শহরে দ্বিগুণ মাত্রায় শব্দ দূষণ, দেখার কেউ নেই
যুগের চিন্তা রিপোর্ট
যুগের চিন্তা
প্রকাশিত : ০৭:০৭ পিএম, ১৮ জুন ২০২২ শনিবার
নারায়ণগঞ্জ থেকে আন্তজেলা কিংবা দূরপাল্লার বাস, নগরীর প্রতিটি স্থানেই শব্দ দূষণ যেন নিত্যদিনের। যানবাহন একটু দাড়ালেই, পুরো এলাকা জুড়েই হর্ন বাজিয়ে আশপাশের মানুষের কান ঝালাপালা। এছাড়া, পুরনো লক্কড়-ঝক্কর গাড়ির শব্দ তো আছেই। তবে শব্দ দূষণ নিয়ে নগরবাসী অভিযোগ এখন চূড়ান্তে। এমন তীব্র হর্ন আর শব্দ দূষণ ক্ষতি করছে পরিবেশের এবং মানুষের শ্রবণ ইন্দ্রিয়। নগরবাসীর মতে এমন শব্দদূষন থেকে মুক্তিপেতে দরকার সচেতনতা আর আইনশৃঙ্খলা বাহিনি কঠোর নজরদারিতা।
সরেজমিনে, শহরে বঙ্গবন্ধু সড়কে ২নং রেলগেইট এলাকার ১৬নং সোহরাওয়ার্দ্দী সড়কের শব্দ দূষণের সহনীয় মাত্রার চেয়ে প্রায় ‘দ্বিগুণ’ মাত্রার শব্দের তীব্রতায় বিপন্ন হয়ে পড়েছে। প্রতিদিন এই সড়কে বিভিন্ন যানবাহন যাতায়াত করে। কিন্তু বন্ধন পরিবহন, উৎসব পরিবহন, বন্ধু পরিবহন ও বিআরটিসি ডাবল ডেকার বাসসহ আন্তজেলা বাস গুলোর হর্ণ বাজিয়ে শব্দ দূষনের তীব্রতায়, অতিষ্ট আশপাশের বিভিন্ন অফিস ও ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান গুলো। এ যেনো হর্ণ বাজিয়ে শব্দ দূষণের প্রতিযোগীতা ন্যায়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শহরে ২নং রেলগেইট সংলগ্ন এলাকায় এক ব্যবসায়ী অভিযোগ করে বলেন, সকাল থেকে রাত পর্যন্ত এই সড়কে উৎসব, বন্ধনসহ বিভিন্ন গাড়ি চলে। পুরো রাস্তা আটকিয়ে এক গাড়ি আরেক গাড়ির আগে যাওয়ার জন্য প্রতিযোগীতা করে। এতে হর্ণ বাজানো শব্দে কান ঝালাপালা হয়ে যায়। কয়েকবার অভিযোগ করা হয়েছে কিন্তু চালকরা কারই তোয়াক্কা করে না।
শব্দ দূষণকে বলা হয় নীরব ঘাতক। আর বিশেষ করে শহরে শব্দ দূষণের বহু উৎস রয়েছে যা জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি। গাড়ির হর্ন, নির্মাণকাজ, মাইকের ব্যবহার, শিল্পকারখানা কোন ক্ষেত্রেই শব্দ দূষণ বিষয়ে যেসব নিয়ম রয়েছে তা মানা হচ্ছে না। বিধিমালা অনুযায়ী আবাসিক এলাকায় রাত ৯টা থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত শব্দের মাত্রা ৪৫ ডেসিবেল এবং দিনের অন্য সময়ে ৫৫ ডেসিবেল অতিক্রম করতে পারবে না। বাণিজ্যিক এলাকায় তা যথাক্রমে ৬০ ও ৭০ ডেসিবেল। হাসপাতাল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, অফিস-আদালতের আশপাশে ১০০ মিটার পর্যন্ত নীরব এলাকা হিসেবে ঘোষণা করা রয়েছে।
২নং রেলগেট ফজর আলী ট্রেড সেন্টারের প্রাইভেট কোম্পানীর কর্মরত এক ব্যাক্তি অভিযোগ করে বলেন, আমাদের অফিস টাইম সকাল থেকে। আমাদের অফিস টাইমে এই সড়কে চলাচলরত যানবাহন গুলো অতিমাত্রায় হর্ণ বাজায়। এতে আমাদের ব্যাপক সমস্যা হয়। আমরা কয়েকবার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে অভিযোগ করেছি। তারা কয়েকদিন তৎপর থাকলেও বর্তমানে তাদেরও তোয়াক্কা করে এই পরিবহন গুলো। অতিরিক্ত শব্দের কারণে শ্রবণ শক্তি কমে গেছে। অনেক কিছু শুনতে সমস্যা হয় আমাদের।
শব্দ দূষণে স্বাস্থ্যর উপর বিরূপ প্রভাব পরে। জানতে চাইলে নারায়ণগঞ্জ সিভিল সার্জন ডা. এ এফ এম মুশিউর রহমান বলেন, শব্দ দূষন এমন একটি দূষণ এটা আমাদের শরীরে শ্রবণশক্তি হ্রাসের পাশাপাশি মানুষের স্বাস্থ্য এবং আচার-আচরণ উভয় ক্ষেত্রেই সমস্যার সৃষ্টি করে থাকে। অপ্রয়োজনীয় ও অতিরিক্ত শব্দের কারণে ব্যক্তির শারীরিক ও মানসিক স্বাভাবিক কার্যকলাপ ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
অতএব আমাদের শব্দ দূষনের মাত্রা কমিয়ে এনে এটা একটা নিদ্রিষ্ট মাত্রার মধ্যে নিয়ে আসা জরুরী। এই ব্যাপারে আমাদের সচেতনতার অভাব আছে। বিভিন্ন সময় দেখা যায় রোগী নেই তবুও এ্যাম্বুলেন্স বাজায়, যেখানে প্রয়োজন নেই সেখানেও গাড়ি হর্ণ দিচ্ছে। ইদানিং সময়ে দেখা যায় উৎসব হলেই সাউন্ড বক্সসহ বিভিন্ন মাইক বানানো হয়। এটা যদি নিয়ন্ত্রণ না করা যায় তাহলে আমাদের অদূর ভবিষ্যতে আমাদের শিশুরা শ্রবণশক্তি হারাবে, গর্ভাবস্তায় নারীর প্রতিবন্ধী শিশু জন্ম নিতে পারে।
নারায়ণগঞ্জ পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল-মামুন বলেন, আমরা শব্দ দূষণ হ্রাস করতে প্রতিনিয়ত অভিযান করছি। তারপরও মানুষকে ও যানবাহন চালকদের সচেতন করছি। শব্দ দূষণ নিয়ন্ত্রণে আমরা আরও নতুন নতুন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করছি।এমই/জেসি