জীবন-জীবিকা লণ্ডভণ্ড
যুগের চিন্তা অনলাইন
যুগের চিন্তা
প্রকাশিত : ০৬:২৭ পিএম, ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২২ শুক্রবার
# জীবনযাত্রার ব্যয় মেটাতে নিম্নবিত্ত-মধ্যবিত্তের নাভিশ্বাস অবস্থা
আয়ের তুলনায় ব্যয় বেড়ে যাওয়ার পর নিম্নবিত্তের মানুষ সামাজিক নিরাপত্তার আওতায় বিভিন্ন সরকারি সুবিধা পেলেও বাড়তি ব্যয়ের চাপে পিষ্ট মধ্যবিত্তরা। জীবনযাত্রার ব্যয় মেটাতে তাদের নাভিশ্বাস অবস্থা। নিত্যপণ্যের দাম সবচেয়ে বেশি বাড়ছে। শাকসবজি থেকে শুরু করে সব ধরণের খাদ্যপণ্যের দাম লাগামহীন। একইভাবে বাড়িভাড়া, জ্বালানি ব্যয় বেড়েছে। সন্তানের লেখাপড়ার খরচ ও চিকিৎসা ব্যয়ও বেড়েছে। কিন্তু ব্যয়ের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে আয় বাড়ছেনা। ফলে মানুষের জীবনযাত্রার মান কমছে।
সর্বশেষ অবস্থা অনুযায়ী সমাজবিশ্লেষকরা বলেছেন, যেভাবে দাম বাড়ছে সবজিনিসের তা সহসা কমার লক্ষণ দেখা যাচ্ছেনা। এভাবে চলতে থাকলে অবস্থা ভয়াবহ রূপ নেবে। শহরের ২নং রেলগেট এলাকায় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম দুপুরে রুটি-কলা খাচ্ছেন। দুপুরে ভাত না খেয়ে রুটি-কলা কেন খাচ্ছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখন সাধার রেস্তোরাগুলোতের একবেলা সবজি, ডাল ও ভাত খেতেও ৮০ টাকা লাগে। সংসারের খরচ বেড়ে যাওয়ায় তিনি দুপুরে রুটি-কলা খেয়ে কাটানো শুরু করেন।
জানতে চাইলে সংসারে ব্যয় বাড়ার খতিয়ান তুলে ধরে বলেন, গত জানুয়ারি মাসে বাসাভাড়া ৫০০ টাক বেড়েছে। সন্তানের স্কুলে যাওয়া আসার খরচ বাবদ দিনে লাগত ২০ থেকে ৪০ টাকা। এখন লাগে ৬০ টাকা। চাল-তেল-ডাল-চিনিসহ সব পণ্যের দামই বাড়তি। অফিসে আসা যাওয়া করতেও বাসভাড়া বেশি দিতে হচ্ছে। কিন্তু তার আয় দুই বছর আগে যা ছিল এখনো তাই হচ্ছে।
নজরুল ইসলামের মত সাধারণ মানুষের ব্যয়ের বড় খাত চারটি। খাদ্য ও ঘরকন্যার উপকরণ কেনা, বাসাভাড়া ও সেবার বিল এবং সন্তানের পড়াশোনা এবং পরিবহন। সম্প্রতি এই চারটি খাতেই একসঙ্গে পণ্য ও সেবার মূল্য বেড়ে যাওয়অয় হিমশিম অবস্থা মানুষের।
গতকাল দুপুরে কম দামে পণ্য বিক্রির দোকান টিসিবির ট্রাকে পণ্য কেনার জন্য বিরাট লম্বা লাইন চোখে পড়েছে। যেখানে নিম্নবৃত্ত আয়ের মানুষের সাথে সাথে অনেক মধ্যবিত্তকেও দেখা গেছে পণ্য কিনতে ঝাপিয়ে পড়েছে। আলম মিয়া নামে এক ব্যক্তি জানান, এখান থেকে পণ্য কিনলে কিছুটা কম দামে পাবো। যেহারে জিনিসপত্রের দাম বেড়ে গেছে, সাশ্রয় করতে পারলেই তিনি হাঁফ ছেড়ে বাচেন।
তিনি বলেন, বাজারে এখন চালের দাম চড়া। সাম্প্রতিকালে ডাল, তেল ও চিনির দাম বেড়েছে ব্যাপকহারে। বেড়েছে সাবান, টুথপেষ্ট, প্রসাধনী, টিস্যুসহ সংসারে প্রয়োজনীয় বিভিন্ন পণ্যের দাম।
এদিকে ডিজেলে দাম বাড়ানোর পর পরিবহনে ভাড়া এক লাফে বেড়েছে ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ। করোনার কারণে গত বছর না বাড়লেও এবছর বাড়ির মালিকরা ভাড়া বাড়িয়েছেন। কোন কোন ক্ষেত্রে স্কুল-কলেজের বেতন ও খাতা কলমের দামও বাড়তি। একটি খাবার ডেলিভারির অনলাইন সেবায় কাজ করেন জহিরউদ্দিন। তিনি বলেন, সীমিত আয়ের মানুষ কষ্টে আছে। ধনীদের কথা আলাদা। কিন্তু মধ্যবিত্তরা অনেক কষ্টে রয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সরকারি সংস্থা ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) বাজারদরের তালিকা ও গত বৃহস্পতিবারের তালিকা ধরে বিশ্লেষণ করলে জানা যায়, মোটা চালের দাম ১৫, মোটা দানার মসুরের ডাল ৭৭, খোলা সয়াবিন তেল ৫৪, চিনি ৪৯ ও আটার দাম ২১ শতাংশ বেড়েছে। শুধু ভোজ্যতেলের কথা ধরা যাক। মধ্যম আয়ের পাঁচজনের একটি পরিবারে গড়পড়তা ৫ লিটারের এক বোতল সয়াবিন তেলের দাম ছিল ৪৬৫ টাকা থেকে ৫১০ টাকা। এখন তা ৭৪০ থেকে ৭৮০ টাকা। মানে হলো শুধু সয়াবিন তেল কিনতে একটি পরিবারের ব্যয় বেড়েছে ৫৬ শতাংশ।
কাঁচা বাজারে মাছ,মাংস ও সবজির দাম নিয়মিত উঠানামা করে। তবে বিগত এক বছর ধরে দেখা যাচ্ছে ফার্মে উৎপাদিত মুরগির দাম বছরজুড়েই বেশি থাকছে। যেমন ব্রয়লার মুরগীর দাম বছরের বেশিরভাগ সময় ১৫০ টাকার বেশি থাকে। করোনার আগেও এর দর ১৩০ টাকার আশেপাশে থাকতো। সকল ক্ষেত্রে এমনকি পরিবহনেও ভাড়া বেড়ে যাওয়ায় খুবই কষ্টে দিনাতিপাত করছে মধ্যবিত্তরা। এ থেকে উত্তোরণের কোন পথ খুঁজে পাচ্ছেনা মানুষ।