দুর্ঘটনায় থামে, চাপে চালু
লিমন দেওয়ান
যুগের চিন্তা
প্রকাশিত : ০৬:৫৮ পিএম, ২২ জুলাই ২০২২ শুক্রবার
# আমরা হলাম হুকুমের গোলাম : বাবু লাল বৈদ্য
# ইঞ্জিনিয়ার সার্ভে করার পর অনুমতি দেওয়া হয়েছে : বাদল
নারায়ণগঞ্জ শীতলক্ষ্যা নদীতে ঝুঁকি নিয়ে চলছে ২৭টি সানকেন ডেক লঞ্চ। গত বছরের ৪ এপ্রিল সন্ধ্যার দিকে শীতলক্ষ্যা নদীর মদনগঞ্জ এলাকায় একটি কার্গো জাহাজের ধাক্কায় এমএল সাবিত আল-হাসান নামে একটি যাত্রীবাহী লঞ্চ ডুবির ঘটনা ঘটে। এই ঘটনায় ৩৪ জনের প্রাণহানি ঘটে। এর পর আবার এই বছরের গত ২০ মার্চ শীতলক্ষ্যা নদীর চর সৈয়দপুর আল আমিন নগর এলাকায় রূপসী-৯ নামের এক কার্গো জাহাজের ধাক্কায় এম এল আশরাফ উদ্দিন নামে একটি লঞ্চ ডুবে যায়। এই ঘটনায় ১১ জনের প্রাণহানি ঘটে।
প্রায় এরকম দূর্ঘটনা হওয়ার কারণে সেই সময় সানকেন ডেক লঞ্চগুলো ঝুঁকিপূর্ণ আখ্যা দিয়ে বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। লঞ্চগুলো মূলত সানকেন ডেক বিশিষ্ট ও আকারে ছোট হওয়ায় ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হয়। তবে এই ঘোষণার প্রায় এক মাস পরে তিন দফায় পাঁচটি রুটে ঝুঁকিপূর্ণ আখ্যা দেওয়া সানকেন ডেকের এই ২৭টি লঞ্চগুলোকে চলাচলের অনুমতি আবারও দেওয়া হয়।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় , নারায়ণগঞ্জ থেকে পাঁচটি রুটে মোট ৭০টি লঞ্চ চলাচল করে। রুটগুলো হলো নারায়ণগঞ্জ-চাঁদপুর, নারায়ণগঞ্জ-মুন্সীগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ-রামচন্দ্রপুর, নারায়ণগঞ্জ-নড়িয়া ও নারায়ণগঞ্জ-মতলব। এই পাঁচটি রুট দিয়ে দৈনিক প্রায় সাত থেকে আট হাজার যাত্রী চলাচল করতো। ২০ মার্চ দূর্ঘটনার পর থেকে লঞ্চ চলাচল বন্ধ করে দেওয়ায় যাত্রীরা চরম দুর্ভোগে পড়েন। ওই সময় রাজধানীর বিভিন্ন স্থান থেকে হাইডেকের চারটি লঞ্চ চালু করা হয়। কিন্তু কিছুদিন পর নারায়ণগঞ্জের বন্ধ থাকা লঞ্চগুলো আবারও চালু করায় যাত্রী সংকটসহ নানা কারণে ওই চারটি লঞ্চ অন্যত্র চলে যায়।
এ বিষয়ে চাঁদপুরের এক যাত্রী মিরাজ জানান, ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করে আর দুর্ঘটনার দৃশ্য আরও কেউ দেখতে চান না। কিন্তু যাত্রীদের কথা শোনার কেউ নেই। এ কারণে বাধ্য হয়ে ঝুঁকি নিয়ে ছোট লঞ্চে চলাচল করতে হচ্ছে। এখন আর আগের মতো লঞ্চ দিয়ে চলাচল করা হয় না। যদি বেশি জরুরী কাজ হয়। ওই সময়ে আমাদের এই লঞ্চ দিয়ে চলাচলে বাধ্য হতে হয়।
এ বিষয়ে বিআইডব্লিউটিএ’র নদী বন্দরের উপ পরিচালক (নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক) বাবু লাল বৈদ্য জানান, দুর্ঘটনার পর লঞ্চগুলো ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত হওয়ার পর এই রুটে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। আবার সরকারিভাবেই সেই লঞ্চগুলো চালু করার সিদ্ধান্ত করা হয়। তাই লঞ্চগুলো আবার রুটে চলছে। আবার কোন প্রকারের দুর্ঘটনা হলে সরকার এই সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করবে। আমরা আবার সেইভাবে সরকারের কথা অনুযায়ী কাজ করবো। আমরা হলাম হুকুমের গোলাম। আর যদি সরকার বন্ধ ও করে দেয় একদিনের মধ্যেতো নতুন নতুন লঞ্চ তৈরি করা সম্ভব না। জনসধারণের সুবিধার ক্ষেত্রে আমাদের অনেক কাজ করতে হয়। অনেক কিছুর পারমিশন দেওয়া যায় না। তারপরে ও আমরা দিয়ে দেই। জনগণের যাতে কোন প্রকারের দুর্ভোগ না হয়। সেই জন্যই সানকেন ডেক বিশিষ্ট লঞ্চ চলাচলের জন্য আবার সরকার বিবেচনা করছে। মন্ত্রী মহোদয় সিদ্ধান্ত দিয়েছে আবার তাদের আবার বলে দিয়েছে ২০২৩ সালের মধ্যে এই লঞ্চগুলো আপারডেক বিশিষ্ট লঞ্চ তৈরি করতে। দুর্ঘটনার পর থেকে এই রুটে যাত্রী চলাচল নাই বললেই চলে। যদি এইভাবে চলে তাহলেতো লঞ্চ মালিকরা এই লস প্রজেক্টে পয়সা খরচ করবে না। আর এই জন্যই তারা আপডেটের দিকে আগাতে পারছেন না। যদি ঘাটের চিত্র এমন থাকে তাহলে আর এই লঞ্চ ঘাট উন্নতির দিকে অগ্রসর হতে পারবে না।
এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ নৌ অঞ্চলের পুলিশ সুপার মাহমুদা মিনা জানান, নারায়ণগঞ্জ পাঁচটি রুটে যে ঝুঁকিপূর্ণ লঞ্চগুলো আবার চালু করা হয়েছে এই বিষয়ে আমরা শুনেছি। এই লঞ্চগুলো বিআইডব্লিউটিএ বন্ধ ঘোষণা করে ছিল তারাই আবার এই লঞ্চগুলো চালুর অনুমতি দিয়েছে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ নৌ-পরিবহন (যাত্রী) সংস্থা নারায়ণগঞ্জ জোনের সভাপতি বদিউজ্জামান বাদল জানান, ঝুঁকিপূর্ণ লঞ্চ টার্মিনালে চলাচল করতে পারে না। ইঞ্জিনিয়ার সার্ভে করার পর এই রুটে চলাচলের অনুমতি দেওয়া হয়েছে।এমই/জেসি