বন্ধ হবে অবৈধ ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক
যুগের চিন্তা অনলাইন
যুগের চিন্তা
প্রকাশিত : ১১:৪২ পিএম, ৬ নভেম্বর ২০২১ শনিবার
# ভোগান্তির ভয় দেখিয়ে সর্বশান্ত করা হচ্ছে রোগীদের
# চলছে মানুষের জীবন নিয়ে খেলা
# এক সপ্তাহের মধ্যে অভিযান- সিভিল সার্জন
খানপুর হাসপাতালকে কেন্দ্র করে দুইশত গজের ভিতরে গরে উঠেছে প্রায় বিশটিরও বেশি বেসরকারী হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার। এসব বেসরকারি হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার চলে খানপুর হাসপাতাল থেকে বাইরে থেকে আনা রোগী দিয়ে। সরকারি এই হাসপাতালের ভোগান্তির ভয় দেখিয়ে সর্বশান্ত করা হচ্ছে রোগীদের। দুই একটা বাদে এদের নেই স্বাস্থ্য অধিদপ্তররে কাগজপত্র।
তারপরও দিব্বি চলছে এসব ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার। অভিযোগ রয়েছে পরীক্ষা-নিরীক্ষার মেশিনপত্র নাই কিন্তু রোগীদের ঠিকি রিপোর্ট দেওয়া হচ্ছে তারা। চলছে মানুষের জীবন নিয়ে খেলা। কারা চালাচ্ছে এসব ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার আর কি ভাবে চলছে এ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। শহরের প্রাণকেন্দ্রে চিকিৎসা ব্যবস্থার এমন ভয়াবহ অবস্থা চললেও নীরব রয়েছেন নারায়ণগঞ্জ জেলা সিভিল সার্জন।
জানা গেছে, দালাল চক্র প্রতিদিন সরকারি হাসপাতাল থেকে ভাগিয়ে এনে বিভিন্ন পরিক্ষা-নিরীক্ষার নামে সর্বশান্ত করছে রোগীদের। তবে এসব ক্লিনিক ও হাসপাতালের অনেকেরই নেই কাগজপত্র। শুধু কাগজপত্রই নয় ব্লাড টেস্টের মেশিনও নেই। কম্পিউটার থেকে আগে থেকেই ডাক্তারের স্বাক্ষর নেয়া কাগজে রিপোর্ট বানিয়ে দেয়া হচ্ছে। কোন কোন ডায়াগনস্টিক সেন্টারে রোগীর ব্লাড কালেশন করে ফেলে দেয়া হচ্ছে। কিন্তু রিপোর্ট ঠিকি দিচ্ছে তারা। এমন প্রতিষ্ঠানও রয়েছে দালালরা নিজেই খুলে বসেছেন। রোগীদের বাধ্য করা হয় সেখানে যেতে। মনগড়া রিপোর্ট দিয়ে প্রতারণা করা হচ্ছে রোগীদের সাথে। আর ক্লিনিকগুলোতে নেই ডিপ্লোমা নার্স ও চিকিৎসক। পরিস্কার পরিচ্ছনের কোন বালাই নেই। হরহামেশাই ঘটছে মৃত্যুর ঘটনা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, সরকারি এই হাসপাতালকে কেন্দ্র নিউ মর্ডান ডায়াগনস্টিক সেন্টার, মেডি-এইড, আমিনা জেনারেল হাসপাতাল, নোভা ডায়াগনস্টিক সেন্টার, সেন্টাল হসপিটাল, ইউনিক ডায়াগনস্টিক সেন্টার, নিউ সেবা ডায়াগনস্টিক সেন্টার, আশশিফা ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টি সেন্টার (ভ্রাম্যমাণ আদালতের দেয়া মামলায় বন্ধ রয়েছে), জাহান ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার, মাতৃসেবা ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার, শাহিন জেনারেল হসপিটাল, নাজমুল ড্রাগ হাউজ এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার ইমন ডায়াগনস্টিক সেন্টারসহ নামে বেনামে রয়েছে আরো অনেক। এসব ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের বিরুদ্ধে অভিযোগের শেষ নেই। এদের রয়েছে দালালের বহর। এরা সরকারি হাসপাতাল সম্বন্ধে বিষিয়ে তুলে ভাগিয়ে আনে রোগীদের।
আর এতে করেই এসব ক্লিনিককে চিকিৎসা নিতে গিয়ে মারা গেছেন অনেকে। আবার অপচিকিৎসার শিকার হয়ে পঙ্গুত্ব বরন করতে হচ্ছে। অপচিকিৎসার শিকার হয়ে অনেকে ভুগছেন দীর্ঘ মেয়াদী জটিলতায়। কারা চালাচ্ছে কি ভাবে চলছে নজরদারি নেই। অভিযোগ রয়েছে মাসোহারা দিয়ে চলছে এসব অখ্যাত প্রতিষ্ঠন। মাঝে মধ্যে ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযানে এদের জরিমানা করা হলেও চিকিৎসা সেবার কোন পরির্বতন হয়নি। এসব ক্লিনিকে রোগী আনলেই গুনতে হয় অনেক টাকা। কিন্তু চিকিৎসা একেবারেই নিম্ন মানের।
এদিকে শহরের প্রাণ কেন্দ্রে চিকিৎসা ব্যবস্থার এমন অবস্থায় বেহাল অবস্থায় নিরব আছেন জেলা সিভিল সার্জন। স্বাস্থ্যসেবার এমন ভয়াভহ পরিস্থিতি হলেও অখ্যাত দুই একটাকে লাইসেন্সও দিয়েছে সিভিল সার্জন। আপলাপাড়া হরকান্ত ব্যানার্জি রোডে অবস্থিত নিউ এশিয়া ক্লিনিকটি পুরানো একটি শ্বেতশ্বেত বিল্ডিং এ চিকিৎসা সেবা কার্যক্রম চালিত হচ্ছে। গেট দিয়ে একজন বের হলে আরেক জন ঢুকতে পারে না। এক রোগীর বিছানা অন্য রোগীর বিছানার সাথে লাগানো। অপরিচ্ছন্ন নেই দক্ষ নার্স ও চিকিৎসক। এরকম অনেক চলার অযোগ্য ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার তারপরও চলছে।
এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইমতিয়াজ জানান, এক সপ্তাহের মধ্যে অভিযান চালানো হবে। অসংগতি পেলেই এসব ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধ করে দেয়া হবে। চিকিৎসা সেবা নিয়ে কোন ধরনের অরাজকতা চলবে না।