মদনগঞ্জ-মদনপুর সড়কের সংস্কার খেলায় জনদুর্ভোগ
লতিফ রানা
যুগের চিন্তা
প্রকাশিত : ১০:৫৬ এএম, ৭ ফেব্রুয়ারি ২০২২ সোমবার
সড়ক ও জনপথ এর বন্দরের মদনপুর-মদনগঞ্জ সড়কে সংস্কার সংস্কার খেলায় ভোগান্তির মাত্রা ক্রমে বেড়েই চলছে এলাকাবাসীর। আর সংস্কারের নামে সওজের একটি চক্র ঠিকাদারদের সাথে হাত মিলিয়ে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে বলে অভিযোগ করছেন এলাকাবাসী। সরকারের কোটি কোটি টাকা খরচের পরও এই সড়কের কোন প্রকার উন্নতি তো হচ্ছেই না বরং ভোগান্তির পরিমান আরও বেড়ে চলছে বলে দাবি করছেন যাত্রী ও পরিবহন শ্রমিকরা। এ বিষয়ে প্রশাসন উদাসীনতার পরিচয় দিচ্ছেন বলে মনে করেন তারা। এর আগেও একাধিকবার এই সড়কটি নিয়ে লেখালেখিসহ সওজের কর্মকর্তাদের কাছে সড়কটি সংস্কার নাটকের অভিযোগও করা হয়। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও সত্য এতে মদনপুর থেকে মদনগঞ্জের দীর্ঘ প্রায় ১৪ কিলোমিটার এই সড়কটির সংস্কার কাজের ন্যুনতম উন্নতিও হয়নি।
গতকাল রোববার সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, সড়ক ও জনপথ (সওজ) এর অন্তর্ভূক্ত এই সড়কটির মদনগঞ্জ থেকে মদনপুরের পুরো রাস্তা জুড়েই খানাখন্দে ভরা। বিশেষ করে বন্দরের নবীগঞ্জ এলাকা থেকে মদনপুর রাস্তার অবস্থা একেবারেই নাজুক। নবীগঞ্জ বাস স্ট্যান্ড থেকে সামান্য উত্তর দিকে গেলে দেখা যায় হঠাৎ করেই প্রায় এক দেড় ফুট গর্ত এবং এর পাশেই আবার টিউমারের মতো ফুলে উঠেছে। এ বিষয়ে এখানকার সাইফুল হাসান নামের এক অটো ইজিবাইক চালকের সাথে কথা বললে তিনি জানান, এখানে প্রতি তিন-চার মাস অন্তরই সংস্কার কাজ করতে দেখা যায়। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো সেসব সংস্কার কাজে পিচ (বিটুমিন) এর পরিমান এতই কম থাকে যে, পিচ ঢালাই করার একদিন পরও যখন আমি আমার ছোট এই গাড়িটি চালাই তখন চাকার সংঘর্ষের সাথে সাথে রাস্তার পাথর বা কংক্রিট উড়তে থাকে। যার জন্য সেখানে আবারও গর্ত হওয়া শুরু হয়। তিনি আরও জানান এখানে প্রায় সব সময়ই কোন না কোন গাড়ি অকেজো হয় আট্কা পড়ে। এরই মধ্যে ঝাঁকুনির কারণে তাদের গাড়ি থেকে বিভিন্ন সময় যাত্রিরা রাস্তা ছিটকে পড়ে বলেও জানান তিনি।
কাঁচপুর এলাকায় গার্মেন্টসের সুপারভাইজারের কাজ করেন আকতারুজ্জামান। তিনি জানান, তার বাড়ি মদনগঞ্জ এলাকায়। এখানে কোন গণপরিবহন না থাকায় প্রতিদিনই তাকে অটো কিংবা সিএনজি করে মদনপুর যেতে হয়। রাস্তার এ অবস্থার কারণে এখানে তিনি অনেক যাত্রিকেই দেখেছেন অসুস্থ হয়ে পড়তে। প্রায়ই অনেকে মাথা ঘোরানো ও বমি সমস্যা ভোগেন। বয়স্করা তো এখান দিয়ে যাওয়ার সময় অনেক খিস্তিও করেন। তার জানা মতে অন্তত দশ বছরের মধ্যে এখানে পরিকল্পিতভাবে কাজ হয়নি বলে উল্লেখ করে তিনি জানান, গত বছরের প্রথম দিকে পুরো রাস্তার কার্পেটিংয়ের সংস্কার করা হয়েছে। অথচ যেভাবে করা হয়েছে তা ছিল খুবই হাস্যজনক। প্রথমত