সোমবার   ২৫ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ১১ ১৪৩১   ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ভ্রাম্যমাণ টিকা কার্যক্রমে ভোগান্তি

যুগের চিন্তা রিপোর্ট

যুগের চিন্তা

প্রকাশিত : ১১:২৩ এএম, ১ ফেব্রুয়ারি ২০২২ মঙ্গলবার

জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে নিম্ন শ্রেণির পেশাজীবীসহ সকলের জন্য ভ্রাম্যমাণ টিকা প্রদান কার্যক্রমে নিবন্ধন নিয়ে ভোগান্তি পোহাচ্ছেন গ্রহীতারা।

জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে নিম্ন শ্রেণির পেশাজীবীসহ সকলের জন্য ভ্রাম্যমাণ টিকা প্রদান কার্যক্রমে নিবন্ধন নিয়ে ভোগান্তি পোহাচ্ছেন গ্রহীতারা।

নানা কারণে টিকার আওতায় আসতে না পারা নিম্ন শ্রেণির পেশাজীবীসহ সকলের জন্য ভ্রাম্যমাণ টিকা প্রদান কর্মসূচি চালু করে জেলা প্রশাসন। খুদেবার্তার জটিলতা ছাড়াই টিকা পাওয়ায় উৎসাহ বাড়ে গ্রহীতাদের। তবে সহজ উপায় যেন জটিল হয়ে দাঁড়িয়েছে। টিকা দেওয়ার পর নিবন্ধন নিয়ে ভোগান্তি পোহাচ্ছেন গ্রহীতারা।

 

সোমবার (৩১ জানুয়ারি) জেলা প্রশাসকের (ডিসি) কার্যালয়ে এমন চিত্র দেখা যায়। টিকা গ্রহীতা ও জেলা প্রশাসনের সংশ্লিষ্টদের সাথে আলাপ করে জানা যায়, গত ২৯ জানুয়ারি সকালে শহরের চাষাঢ়ায় জিয়া হলের সামনের খালি জায়গায় ভ্রাম্যমান টিকাদান কার্যক্রম শুরু করে জেলা প্রশাসন। যারা এখনো টিকা নিতে পারেননি তাদের দ্রুত টিকার আওতায় আনতে এই কার্যক্রম শুরু হয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানান। প্রতিদিন সকাল দশটা থেকে বেলা ১২টা পর্যন্ত এই কার্যক্রম চলছে। জনগুরুত্বপূর্ণ আরও কয়েকটি স্থানে এই কার্যক্রম শুরু করা হবে বলেও জানান তারা।


তবে এই কার্যক্রমে ভোগান্তি পোহাচ্ছেন টিকা গ্রহীতাকে। টিকা গ্রহীতাদের কয়েকজনের সাথে কথা বলে জানা যায়, জিয়া হলের সামনের খালি জায়গায় দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে টিকা দিয়েছেন তারা। টিকা দিতে মোবাইল নম্বর ছাড়া আর কোনো কিছুর প্রয়োজন হয়নি। তবে জটিলতা শুরু হয় টিকা দেওয়ার পর। টিকা দেওয়ার পর জানানো হয়, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে গিয়ে টিকার জন্য নিবন্ধন করতে হবে। নাহলে টিকার দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া যাবে না।

 

এদিকে নিবন্ধন করতে প্রয়োজন জাতীয় পরিচয়পত্র কিংবা জন্ম নিবন্ধনের নম্বর। সাথে না থাকায় তা আনতে আবার বাড়িতে ছুটতে হচ্ছে টিকা গ্রহীতাদের। জাতীয় পরিচয়পত্র কিংবা জন্ম নিবন্ধনের কাগজ নিয়ে আবার ছুটছেন জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে। সেখানেও দীর্ঘ লাইন। ৩০ মিনিট থেকে ১ ঘন্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে নিবন্ধন করতে পারছেন তারা।


সরেজমিনে দেখা যায়, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের দ্বিতীয় তলার তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অধিদপ্তরের প্রোগ্রামার আয়শা সিদ্দিকার অফিসকক্ষের সামনে থেকে পুরো বারান্দা জুড়ে দীর্ঘ লাইন। এই লাইন সিড়ি বেয়ে তিনতলায় গিয়ে ঠেকেছে। বেলা ১২টায় কথা হয় লাইনে থাকা রিকশাচালক আব্দুর রশীদের সাথে।

 

