তারা যেন লাশ ভেসে ওঠার অপেক্ষায়
যুগের চিন্তা রিপোর্ট
যুগের চিন্তা
প্রকাশিত : ০১:৩১ পিএম, ৮ জানুয়ারি ২০২২ শনিবার
ধলেশ্বরীতে ট্রলারডুবির ঘটনায় তৃতীয় দিনের মতো উদ্ধার অভিযান চললেও ট্রলার ও নিখোঁজদের সন্ধান মেলেনি।
নারায়ণগঞ্জে ধলেশ্বরী নদীতে ট্রলার ডুবির ঘটনার তিনদিনেও নিখোঁজদের উদ্ধার করা যায়নি। পাওয়া যায়নি ডুবে যাওয়া ট্রলারটির সন্ধানও। এদিকে নিখোঁজদের জীবিত পাওয়ার আশা ছেড়ে দিয়েছেন স্বজনরা। অপেক্ষা রয়েছেন স্বজনদের মরদেহের। অন্তত শেষবারের মত প্রিয়জনের মুখ দেখতে চান তারা।
গত বুধবার সকাল সাড়ে ৯টায় ফতুল্লার ধর্মগঞ্জ ঘাটে ধলেশ্বরী নদীতে এমভি ফারহান-৬ লঞ্চের ধাক্কায় যাত্রীবাহী একটি ট্রলার ডুবির ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় নারী, শিশুসহ ৯ জন নিখোঁজ রয়েছে। খবর পেয়ে ওইদিন সকাল ৯টা থেকে উদ্ধারকাজ শুরু করে ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স, বিআইডব্লিউটিএ, নৌ পুলিশ ও নৌবাহিনীর কোস্টগার্ড। টানা তিনদিনের চেষ্টাতেও ট্রলার কিংবা নিখোঁজ কাউকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। তিনদিনে একজনেরও সন্ধান না মেলায় ক্ষুব্দ অপেক্ষমান স্বজনরা। নিহতের মরদেহ পেলে তাদের আনুষ্ঠানিক শেষ বিদায় জানানোর সুযোগটুকু চান তারা।
নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার ধর্মগঞ্জ এলাকায় ধলেশ্বরীতে লঞ্চের ধাক্কায় ইঞ্জিনচালিত ট্রলার ডুবির ঘটনায় তিন দিন পেরিয়ে গেলেও ডুবে যাওয়া ট্রলার বা নিখোঁজ কারো সন্ধান না পাওয়ায় চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন নিখোঁজদের স্বজনরা। ক্ষুব্ধ স্বজনরা বলছেন, বিভিন্ন সংস্থা লোকদেখানো অভিযান চালাচ্ছে। তারা আসলে খুঁজছে না লাশ ভেসে ওঠার অপেক্ষায় আছে।
শুক্রবার সকাল থেকে ফায়ার সার্ভিস, নৌ-বাহিনী, কোস্টগার্ড ও বিআইডব্লিউটিএ’র ডুবুরি দল তৃতীয় দিনের মতো ধলেশ্বরী নদীতে উদ্ধার অভিযান শুরু করে। তবে এখনো জীবিত বা মৃত কাউকে উদ্ধার করতে পারেনি তারা। নদীর দুইপাশের তীরে নিখোঁজদের স্বজনরা অপেক্ষা করছেন। নিখোঁজ রয়েছেন একই পরিচারের চারজনসহ মোট দশ জন।
নিখোঁজ জিয়াসমিনের ভাই মোক্তার হোসেন বলেন, তিন দিন হয়ে গেলো বোন ভাগিনার লাশটা পর্যন্ত পাচ্ছিনা। কি নিয়ে আমরা বাড়ি ফিরবো। কি উত্তর দিবো বাড়ির লোকজনকে। বিভিন্ন সংস্থা লোকদেখানো অভিযান চালাচ্ছে। তারা আসলে খুঁজছে না লাশ ভেসে ওঠার অপেক্ষায় আছে। ভেসে ওঠা লাশ আমাদের হাতে দিয়ে তারা কাজ দেখাবেন। এই কথা বলেই তিনি কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন।
নিখোঁজ আওলাদ হোসেনের খালাতো ভাই রুহুল আমিন বলেন, তিন দিন ধরে ভায়ের খোঁজে নদীর তীরে বসে আছি। কেউ তাদের সন্ধান দিতে পারছেনা। সকাল থেকে দেখি ফায়ার সার্ভিস, কোস্টগার্ড নদীতে ঘুরে কিন্তু কোন খবর দিতে পারছেনা। তারা কি খুঁজে, কিভাবে খুঁজে সেটা বুঝতে পারছিনা। মানুষগুলো কি নদীতে মিশে গেলো ?
এ ব্যাপারে নারায়ণগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের উপ-পরিচালক আব্দ্ল্লুাহ আল আরেফিন জানান, সকাল থেকে ফায়ার সার্ভিস, কোষ্টগার্ড, নৌবাহিনীর ডুবুরিদল, নৌ-বাহিনীর সদস্যরা নদীর প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকা জুড়ে তল্লাশি চালিয়েছে। কিন্তু মৃতদেহ বা ডুবে যাওয়া ট্রলারের সন্ধান মেলেনি। তিনি বলেন, আমাদের চেষ্টার কোন ত্রুটি নেই।
ট্রলার ডুবির ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রিফাত ফেরদৌসকে আহবায়ক করে সাত সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে জেলা প্রশাসন এম ভি ফারহান-৬ লঞ্চের মাস্টার কামরুল হাসানসহ গ্রেফতারকৃত তিনজনের পাঁচ দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে প্রেরণ করে। রিমান্ড শুনানী আগামীকাল রবিবার।
নৌ পুলিশের পুলিশ সুপার মিনা মাহমুদ জানান, নৌ পুলিশের কো নিজস্ব ডুবুরি নেই। কোন লাশ ভেসে উঠলে সেটি নৌ পুলিশ উদ্ধার করবে। কিন্ত তিন দিনেও কোনো লাশ না পাওয়ায় আমরা বিষয়টি নিয়ে চিন্তিত । তিনি বলেন, শীতের সময় সবাই ভারি পোষাক পড়ে। ধারনা করা হচ্ছে পানিতে ভারি পোষাকের কারনে লাশ ভেসে উঠতে সময় লাগাছে। আবার এমন-ও হতে পারে ট্রলারটি লঞ্চের ধাক্কায় উল্টে গিয়েছে। যে কারনে নিখোঁজরা ট্রলারের নিচে আটকে আছে।
এদিকে নারায়ণগঞ্জ ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের উপসহকারী পরিচালক আব্দুল্লাহ আল আরেফিন বলেন, তারা উদ্ধারকাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। চেষ্টায় কোনো কমতি নেই। তবু স্রোত, দুই নদীর মোহনার কারণে সফলতার মুখ দেখতে পারছেন না। শনিবার আবারও উদ্ধারকাজ শুরু করবেন বলেও জানান ফায়ার সার্ভিসের এই কর্মকর্তা।
এদিকে ট্রলারডুবির কারণ অনুসন্ধানে নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকতাকে প্রধান করে সাত সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে জেলা প্রশাসন। বিআইডব্লিউটিএ’র করা মামলায় এমভি ফারহান-৬ লঞ্চের মাস্টার কামরুল হাসানসহ তিন জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদেরকে পাঁচ দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে। আগামী রবিবার তাদের রিমান্ড শুনানি।