সোমবার   ২৫ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ১১ ১৪৩১   ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

নারায়ণগঞ্জ পাসপোর্ট অফিস দালালদের দখলে

লিমন দেওয়ান

যুগের চিন্তা

প্রকাশিত : ০৮:৫৫ পিএম, ১৯ জুলাই ২০২২ মঙ্গলবার

 

 

# কম্পিউটার-ফটোকপির দোকানেও দালালে সয়লাব

 

নারায়ণগঞ্জ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে দালালদের দৈরাত্ব্য বেরেই চলেছে। এই পার্সপোট অফিসে দালাল ছাড়া মেলে না কোনো পাসপোর্ট। সাধারণ পাসপোর্ট প্রত্যাশী মানুষ সরকারি নির্ধারিত চার্জ অনুযায়ী পাসপোর্ট করতে পারছে না। এতে ভোগান্তীতে রয়েছে সাধারণ পাসপোর্ট প্রত্যাশী মানুষ। এই দালালদের কারণে সরকারি নিয়ম ভেঙে তারা দালাল চক্রের মাধ্যমে পাসপোর্ট তৈরি করেছে। এতে সরকারি নির্ধারিত চার্জ এর থেকে বেশি চার্জ দিয়ে তারা পাসপোর্ট তৈরি করতে বাধ্য হচ্ছে।

 

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে সাধারণ মানুষ আসে নারায়ণগঞ্জ আঞ্চলিক এই অফিসে। সেবা নিতে আসা সাধারণ মানুষ পার্সপোর্ট করতে এসে সরাসরি অফিসে যোগাযোগ করলে তাদেরকে নানাভাবে হয়রানি করে বাধ্য কার হয় দালালদের স্মরণাপন্ন হতে। পাসপোর্ট অফিসের পূর্ব পাশ্বে পূর্ব শান্তিধারা রঘুনাথপুর এলাকায় ও পাসপোর্ট অফিসের পাশে রয়েছে বিভিন্ন কম্পিউটার, ফটোকপির দোকান রয়েছে। তারা এই সব দোকানগুলোতে পাসপোর্টের ফরম তৈরি করে থাকে শুরু করে পাসপোর্টের ফরম তৈরির পাশাপাশি আড়ালে তারা পুরো পাসপোর্ট তৈরির কন্ট্রাক্ট নিয়ে থাকে। তারা কম সময়ে এবং কম ভোগান্তির প্রলোভন দেখিয়ে অসদুপায় অবলম্বন করে পাসর্পোট তৈরি করতে উৎসাহী করে। এতে করে নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে তারা কয়েকগুন বেশি মূল্য পরিশোধ করে পাসপোর্ট তৈরি করে। দালালদের এই সব কার্যকলাপে ক্ষীপ্ত সাধারণ পাসপোর্ট প্রত্যাশী মানুষেরা।  সাধারণ মেয়াদে ব্যাংক জমা ৬৪ পৃষ্টা ১০ বছরে ৮ হাজার ৫০ টাকা আর জরুরী ১০ হাজার ৩৫০ টাকা। আর সাধারন মেয়াদ ব্যাংক জমা ৪৮ পৃষ্টা ১০ বছরের ৫ হাজার ৭৫০,আর জরুরী ৮ হাজার ৫০। সেখানে দালাদের দিতে হয় ৪৮ পৃষ্টার সাধারণ বইয়ের জন্য ১০ হাজার ও জরুরীর জন্য দিতে হয় ১২ হাজার টাকা। এ টাকা থেকে ব্যংক জমা দেওয়ার পর পাসপোর্ট অফিসের কর্মকর্তারা প্রতিটি বইয়ের প্রায় ১ হাজার টাকা, পুলিশ ভেরিফিকেশন প্রায় ১ হাজার দিতে হয়। এইগুলো দেওয়ার পর  যে টাকা থাকে বাকি টাকা সব দালালদের পকেটে।

 

এ বিষয়ে পাসপোর্ট করতে আসা সাইদুর নামের এক যুবক জানান, এই পাসপোর্ট অফিসে দালালদের সাথে যোগাযোগ করলেই অসম্ভব সব কিছু সম্ভব হয়ে যায়।  এ ছাড়া যেকোনো ঠিকানায় দালালনা করে দেয় পাসপোর্ট। আবেদনকারী দেশের যে কোন স্থানের মানুষ হলেই ভুয়া ঠিকানা ও জাল কাগজপত্র দিয়ে খুব সহজেই পাসপোর্ট বানাতে পারবেন দালালদের মাধ্যমে। এই গেইট এর আশেপাশে যে কোন বয়সের মানুষদের দেখলেই দালাল চক্রের লোকেরা জিজ্ঞাসা করে ভাই পাসপোর্ট করবেন। আমরা সাধারণ মানুষ অনেক ভোগান্তীর মধ্যে আছি এই পাসপোর্ট অফিসের কার্জকলাপ নিয়ে।
 

এ বিষয়ে আরেক ব্যাক্তি জানান, আমার ভাই আমার পরিবারের অনেকে পাসপোর্ট করেছি দালাল দিয়ে। আমি ও একজন দালালের মাধ্যমে পাসপোর্ট তৈরি করতে এসেছি। কারণ দালাল ছাড়া এই পাসপোর্ট অফিসে কেনো কাজ হয় না। দালাল ছাড়া এই টেবিল থেকে এই টেবিলে আমাদের দৌড়াঝাঁপ করতে হয়। এই কারণে আমরা দালালদের সাথে যোগাযোগ করে পাসপোর্ট তৈরি করতে বাধ্য থাকি। সরকারি নিয়ম থেকে একটু বেশি হলেও তারা কাজটা করলে আমাদের আর কোন ভোগান্তীতে পরতে হয় না। সব এই দালাল চক্রের লোকেরা দেখে। তাই আমরা সাধারণ মানুষ টাকা একটু বেশি দিয়ে হলে ও ভোগান্তী থেকে বাচঁতে দালাল চক্রের মাধ্যমে কাজ করতে বাধ্য হই।
 
 
এ বিষয়ে এক গোপন সূত্রে জানা যায়, দালালদের এই কর্মকাণ্ড মূলত পার্সপোর্ট অফিসের ভিতরের কর্মকর্তা কর্মচারী ও পুলিশ ভেরিফিকেশনের নিয়োজিত পুলিশদের সাথে তার যোগসাজশে এই কর্মকান্ড পরিচালনা করে থাকেন। পাসপোর্ট অফিসের এই দুর্নীতির মহা উৎসবে দালাল এবং ভিতরের কর্মকর্তারা সমানভাবে দায়ী। এতে ক্ষিপ্ত সাধারণ জনগণ।এমই/জেসি