তিনি এক ঘন্টা যাবৎ লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন বলে জানান। তিনি বলেন, ‘খালি মোবাইল নম্বর দিয়া টিকা দিছি। টিকা দেওয়ার পর জানাইছে, রেজিস্ট্রেশন করা লাগবো। এখন রিকশা থুইয়া লাইনে দাঁড়াইয়া আছি। আজকের দিনের ইনকাম বন্ধ। এতো ঝামেলা জানতে টিকাই দিতাম না।’


নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নারী বলেন, তিনি মিশনপাড়ার বাসিন্দা। তার কিশোরী মেয়ে টিকা নিয়েছে। টিকা দেওয়ার পর রেজিস্ট্রেশনের কথা। পরে চাষাঢ়া থেকে মেয়েকে নিয়ে ডিসি অফিসে এসেছেন। এক ঘন্টা লাইনে থাকার পর মেয়ে কক্ষে ঢুকেছে রেজিস্ট্রেশন কক্ষে।


টিকা প্রদানের এই প্রক্রিয়ায় বিরক্ত ডনচেম্বারের বাসিন্দা জিসান। শনিবার টিকা দিয়েছেন এই ব্যবসায়ী। বাসায় যাওয়ার পর মোবাইলে কল আসে। পরে জানানো হয়, জাতীয় পরিচয়পত্র নিয়ে ডিসি অফিসের ২০৬ নম্বর কক্ষে আসতে হবে। টিকা দেওয়ার পর শরীর অসুস্থ থাকায় সোমবার এসেছেন। দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে আছেন নিবন্ধনের জন্য।

 

জিসান বলেন, ‘প্রথমে বললো, খালি মোবাইল নম্বর দিলেই টিকা নেওয়া যাবে। নিলামও তাই। এখন তো বোকা সেজে বসে আছি। যেইখানে টিকা নিছি সেইখানেই তো রেজিস্ট্রেশন করতে পারতো। সহজ কইয়া আরও জটিল কইরা ফালাইছে। এর চেয়ে সাধারণ পদ্ধতিতেই টিকা দেওয়ায় ঝামেলা কম। তখন খালি টিকা দিতেই লাইনে দাঁড়াতে হইতো। এখন তো দুইবার।’


দোতলার লাইন গিয়ে ঠেকেছে তৃতীয় তলা পর্যন্ত। লাইনের শেষপ্রান্তে ছিলেন আফজল, ফজলুর রহমান ও উমেদ। তারা তিনজনই ঠেলাগাড়ি চালান। রাস্তায় যাবার পথে টিকা দেওয়া হচ্ছে শুনে টিকা দিয়েছেন। তখন কেবল মোবাইল নম্বরেই লেগেছে। টিকা দেওয়ার পর ডিসি অফিসে এসেছেন নিবন্ধন করতে।

 

নিবন্ধনের লাইনে দাঁড়িয়ে শোনেন, জাতীয় পরিচয়পত্রও লাগবে। উমেদের সাথে জাতীয় পরিচয়পত্র থাকলেও বাকি দু’জনের কাছে তা ছিল না। জাতীয় পরিচয়পত্র আনতে তারা লাইন ছেড়ে ছোটেন বাড়ির পথে। আফজল বলেন, ‘কী পেরেশানিতে পড়লাম ভাই। এত কিছু তো লাগবো তখন তো কয় নাই। এখোন বাড়িত ছুটোন লাগতাছে।’


এদিকে নিবন্ধন কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছিল তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অধিদপ্তরের প্রোগ্রামার আয়শা সিদ্দিকার অফিসকক্ষে। সেখানে তিনজন নিবন্ধন কার্যক্রম সম্পন্ন করছেন। তাদের কাছে জানতে চাইলে বলেন, টিকা জিয়া হল থেকে নিতে হবে। পরে নিবন্ধনের জন্য এইখানে আসতে হবে।


একই স্থানে টিকা প্রদান ও নিবন্ধন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা যেত কিনা, এই প্রশ্নের জবাবে তারা কথা বলেননি। নিবন্ধন কাজে নিয়োজিত এক ব্যক্তি বলেন, এই বিষয়ে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) শামীম বেপারী বলতে পারবেন। তিনিই এই কার্যক্রম তদারকি করছেন।


তবে এই বিষয়ে কথা বলতে শামীম বেপারীর কক্ষে গেলে তার সহকারী জানান, তিনি জুম মিটিংয়ে আছেন। ঘন্টাখানেক পর কথা বলতে হবে। পরবর্তীতে শামীম বেপারীর মুঠোফোনে কল করেও সাড়া পাওয়া যায়নি। সাড়া পাওয়া যায়নি জেলা প্রশাসক মঞ্জুরুল হাফিজের মুঠোফোন নম্বরে কল করেও।