পুরো রাস্তার কার্পেটিংয়ে পিচের পরিমান ছিল খুবই কম। তার উপর কার্পেটিং কাজের শেষ অংশে যে ফিনিশিংয়ের কাজ করা হয় অর্থাৎ মিহি পাথরের মতো বালু দিয়ে যে পিচ ঢালাইয়ের ফিনিশিং দেওয়া হয় সেধরণের কোন ফিনিশিং দেয়নি। প্রথম আমরা ভেবেছিলাম একটু একটু করে পুরো রাস্তা পিচ ঢালাইয়ের পর হয়তো পুরোটা একেবারে ফিনিশিং ঢালাই দিবে। কিন্তু আশ্চর্য্যরে বিষয় কোন ফিনিশিং দেওয়াই হয়নি। তাই ছোট বড় যানবাহনের চাকায় রাস্তা পাথর উড়ে সব সরে যায়। এবং রাস্তাটি সেই পূর্বের অবস্থায় চলে যায়। তিনি বলেন, এত টাকা খরচ করে এতটুকু কাজের জন্য রাস্তাটির একদিনের কাজের গ্যারান্টি দেওয়ার মতো অবস্থায়ও ছিল না। বরং রাস্তার পাথর আলগা হয়ে যানবাহন চলাচলে আরও সমস্যার সৃষ্টি হয়।
এ বিষয়ে বন্দর নাগরিক কমিটি (বনাক) এর সাধারণ সম্পাদক এরশাদুল কবির সোহেল জানান, আমি একবার রাস্তাটির সংস্কার কাজ চলার সময় নুরুল হক নামের এক ঠিকাদারের সাথে কথা বলেছিলাম, আপনারা যে অন্য রাস্তা থেকে তুলে খোয়া (ইট ও পাথরের টুকরো) এখানে এনে লাগাইতেছেন অর্থাৎ অন্যান্য রাস্তার পিচ (বিটুমিন) কেটে এনে গ্রাইন্ডিং করে এনে লাগাচ্ছেন এর কারণটা কি! উনি বলছিলেন আমরা লেভেল করতেছি। যখন জিজ্ঞেস করি এগুলো কতদিন থাকবে, উত্তরে তিনি বলেন আমাদের যেভাবে সরকারি নির্দেশনা আছে সেভাবেই করছি। তারা যে ময়লা আবর্জনা দিয়ে গর্তগুলো বন্ধ করছে তা সর্বোচ্চ এক দেড় মাস স্থায়ীত্ব হবে। আমি বিশ্বাস করি সওজ এর বরাদ্ধ এত ছোট মানের হতে পারে না। তাই যখন তাকে বলি আমার প্রধানমন্ত্রী এমন নাম মাত্র কাজ করাবেন না। আপনি ফাকিবাজি করতেছেন তখন তিনি বলেন, আমাকে বলে লাভ নেই মন্ত্রনালয় গিয়ে কথা বলেন। সোহেল আরও জানান, রাস্তার মাঝখানে এসব গর্ত ও টিউমারে কারণে যাত্রীরা চরম বিপদে আছে সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে, পরিবহনের স্থায়ীত্ব কমে যাচ্ছে। এমনকি এসব উচুনিচুর কারণে গাড়ি একেবারে ধীর গতিতে চালাতে হয় ফলে এখানে ছিনতাই ও ডাকাতি নিয়মিত হয়ে পড়ছে।
এ বিষয়ে সড়ক ও জনপথ এর উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মো. আবুল হোসেন বলেন, এই সড়কটির সম্ভবত টেন্ডার হয়ে যাচ্ছে। শীঘ্রই পুরো সড়কটি ঠিক হয়ে যাবে। এখন যেসব সমস্যা আছে তা ঠিক হয়ে যাবে। দ্রুতই এর কাজ ধরা হবে। তিনি বলেন এখানে সংস্কার করা হয় আবারও একই অবস্থার সৃষ্টি হয় তারপর আবারও মেরামত করা হয়। যতদিন পর্যন্ত এর স্থায়ী কাজ শুরু না হবে ততদিন এভাবেই সংস্কারের মাধ্যমে ঠিক রাখার চেষ্টা করা হবে। তিনি বলেন এখানে সংস্কারের কাজ করা হলেও তা থাকে না। এখানে আমি দেখেছি লেয়ারটা নষ্ট হয়ে গেছে। তাই কাজ করার পরও তা থাকে না। দুই পাশে প্রশস্ত করার মাধ্যমে এর স্থায়ী কাজ করার জন্য টেন্ডারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তবে আমাদের যতটুকু সম্ভব ততটুকু সংস্কারের ব্যবস্থা আমরা করব।