করতো। সেই চক্র নির্মূল করার জন্য ঝটিকা অভিযান পরিচালনা করা হয়েছিল। সম্প্রতি যাত্রীদের কাছ থেকে ছিনতাই বেড়েছে বলে জানতে পেরেছি। কিন্তু কেউ কোনো অভিযোগ থানায় করেছে বলে আমার জানা নেই। এই চক্রকে নির্মূল করতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে রাতে টহল টিম বাড়ানো হয়েছে। ছিনতাই ঠেকাতে যা যা করনীয় তা করা হবে।