দেখেও না দেখার ভান
লতিফ রানা
যুগের চিন্তা
প্রকাশিত : ০৯:২৭ পিএম, ৮ জুন ২০২২ বুধবার
# সিটি কর্পোরেশন ও পুলিশ প্রশাসনের সদিচ্ছার অভাব : আমির হুসাইন স্মিথ
# এলাকাটি দেখে যানজট নিরসনে ব্যবস্থা গ্রহণ করব : অতি.পুলিশ সুপার
নারায়ণগঞ্জ শহরের অন্যতম প্রধান সমস্যাগুলো নিয়ে আলোচনা করলে প্রথম সারিতেই উঠে আসে যানজটের কথা। যানজট এমন একটি সমস্যা যার প্রভাবে ব্যবসা-বাণিজ্য, শিক্ষা, চিকিৎসাসহ স্থবির হয়ে যায় মানুষের দৈনন্দিন কার্যক্রম। একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য যেন সমস্ত গতিই থেমে যায়। শিক্ষার্থীরা সময়মতো শিক্ষাকেন্দ্রে পৌছাতে পারে না। গুরুতর রোগী সময়মতো স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পৌছাতে না পেরে ঢলে পড়ছে মৃত্যুর মুখে কিংবা আরও শোচনীয় অবস্থার শিকার হচ্ছে। সম্ভব হচ্ছে না প্রয়োজনীয় স্থানে সময়মতো মালামাল সরবরাহ করা।
নিত্যদিনের যানজটের ভোগান্তিতে শহরবাসীর নাকাল অবস্থায় সিটি প্রশাসন, জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসনসহ জেলার সচেতন ব্যক্তিরা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন স্থানে সভা-সেমিনার, আলাপ-আলোচনা, তর্ক-বির্তকের আয়োজন করলেও এখনো যানজট কমার কোন লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। কারণ যানজট কোন একটি নির্দিষ্ট কারণে হয় না। তবে যানজটের এমন কিছু কারণ আছে যেগুলো একটু আন্তরিক ও বিচক্ষণতার মাধ্যমে অনেকটাই লাগব করা যায়। তেমনি একটি যানজট সিরাজউদ্দৌল্যা সড়কের কালীরবাজার এলাকার পুরান কোর্ট মোড় এলাকায়। সেই যানজটকে কেন্দ্র করে এর আশেপাশের গুরুত্বপূর্ণ স্থান গুলোতেও সৃষ্টি হয় যানজট।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কালীরবাজার এলাকায় সিরাজউদ্দৌল্যা সড়ক থেকে শায়েস্তাখান সড়কের মোড়ে রয়েছে হযরত মাওলানা হাফেজ শেখ সৈয়দ মো. আব্দুল্লাহ শাহ (রঃ) ও মো. আবেদ আলী শাহ (রঃ) এর মাজার শরীফ। মেট্রো সিনেমা হলের সামনে দিয়ে যেসব যানবাহন সিরাজউদ্দৌল্যা সড়কে প্রবেশ করছে সেগুলো এই মাজার শরীফের পশ্চিম পাশ দিয়ে চলাচল করছে। এইখান থেকে শহরের ১নং রেলগেট, শায়েস্তাখান সড়ক হয়ে বঙ্গবন্ধু সড়কে, চারারগোপ মোড় দিয়ে ৫ নং খেয়াঘাট এবং মেট্রো সিনেমা হলের দিকে যাচ্ছে। এই স্থান দিয়ে শহরের এতগুলো পয়েন্টের গাড়ি চলাচল করার কারণে এখানে সব সময়ই এখানে যানজট লেগে থাকে। অথচ মাজারের পূর্ব পাশ দিয়ে ঢালাই করা সড়কটি পড়ে আছে অকেজো হয়ে।
আর সেই সুযোগ নিয়ে মাজার বরাবরসহ অব্যবহৃত পুরো এলাকাটি দখল করে নিয়েছে হকারদের ভাসমান দোকান। কিছু প্রভাবশালী লোক আবার এর পাশে রেল লাইনের জায়গা দখল করে ছাবড়া দোকান গড়ে তুলে কারি কারি টাকা কামিয়ে নিচ্ছে। এখানকার সড়ক থেকে ভাসমান হকারদের উচ্ছেদ করতে না পারলে এই পয়েন্টটি উন্মুক্ত করে যানবাহন চলাচলের উপযুক্ত করতে না পারলে এখানকার যানজট সমস্যা দূর করা জটিল হয়ে পড়বে। এলাকাটি অবৈধ দখল হতে মুক্ত করে বন্ধন পরিবহন, উৎসব পরিবহনসহ বড় বড় গাড়িগুলো যদি এই জায়গাটি ব্যবহার করে চারারগোপে প্রবেশ করে তাহলে যানজট অনেকটাই লাগব হবে।
