শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ৯ ১৪৩১   ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ওয়াকওয়ের কাজে ধীরগতি

লতিফ রানা

যুগের চিন্তা

প্রকাশিত : ০৮:২৭ পিএম, ১ আগস্ট ২০২২ সোমবার

নদীর তীরভূমির অবৈধ দখলরোধ, দখলমুক্ত, তীরবর্তী অংশের সৌন্দর্য বৃদ্ধি, পরিবেশগত উন্নয়নের লক্ষ্যে একটি প্রকল্প গ্রহণ করে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। এই প্রকল্পটি মূলত ঢাকাকে কেন্দ্র করে এবং ঢাকার নিকটবর্তী বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, শীতলক্ষ্যা ও বালু এই ৪টি নদীকে কেন্দ্র করে পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। 

 

অবৈধ দখল বন্ধ করতে তিন বছর আগে আলাদা একটি প্রকল্পের মাধ্যমে ৮৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে এই নদীগুলোর তীরভূমিতে পিলার স্থাপন, তীর রক্ষা, ওয়াকওয়ে ও জেটিসহ আনুষঙ্গিক অবকাঠামো নির্মাণসহ একটি প্রকল্প ২০১৮ সালে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদন দেয়া হয়। সেই প্রকল্পের আওতায় পার্ক, ইকোপার্ক, আরসিসি সিঁড়িসহ আরও ব্যাপক কর্মসূচী গ্রহণ করা হয়। 

 

৮৪৪ কোটি ৫৫ লাখ টাকার এই প্রকল্পটির মেয়াদ প্রথম অবস্থায় ২০১৮ সালের জুলাই হতে শুরু করে ২০২২ সালের জুনের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও পরবর্তীতে ২০২৩ সালের ৩১ জুন পর্যন্ত আরও এক বছর মেয়াদ বাড়ানো হয়। প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ার সাথে সাথে বেড়েছে নির্মাণ ব্যয়ও। ৩৩২ কোটি ৫৫ লাখ টাকা নির্মাণ খরচ বাড়িয়ে মোট ব্যয় এখন পর্যন্ত ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে ১ হাজার ১৮১ কোটি ৮২ লাখ টাকা। 

 

যার ফলে খরচ বাড়ছে ৩৯ দশমিক ২১ শতাংশ। এর মধ্যে নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যার তীরবর্তী সীমান্তে প্রায় ১৭ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ওয়াকওয়ে নির্মাণ করার কথা। কাজটির নির্মাণ প্রক্রিয়া সহজ করার জন্য এলাকাটি কয়েকটি প্রজেক্টে ভাগ করে দেওয়া হয়। এরই মধ্যে এই প্রকল্পের আওতায় নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যার নদীর তীরের ওয়াকওয়ে তৈরিসহ নদীর সীমানা নির্ধারণের স্বার্থে নদীর তীরবর্তী স্থানে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে অভিযান চালানো হয়। এরপর ওয়াকওয়ে নির্মাণকাজ শুরু করার পর এখন হাজীগঞ্জ ফেরিঘাটের উত্তরাংশ নাসিক ১০নং ওয়ার্ড এলাকা এবং শহরের নিতাইগঞ্জ থেকে গোগনগর ইউনিয়ন এলাকার কিছুটা অংশের দৃশ্যমান হলেও স্থবির হয়ে আছে প্রকল্পের অন্যান্য প্রজেক্টের কাজ।

 

এই বিষয়ে স্থানীয়দের অভিযোগ, বিআইডব্লিউটিএ তাদের নির্মাণ কাজ খুবই ধীরগতিতে করছে। এর ফলে দফায় দফায় তাদের কাজের মেয়াদ বাড়ানো হয়। সেই সাথে বেড়ে যায় নির্মাণ ব্যয়। তবে বিআইডব্লিউটিএ কর্মকর্তাদের সাথে আলাপ করলে তারা জানান, করোনা মহামারীর জন্য কাজের অগ্রগতি অনেকটা-ই স্থবির হয়ে পড়ে। এছাড়াও নদীর তীরবর্তী জমির সীমানা নির্ধারণ নিয়ে অনেক জটিলতার মধ্যে পড়তে হয়। নদীর তীরবর্তী অনেক প্রতিষ্ঠান আছে যেখানে কাজ করতে গিয়ে সীমানা নিয়ে তাদের সাথে অনেক মতের পার্থক্য থাকায় অনেক আইনগত জটিলতারও সৃষ্টি হয়। 

 

এসব নানা কারণেই কাজ আশানুরূপ এগুচ্ছে না। এরই মধ্যে বর্ষাকালে হঠাৎ বৃষ্টির মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় নদীর পানির বৃদ্ধির কারণেও ওয়াকওয়ে নির্মাণ কাজে অনেকটা ব্যাঘাত ঘটে। তারা আরও জানান, নদীকে দখল ও দূষণের ক্ষেত্রে দীর্ঘদিন ধরে একটি চক্র কাজ করছে। দীর্ঘদিন যাবত তারা নদীর তীরবর্তী সীমানাসহ অনেক পিলারও দখল করে রেখেছিল যা উদ্ধারের জন্য এখন বিআইডব্লিউটিএ এখন কাজ করছে। এর ফলে নদীটি কিছুটা হলেও তার পূর্বের জায়গায় পূর্বের রূপে ফিরে যাবে বলেও মনে করেন বলে তারা জানান।


 
এই বিষয়ে তথ্য নেওয়ার জন্য যোগাযোগ করলে বিআইডব্লিউটিএ এর প্রকৌশলী দেবজয়তী বড়ুয়া বলেন, প্রকল্পটি নদীর তীরবর্তী হওয়ায় সীমানা নিয়ে অনেক বাধা বিপত্তি আসে। সেসব অতিক্রম করে কাজটি সম্পন্ন করতে হয়, তাই কাজের ধীরগতি হতে পারে। তবে উনাদের নির্ধারিত প্রজেক্ট সীমানার দক্ষিণাংশের নিতাইগঞ্জ থেকে মুন্সিগঞ্জের প্রিমিয়ার সিমেন্ট কারখানা পর্যন্ত প্রায় দেড় কিলোমিটার জায়গার কাজ প্রায় ৫০ শতাংশ সমাপ্ত হয়েছে। বাকী কাজ আগামী বছরের জুন মাস অর্থাৎ প্রকল্পের নির্ধারিত শেষ সময়ের মধ্যে শেষ করতে পারবেন আশা প্রকাশ করেন তিনি।

 

এখানকার ওয়াকওয়ের সার্বিক কাজের সর্বশেষ পরিস্থিতি সম্পর্কে জানার জন্য প্রকল্প পরিচালক আবু জাফর মোহাম্মদ শাহনেওয়াজ কবির এর মুঠো ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। অন্যদিকে বিষয়টির খোঁজ খবর নেওয়ার জন্য বিআইডব্লিউটিএ নারায়ণগঞ্জ নদী বন্দরের যুগ্ম পরিচালক শেখ মাসুদ কামালের সাথে যোগাযোগ করার জন্য তার অফিসে গেলেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে কল রিসিভ করেননি তিনি।এসএম/জেসি