একরাতেই বাসভাড়া বাড়ল ১৪ টাকা!
যুগের চিন্তা অনলাইন
যুগের চিন্তা
প্রকাশিত : ১০:৩২ পিএম, ৫ নভেম্বর ২০২১ শুক্রবার
# রাগে-ক্ষোভে ফেটে পড়ছে সাধারণ মানুষ।
হঠাৎ করে সরকারের পক্ষ্য থেকে ডিজেল ও কেরোসিনের মূল্য বৃদ্ধি করায় নারায়ণগঞ্জ শহর থেকে ঢাকায় ছেড়ে যাওয়া উৎসব, বন্ধন, সিটি-বন্ধন এবং আনন্দসহ বিভিন্ন বাস মালিকরা টিকিটের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। তবে হঠাৎ করে বাসভাড়া বৃদ্ধির ক্ষেত্রে নারায়ণগঞ্জের পরিবহন মালিকরা সরকারি নির্দেশনার জন্য অপেক্ষা করেনি বলে খবর পাওয়া গেছে।
এদিকে গতকাল সকালে বাসভাড়া বৃদ্ধির পর থেকেই রাগে-ক্ষোভে ফেটে পরছে সাধারণ মানুষ। তারা বলছেন, বাস মালিকরা সিন্ডিকেট করে অবৈধ ভাবে বাসের ভাড়া বৃদ্ধি করেছে। কারণ ডিজেলের মূল্য বৃদ্ধির দোহাই দিয়ে যে পরিমাণে টিকিটের মূল্য তারা বাড়িয়েছে সেটা সম্পূর্ণই সাধারণ মানুষের আয়ের সাথে সাংঘর্ষিক।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ডিজেলের দাম লিটার প্রতি ১৫ টাকা বাড়তেই নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন বাস মালিকরা এক-একটি টিকিটের মূল্য ১০ থেকে ১৪ টাকা বাড়িয়েছে। তাই অনেকেই এটিকে বেআইনী বলে মনে করছেন। কারণ তাদের মতে, এক লিটার ডিজেলের দাম ১৫ টাকা বাড়লে, বাসের একটি টিকিটের দাম ১৪ টাকা বাড়িয়ে দেওয়ার কোনো যৌক্তিকতা নেই। এটি সাধারণ মানুষের পকেট কাটার ব্যবস্থা মাত্র।
দ্রব্যমূল্যের দাম বৃদ্ধি সাথে সাথে পরিবহন ভাড়া বৃদ্ধি পাওয়ায়, এটিকে মরার উপর খারার ঘা উল্ল্যেখ করে আনিস মিয়া নামে বন্ধন বাসের এক যাত্রী বলেন, ‘সকালে বাজারে গিয়েছিলাম তেল আর কিছু সবজি কিনতে। যাওয়ার পর তেল-সবজির দাম শুনেই মাথাটা একটু চক্কর দিয়ে উঠলো! যাইহোক এরপরও তেল ও সবজি কিনে বাড়িতে পাঠিয়েছি। কিন্তু হঠাৎ ব্যবসায়ীক কাজের ঢাকা যাওয়ার জন্য দুপুরে বন্ধন বাসের কাউন্টারে এসেই শুনি বাসের ভাড়া ১৫ টাকা বাড়ানো হয়েছে! এটাতো এখন ভাই আমাদের সাধারণ মানুষের জন্য মরার উপর খারার ঘায়ে পরিণত হলো। শামীম নামে বন্ধন বাসেরই অন্য এক যাত্রী বলেন, আয় বাড়ে নাই এক টাকা। কিন্তু আজকে বাসে উঠতে গিয়া শুনি ভাড়া বাড়সে ১৪ টাকা। মালিকরা আমাগো পকেট মারনের ফন্দি করসে। সবকিছু যে কই যাইতাসে কিছুই বুঝতে পারতাছিনা।
এদিকে, রাতারাতি অযৌক্তিক ভাবে বাস ভাড়া বৃদ্ধি করাতে নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন বাস মালিকদের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে গতকাল সকাল থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শুরু হয়েছে আলোচনা এবং সমালোচনা। সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে, রাজনৈতীক এবং বিভিন্ন সামাজিক-সাংষ্কৃতিক সংগঠনের নেতারও এতে অংশ নিয়েছেন।
