বেপরোয়া চালকদের রুখবে কে?
স্টাফ রিপোর্টার
যুগের চিন্তা
প্রকাশিত : ০৫:২১ পিএম, ১২ ডিসেম্বর ২০২১ রোববার
# ট্রাফিক ও বিআরটিএ’র তৎপরতা জোড়ালো বা দীর্ঘ মেয়াদী হচ্ছে না
চালকদের বেপরোয়াতায় প্রতিনিয়তই ঘটছে সড়ক দূর্ঘটনা, বাড়ছে লাশের মিছিল। একের পর এক দূর্ঘটনায় লাশের মিছিল বৃদ্ধি পেলেও মালবাহি ও যাত্রী পরিবহন চালকদের নিয়ন্ত্রনে আনা যাচ্ছে না। এমনকি ফিটনেস বিহীন গাড়িগুলোও দাপিয়ে বেড়ায় শহর থেকে শহরতলী। বিআরটিএ এবং ট্রাফিক পুলিশের দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের মাঝে তৎপরতা দেখা গেলেও তা জোড়ালো বা দীর্ঘ মেয়াদী হচ্ছে না। ফলে দিন দিন বেড়ে চলেছে ফিটনেস বিহীন গাড়ি এবং বেপরোয়া চালকদের সংখ্যা।
সরেজমিনে দেখা যায়, বাস, মিনিবাস, লেগুনা ও মালবাহী গাড়িতে চালকের আসনে বসেন হেলপাড়রা। বিশেষ করে মালবাহী ট্রাকে চিত্র বেশি লক্ষ করা যায়। অদক্ষতার কারণে তাদের হাত ধরেই দূর্ঘটনার সূত্রপাত হচ্ছে বলে মনে করছেন সচেতন মহল। এদিকে, রাতের আঁধারে বালু বাহী ট্রাকগুলোর চালকরা আরো বেশি বেপরোয়া হয়ে উঠে। মেতে উঠে অদৃশ্য প্রতিযোগতায়। আতঙ্ক ছড়িয়ে দেয় সড়কে চলাচলকারী পথচারীদের মাঝে।
অন্যদিকে, ব্যটারী চালিত অটোরিক্সার চালকরাও বেপরোয়া চলাচল করছে। এদের অনভিজ্ঞ হয়ে থাকে। রিক্সা চালকদের ড্রাইভিং লাইসেন্সের প্রয়োজন পরে না বিধায় আইনগত ভাবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাও নেয়া যাচ্ছে না। নগরীতে ব্যাটারী চালিত রিক্সা চলাচলে নিষেধাজ্ঞা থাকালেও তা মানা হচ্ছে না। উপরন্ত দিন দিন নগরীতে এই বাহনের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। শহর কিংবা গ্রামীণ সড়কে তাদের বেপরোয়া গতিতে চলাচলের কারণে হরহামেশা ঘটে চলেছে সড়ক দূর্ঘটনা। ফলে জনমনে প্রশ্ন উঠেছে, এই বেপরোয়া চালকদের রুখবে কে?
সবশেষ তথ্য মতে, গতকাল দুপুরে শহরের চাষাঢ়ায় (পঞ্চবটি-নারায়ণগঞ্জ সড়কে) ইট বোঝাই একটি দ্রুতগামী ট্রাকের চাপায় রিকশায় থাকা দুজন যাত্রীর মর্মান্তিক মৃত্যু হয়। তারা দুজন বাবা-মেয়ে। ট্রাক চালক ও রিকশা চালকের অদক্ষতা এবং বেপরোয়াতার কারণে আকস্মিক এক দূর্ঘটনায় প্রাণ হারালেন তারা। এই ঘটনায় নিহতের পরিবারতো বটেই শোকের ছাঁয়া পড়েছে নগরীতেও। পাশাপাশি আতঙ্কও বৃদ্ধি পেয়েছে সাধারণ যাত্রী এবং পথচারীদের মাঝে।
তথ্য বলছে, ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ পুরাতন সড়ক, লিংক রোড, আদমজী সড়ক, সাইনবোর্ড, চিটাগাং রোড, কাঁচপুরসহ নারায়ণগঞ্জের গুরুত্বপূর্ন ও প্রধান সড়কগুলোতে চালকদের বেপরোয়া চলাচলের কারণে অসংখ্য দূর্ঘটনা ঘটেছে। এসব দূর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন নারী ও শিশুসহ সাধারণ মানুষ। চালকদের খামখেয়ালি মানসিকতা ছাড়াও অনেক ক্ষেত্রে যাত্রী ও পথচারীরাও তাদের চলাচলে থাকেন উদাসীন। এতেও ঘটেছে একাধিক প্রাণহানি।
এই বিষয়ে পথচারী মো. রকিবুল ইসলাম দৈনিক যুগের চিন্তাকে বলেন, নগরীতে গুরুত্বপূর্ন এসব সড়ক পাড়াপাড়ের জন্য ফুট ওভার ব্রিজ নেই। জেব্রা ক্রসিং থাকলেও তার সঠিক ব্যবহার নেই। তাছাড়া চালকরা বেপরোয়া ভাবে চলাচল করছে। তাদের নিয়ন্ত্রনে আনা যাচ্ছে না। সড়কে ব্যাটারী চালিত রিক্সা, ইজিবাইক ও মিশুকের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। এসব চালকরা দক্ষ নয়। তাদের প্রতিরোধ করা যাচ্ছে না। এই বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারাও কার্যকরি ব্যবস্থা গ্রহণ করছেন না। আর কত দূর্ঘটনার পর টনক নড়বে তাদের?
পথচারী রকিবুল ইসলামের এই স্বরল প্রশ্নের উত্তর জানতে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয় বিআরটিএ নারায়ণগঞ্জের সহকারী পরিচালক প্রকৌশলী সৈয়দ আইনুল হুদা চৌধুরীর সাথে। তবে, তিনি ফোন রিসিভ করেননি। অন্যদিকে, নারায়ণগঞ্জ জেলার ট্রাফিক পুলিশের এএসপি’র মুঠোফোনে সংযোগ পাওয়া যায়নি।
তবে, জেলা ট্রাফিক পুলিশের (এডমিন) টিআই মো. কামরুল ইসলাম বেগ দৈনিক যুগের চিন্তাকে বলেন, আমরা প্রায় সময়ই অভিযান চালাই। মামলা দিয়ে থাকি। এমনকি চালকদের সচেতনও করা হচ্ছে। কিন্তু অনেকেই বেপরোয়া ভাবে গাড়ি চালাচ্ছে। কেবল মামলা দিলেই এসব নির্মূল হবে না। চালকদের সচেতন হতে হবে। পাশাপাশি ট্রাফিক পুলিশ সহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর দায়িত্ববান ব্যক্তিদেরও তৎপরতা বাড়াতে হবে।
তিনি বলেন, ‘আমরা ব্যাটারী চালিত রিক্সা শহরে প্রবেশ করতে দেই না। কিন্তু শহরে প্রবেশের জন্য রিক্সা চালকরা বিভিন্ন শাখা সড়ক ব্যবহার করে শহরে প্রবেশ করে থাকে। আমরা রেকার লাগিয়ে জরিমানা আদায় করে থাকি।’