এই বিষয়ে কথা জানতে চাইলে ট্রাক ড্রাইভার রহমতউল্লাহ বলেন, মেট্রো হলের দিক থেকে যেসব গাড়ি এখানে এসে চারাগোপ এলাকা দিয়ে ৫নং ঘাটের দিকে চলে যায়, সেসব গাড়ি যদি মাজারের পশ্চিম পাশ দিয়ে না গিয়ে পূর্ব পাশদিয়ে যেত, তাহলে এখানকার যানজট অর্ধেকই কমে যেত। আর এখানকার যানজট কমে গেলে এর প্রভাব পড়তো এর আশে পাশের এলাকাগুলোতে। সিএনজি চালক আশরাফ বলেন, রাস্তার পূর্ব পাশের অর্ধেকই অবৈধ দখলে। এগুলো দেখার কেউ নেই। প্রশাসন যদি সত্যিকার অর্থেই কালীরবাজার এলাকার যানজট কমাতে চায় তাহলে মাজারের পূর্ব পাশের জায়গা গাড়ি চলাচলের উপযোগী করে তুলতে হবে। তিনি আরও জানান, সব গাড়ি পূর্ব পাশ দিয়ে যাওয়ার প্রয়োজন নাই। শুধুমাত্র চারার গোপের দিকে যে গাড়িগুলো যায় সেগুলোও যদি এই রাস্তাটি ব্যবহার করে তাহলেও এখানকার যানজট থাকবে না। তাই এখানকার ভাসমান হকারদের সরিয়ে দেওয়া খুবই জরুরী।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে নারায়ণগঞ্জ জেলা সাংবাদিক ইউনিয়ন এর সাধারণ সম্পাদক আমির হুসাইন স্মিথ বলেন, নারায়ণগঞ্জ শহরে অপরিকল্পিতভাবে যানবাহন চলাচল করতেছে। এর সাথে অসংখ্য ফুটপাত গ্রীনলেজ ব্যাংকের মোড় থেকে সেই মাজার পর্যন্ত এই সড়কটির দুইপাশ দখল করে আছে অসংখ্য ভাসমান হকার। কালীরবাজার এলাকার সেই সড়কটিও (সিরাজউদ্দৌল্যা সড়ক) কিন্তু তারা দখল করে নিয়েছে। তিনি বলেন, আইন যদি হয় তাহলে তা সবার জন্যই সমান। বঙ্গবন্ধু সড়কে হকার বসতে পারবে না কিন্তু সিরাজউদ্দৌল্যা সড়ক, শায়েস্তাখান সড়কে বসতে পারবে এটাতো হইতে পারে না। কোন সড়কেই হকার বসতে পারবে না, ইজিবাইক বা ব্যাটারি চালিত গাড়ি চলতে পারবে না। ইজিবাইক বা ব্যাটারি চালিত রিকশার চালকদের কিন্তু সিগন্যাল বা ট্রাফিক সম্পর্কে কোন ধারণা নেই। তিনি আরও জানান, কালীর বাজারের এই পয়েন্ট দিয়ে শহরের অন্যতম বিদ্যাপীঠ নারায়ণগঞ্জ কলেজ, নারায়ণগঞ্জ হাই স্কুলের শিক্ষার্থীরা যাতায়াত করে। এই একই পয়েন্ট দিয়ে নারায়ণগঞ্জের অন্যতম ব্যবসায়ী এলাকা টানবাজার, অন্যতম ব্যস্ত এলাকা লঞ্চ টার্মিনাল, বাস টার্মিনাল, রেল স্টেশন, নারায়ণগঞ্জের সবচেয়ে বড়র খেয়াঘাটের লোকজন যাতায়াত করে। এতেই বুঝা যায় এই সড়কের গুরুত্ব। কালীর বাজারও একটি অন্যতম ব্যবসায়ী এলাকা। এই হাজার হাজার মানুষের চলাচলের জায়গার প্রধান প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে হকার এবং এসকল যানবাহন। তাই সিটি কর্পোরেশন এবং পুলিশ প্রশাসন সবাইকেই দায়িত্ব নিয়ে এগুলো বন্ধ করতে হবে। গাড়ি চালকরাও নিয়ম কানুন মানছে না। এইসব কিছুর জন্য সরকার, সিটি কর্পোরেশন, পুলিশ প্রশাসনসহ কর্তৃপক্ষের সদিচ্ছার অভাব। আর তাদের সদিচ্ছা না হওয়া পর্যন্ত আমরা এসব সমস্যা হতে মুক্ত হতে পারবো না।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে ট্রাফিক বিভাগের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. জাহেদ পারভেজ চৌধুরী বলেন, এই এলাকাটি সম্পর্কে আমার বাস্তব কোন ধারণা নাই। আমি এলাকাটি দেখে যানজট নিরসনে ব্যবস্থা গ্রহণের চেষ্টা করব।এমই/জেসি