গণসংহতি আন্দোলন নারায়ণগঞ্জ জেলার সমন্বয়ক তরিকুল সুজন একটি ফেসবুকে স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ঢাকা-নারায়ণগঞ্জের দূরত্ব ১৭ কিলোমিটার। ফ্লাইওভার হওয়ার পর দূরত্ব কমে ১৫ দশমিক ৫ কিলোমিটারে দাড়িয়েছে। নারায়ণগঞ্জ থেকে ঢাকা যেতে বাস প্রতি ১০ লিটার ডিজেল লাগে। নতুন বাসের ক্ষেত্রে ডিজেল আরো কম লাগে। বন্ধনের অধিকাংশ বাসের ইঞ্জিন পুরান কিন্তু বডি নতুন। পুরাতন ইঞ্জিনে ডিজেল বেশি লাগে। অতিরিক্ত ডিজেলের মূল্য জনগণ কেন বহন করবে? তারপরও ডিজেলের বর্ধিত মূল্য লিটার প্রতি ১৫ টাকা করে হলে ১০ লিটার ডিজেলের দাম ১৫০ টাকা হয়। উৎসব-বন্ধন বাসের সিট সংখ্যা ৫২টি। সিট প্রতি ১৪ টাকা করে বৃদ্ধি করলে মোট টাকার পরিমান দাড়াঁয় ৭২৮ টাকা। ১৫০ টাকা ডিজেলের মূল্য বৃদ্ধির কারনে যাত্রীদের কাছ থেকে টিপ প্রতি ৭২৮ টাকা আদায় করছে। সুতরাং উৎসব-বন্ধন বাস কৃর্তপক্ষ জনগণের পকেট কাটছে এবং জনগনের কষ্টার্জিত টাকাকে সিন্ডিকেট করে লুট করছে।
যাত্রী অধিকার সংরক্ষণ ফোরামের আহবায়ক রফিউর রাব্বি এ বিষয়ে একটি বিবৃতিতে জানান, গতরাতে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির সাথে সাথে আজ সকাল থেকেই ঢাকা-নারায়ণগঞ্জে বাস ভাড়া ৩৬ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫০ টাকা করা হয়েছে। এখানে বাসের ভাড়া বৃদ্ধির কোন নিয়ম-পদ্ধতি না থাকায় পরিবহন মালিকরা নিজেদের খেয়াল-খুশি মতো ভাড়া বাড়িয়ে নিচ্ছে। যদিও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) এর অনুমতি ছাড়া বাসভাড়া বৃদ্ধি সম্পূর্ণ আইন বিরোধী ও অপরাধ, তার পরেও অহরহ যথেচ্ছভাবে তারা তা করে যাচ্ছে। তাই আমরা এই বর্ধিত বাসভাড়া প্রত্যাহারের জন্য বিআরটিএ ও স্থানীয় প্রশাসনের দ্রুত হস্তক্ষেপ দাবি করছি।
সূত্র বলছে, মূলত সিটি বন্ধন পরিবহনের চেয়ারম্যান জুয়েল, নারায়ণগঞ্জ জেলা বাস মালিক সমিতির কার্যকরি সভাপতি ও উৎসব পরিবহনের চেয়ারম্যান শহিদুল্লাহসহ কয়েকজন বাস মালিক মিলেই এমন অযৌক্তিকভাবে বাস ভাড়া বৃদ্ধি করেছে। তবে এ বিষয়ে কথা বলার জন্য তাদের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও তাদের ফোনে পাওয়া যায়নি।
আর বন্ধন পরিবহনের এমডি আয়ূব আলীর সাথে কথা হলে তিনি যুগের চিন্তাকে বলেন, ‘ভাই আমি কাশিপুর ইউনিয়ন পরিষদের একটি ওয়ার্ডে মেম্বার প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করছি তাই সেখানেই ব্যস্ত আছি, বাসভাড়া বৃদ্ধির বিষয়ে আমি কিছুই জানিনা। অন্যদিকে সরকারি দিক-নির্দেশনা ছাড়াই নারায়ণগঞ্জে কেন বাস ভাড়া বৃদ্ধি হলো তা জানতে বিআরটিএর একাধিক কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও কাউকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
প্রসঙ্গত, আমাদের দেশে এক শ্রেণির মানুষের আয় রোজগাড় দিন দিন বাড়তে থাকলেও অধিকাংশ মধ্যবিত্ত এবং নিম্নবিত্তদেরই আয় বাড়েনি। এতে দেশে আয়-বৈসম্যের বিষয়টি এখন অনেকটা ওপেন সিক্রেট। অর্থনৈতীক বিশ্লেষকদের মতে, জনসাধারণের সাথে সরাসরি সম্পর্কৃত যেসব খাতগুলো আছে, সেগুলোকে দুর্নীতিগ্রস্থ করেই একটি শ্রেণি আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হচ্ছে। অন্যদিকে এর ফলে অধিকাংশ সাধারণ মানুষ ঐসব খাতের সেবা থেকে বঞ্চিত হয়েও নিজেরা আর্থিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে।
এদিকে, নারায়ণগঞ্জের সাধারণ মানুষের সাথে সারাসরি সংশ্লিষ্ট যেসব খাতগুলো আছে তারমধ্যে অন্যতম হচ্ছে, পরিবহন খাত। কিন্তু এই পরিবহন খাতকে ব্যবহার করে পরিবহন মালিকরা দীর্ঘদিন ধরে সাধারণ মানুষের সাথে প্রতারণা করছে। তাই এটিও আয় বৈসম্য তৈরি হওয়ার অন্যতম প্রধান একটি কারণ।