বাড়ছে রক্তচোষা বাড়ছে আতঙ্ক
বিশেষ প্রতিনিধি
যুগের চিন্তা
প্রকাশিত : ০৭:০৫ পিএম, ১২ মার্চ ২০২২ শনিবার
# সিটি কর্পোরেশনে কার্যক্রম চলছে
#সদরের কোনো ইউপিতে নেই মশক নিধনের জন্য বাজেট
রাতের বেলা মশার উপদ্রব সেই আদিকাল থেকেই চলে আসছে। তবে বর্তমানে রাত আর দিন নেই মশার যন্ত্রনায় অতিষ্ট নগর থেকে শহরতলীর মানুষও। নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন থেকে মশক নিধনে প্রতিবারই উদ্যোগ গ্রহণ করা হয় কিন্তু মশার যন্ত্রণা থেকে রেহাই তেমন একটা পাননা নগরবাসী। অপরদিকে সদর উপজেলার ফতুল্লা ও সিদ্ধিরগঞ্জেও দিন দিন মশার উপদ্রব বেড়েই চলছে বলে জানিয়েছেন উল্লেখিত এলাকার বাসিন্দারা।
সিটি কর্পোরেশনে মশক নিধনের জন্য বাজেট থাকলেও ফতুল্লা,এনায়েতগর, কুতুবপুর, কাশিপুর ও বক্তাবলী ইউনিয়ন পরিষদের নেই কোনো বাজেট। বিশেষ করে ফতুল্লা,এনায়েতনগর ও কুতুবপুরে বিশাল জনগোষ্ঠির বাস হলেও কখনোই ইউনিয়ন পরিষদ থেকে মশক নিধনে কার্যকরী কোনো ভুমিকা পালন না করারও অভিযোগ রয়েছে।
আগামী বর্ষা মৌসুমে ডেঙ্গু আতঙ্কে রয়েছেন উল্লেখিত এলাকার বাসিন্দারা। অপরদিকে সদর উপজেলার ইউনিয়নগুলোতে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা না থাকার কারনে গৃহস্থালির ময়লা-আবর্জনা ড্রেনে ফেলছে মানুষ। ফলে সহজেই মশার উৎপত্তিস্থল সৃষ্টি হচ্ছে বলেও মনে করেন অনেকে।
মশা একটি ক্ষুদ্র প্রানী। মশা থেকেই ম্যালেরিয়াসহ ও ডেঙ্গু রোগের সৃষ্টি। ২০১৯ সালের ২৮ জুলাই নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার ফতুল্লার বক্তাবলীর ছমিরনগর এলাকার জসিম উদ্দিনের ছেলে শান্ত, ৬ জুলাই ইসদাইরে কায়কোবাদ সিদ্দিকীর ছেলে শাওন কবীর সালেহীন ও ২৫ জুলাই ফতুল্লার দেলপাড়া এলাকার বেলাল হোসেন মিন্টু নামের স্কুলের প্রধান শিক্ষকের মৃত্যু হয়েছে।
উল্লেখিত বছরে আশংকাজনক হারে ডেঙ্গু রোগী সনাক্ত হয়েছিলো নারায়ণগঞ্জে। মৃত্যুর সংখ্যাও বেড়েছিলো। চারদিকে আতংক ছড়িয়ে পড়েছিলো। ঘরে ঘরে বেড়েছিলো মশারির ব্যবহার। অনেকে মশা থেকে বাঁচতে বাসায় বেশি পরিমানে মশাল কয়েল ব্যবহারের মাত্রা বাড়িয়ে দিয়েছিলো। কয়েল ব্যবহার করে মশা থেকে পরিত্রাণ পেতে গিয়ে মানুষ যে পরিমানে ব্যবহার করছে এতে করে স্বাস্থ্য ঝুঁকিও বাড়ছে বলে মনে করেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ২০২১-২০২২ অর্থ বছরের রাজস্ব ও উন্নয়নসহ ৬৮৮ কোটি ২৩ লাখ ১৭ হাজার ৩৫৬ টাকার বাজেট ঘোষণা করা হয়েছে। এই বাজেটে মশক নিধনের জন্যও বরাদ্দ রাখা হয়েছে। তবে এব্যাপারে সরকারী কোনো বাজেট নেই ইউনিয়ন পরিষদগুলোতে।
গেল বছর মশার প্রকপ বাড়ার কারনে উপজেলা থেকে প্রতিটি ইউনিয়নকে ফগার মেশিন দেয়া হয়। কিন্তু মশক নিধনে এই মেশিন ব্যবহার করার কথা থাকলেও মশক নিধনের জন্য প্রকৃত ঔষধ ব্যবহারে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানরা ছিলেন উদাসীন।
এব্যাপারে ফতুল্লা লালপুর এলাকার বাসিন্দা আসলাম হোসেন বলেন, সকালে কাজের উদ্দেশ্যে বাসা থেকে বের হয়ে রাতে বাসায় বিশ্রামের জন্য ফেরেন তিনি। কিন্তু মশার যন্ত্রণায় রাতে তেমন ঘুমাতে পারেন না তিনি এবং তার পরিবারের সদস্যরা।
প্রতিদিন ২টি রুমে মশার কয়েল জ্বালানো হয়। সকালে ঘুম থেকে উঠলে গলা এবং মুখ তেতো হয়ে যায়। কয়েকদিন যাবৎ তার ১১ বছরের ছেলের কাশিও শুরু হয়েছে। কয়েল ব্যবহারের কারনে এমনটি হয়েছে কিনা এ নিয়েও তিনি চিন্তিত আছেন বলে জানান।
পঞ্চবটি এলাকার ফারুক সরকার বলেন,মশারি টানানো হলেও মশার যন্ত্রণা থেকে রেহাই পাওয়া কষ্টকর। মনে হয় মশার আবাদ করা হচ্ছে কোথাও। সন্ধ্যার পরে মশার যন্ত্রণা শুরু হয়। স্কুল কলেজে পড়ুয়া ছাত্র-ছাত্রীরা মশার যন্ত্রণায় নাস্তানাবুদ হয়ে যাচ্ছে। তিনি আরো বলেন,যদি মশা নিধনের ব্যপারে কার্যকরী ভুমিকা এখনই রাখা না হয় তাহলে বর্ষা মৌসুমে পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ আকার ধারন করতে পারে।
নারায়ণগঞ্জের দিগুবাবুর বাজারের ব্যবসায়ী কামাল হোসেন বলেন,দিনে দোকানে মশার কয়েল জ্বালিয়ে রাখতে হয়। বেশ কয়েকদিন যাবৎ মশার উপদ্রব বেড়ে গেছে।
নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, মশক নিধনের সংশ্লিষ্টরা কাজ শুরু করেছে। এছাড়াও মশার উৎপত্তিস্থলগুলোতে ঔষধ ছিটানোর কর্মসূচী চলমান রয়েছে।
অপরদিকে সদর উপজেলার একটি ইউনিয়নের সচিব নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, মশক নিধনের ব্যাপারে ইউনিয়ণনগুলোতে সরকারী বরাদ্ধ নেই। তবে চেয়ারম্যানসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা তাদের সাধ্যমতো মশক নিধনের ব্যাপারে কাজ করে থাকে।