ফতুল্লা মডেল থানা জিডি লিখলে ৩০০ অভিযোগে নেয় ৫০০
যুগের চিন্তা অনলাইন
যুগের চিন্তা
প্রকাশিত : ০৮:৫০ পিএম, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২১ বুধবার
বিভিন্ন অপরাধ ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে আইনী সেবা পেতে গিয়ে বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছেন ফতুল্লার বাসিন্দারা। এক সময় থানায় গিয়ে অভিযাগ কিংবা সাধারণ ডায়েরী অন্তর্ভূক্ত করতে সেবা গ্রহীতাদের নির্দিষ্ট পরিমানণ উচকোচ দিতো হতো। তবে পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তাদের নিয়মিত তদারকীতে অর্থ নেওয়ার প্রবণতা কমে গেছে কিন্তু সুযোগ নিয়েছে বহিরাগতরা। থানার সামনে থাকা বিভিন্ন কম্পিউটারের দোকানগুলোতে আইনি সেবা গ্রহীতাদের কাছ থেকে অভিযোগ ও সাধারণ ডায়েরী (জিডি) লিখতে অধিক টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ অনেক ভুক্তভোগীর।
ফতুল্লার সস্তাপুর এলাকার রিকশা চালকের ছেলে সুমন। তিনি তার স্কুল সার্টিফিকেট হারিয়ে ফতুল্লা মডেল থানায় সাধারণ ডায়েরী করতে যান। থানা থেকে তাকে জানানো হয় বাইরে থেকে জিডি লিখে নিয়ে যেতে। এ জন্য থানার বাইরে থাকা কম্পিউটারের দোকানীদের কাছে যান তিনি। সেখানে তাকে জানানো হয় সাধারণ ডায়েরী লিখতে ৩০০ টাকা লাগবে। পাশাপাশিভাবে থাকা অধিকাংশ দোকানগুলোতে জিডি লিখতে নেয়া হয় দুই থেকে তিনশত টাকা। তাই বাধ্য হয়ে ওই টাকা দিয়ে তিনি জিডি লিখে থানায় নিয়ে জমা দেন। তার মতো আরেক ভুক্তভোগী নারী কাশিপুরের আকলী বেগম। তিনিও ফতুল্লা থানায় একটি অভিযোগ করতে গিয়ে ছিলেন। তাকেও বলা হয় বাইরের কম্পিউটারের দোকান থেকে লিখিয়ে তারপর থানায় যেতে। পোশাক কারখানার ওই নারী শ্রমিক অভিযোগ লেখাতে তাকে দিতে হয়েছে পাঁচশত টাকা। তাদের মতো এমন অসংখ্য মানুষ এ ধরনের বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছেন।
এদিকে শহরের কালির বাজারের মতো বাণিজ্যিক এলাকায় একটি সাধারণ ডায়েরী লিখাতে কম্পিউটারের দোকানীরা নেন মাত্র ত্রিশ টাকা। চাষাঢ়াও ৪০ থেকে ৫০ টাকা অভিযোগ লেখানো যায়। অথচ সদর উপজেলার ফতুল্লা থানার পাশে থাকা দোকানগুলোতে জিডিতে ২০০ থেকে তিনশত টাকা আর অভিযোগ লিখতে পাঁচশত টাকা নেন।
সূত্র জানিয়েছে, সেখানে একটি সিন্ডিকেট বানিয়ে থানায় যাওয়া মানুষের কাছ থেকে সাধারণ ডায়েরী ও অভিযোগ লেখার বিনিময়ে বাড়তি টাকা আদায় করছে। ফতুল্লা থানায় পাশে থাকা মার্কেটের দোকানগুলো সহ অলিতে গলিতে থাকা দোকানের মালিকরা এক ধরনের দাম নির্ধারণ করেছে সেখানে। এতে করে অনেক গরীব ও নিরীহ মানুষ তাদের চাহিদা মতো টাকা দিতে ব্যর্থ হলেও তাদের উপায় থাকে না। এ নিয়ে বাকবিতণ্ডার ঘটনাও ঘটেছে অনেক সময়। কম্পিউটারের দোকানগুলো বিভিন্ন ব্যক্তির মালিকানাধীন হলেও সেখানে বসে থাকেন পুলিশ সদস্যরা।
এ বিষয়ে ফতুল্লা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রকিবুজ্জামান জানান, থানাতে একজন কম্পিউটার অপারেটর রয়েছে। তিনি দপ্তরের কাজে বেশি ব্যস্ত থাকেন। তারপরও কিছু মানুষকে সাহায্য করার চেষ্টা করেন কিন্তু অনেক মানুষের জিডি ও অভিযোগ থাকার কারনে সবাইকে সহযোগিতা করা সম্ভব হয় না। তাই বেশির ভাগ সেবা গ্রহীতারা বাইরে থেকে লিখে নিয়ে আসেন। কিন্তু তাদের কাছ থেকে বেশি টাকা আদায় করা অমানুবিক কাজ। এ নিয়ে অনেক বার বলা হয়েছে কম্পিউটারের দোকানীদের। যখন তাদের বলা হয়, তখন তারা মানবিক হওয়ার চেষ্টা করেন কিছুদিন পর আবার অমানুবিক বনে যান। তাদের উচিত মানুষকে সহযোগিতা করা হয়রানি করা হয় নয়।
ওসি আরও জানান, জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে যদি থানায় কম্পিউটার অপারেটর বাড়ানো হয় তাহলে এসব দোকান এখানে থাকতে পারবে না। জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট মানজুরা মুশাররফ জানান, বিষয়টি অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ। কোন ভুক্তভোগী যদি বিষয়টি নিয়ে জেলা প্রশাসনের বরাবরে আবেদন করে তাহলে আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করবো। পাশাপাশি ওই সব দোকানের বৈধতা আছে কি না তাও দেখা হবে।