সোমবার   ২৫ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ১১ ১৪৩১   ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

সোনারগাঁয়ে জন্ম নিবন্ধন বিড়ম্বনা, তথ্যসেবার নামে চলছে হয়রানী

আশরাফুল আলম

যুগের চিন্তা

প্রকাশিত : ০৮:০৮ পিএম, ১৪ আগস্ট ২০২২ রোববার

 

বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষে ইউএনডিপির আর্থিক ও কারিগরি সহায়তায় ২০১০ সালের ১১ নভেম্বর দেশের প্রতিটি জেলায় ইউনিয়ন পর্যায়ে তথ্যসেবা কার্যক্রমের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়। আধুনিক তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহারে উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় “ তথ্যই শক্তি স্লোগান দিয়ে দেশের প্রতিটি ইউনিয়নে তথ্যসেবা কার্যক্রম চালু করা হয়।

 

এরপর এগারো বছরেরও বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলায় যথাযথ ভাবে কাজে আসছেনা ইউনিয়ন তথ্য সেবা কেন্দ্র। সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী, উদ্যোক্তারা সেবা কেন্দ্রের মাধ্যমে তথ্যসেবা দিয়ে আয় করবেন, সরকার তাদের কোনো ধরনের বেতন-ভাতা দেবে না।

 

যার ফলে উদ্যোক্তাদের অতিরিক্ত অর্থ আদায় বানিজ্যের কারনে সোনারগাঁয়ে ইউনিয়ন তথ্য সেবা কেন্দ্রগুলোতে সেবা নিতে এসে জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধনসহ অন্যান্য সেবা বিড়ম্বনায় প্রতিদিন হয়রানী ও চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছে সাধারন মানুষ। বিশেষ করে উপজেলার পিরোজপুর ইউনিয়নের সেবা গ্রহিতাদের অভিযোগ জন্ম নিবন্ধন সংগ্রহ করতে এসে পিরোজপুর ইউনিয়ন পরিষদের উদ্যোক্তা আব্দুল গনির অতিরিক্ত অর্থ আদায় বানিজ্যে ও চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন সাধারন মানুষ।

 

সারা দেশের ন্যায় সোনারগাঁ উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়ন পরিষদে সচিবের ব্যক্তিগত সহকারী হিসেবে একজন নারী ও একজন পুরুষ উদ্যোক্তা কাজ করছেন। এছাড়া সরকারের উদ্যোগে প্রতিটি কেন্দ্রে ক¤িপউটার, ল্যাপটপ, প্রিন্টার, মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টর, ডিজিটাল ক্যামেরা, ওয়েবক্যাম, ইন্টারনেট মডেম এবং কোথাও কোথাও সোলার প্যানেল সরবরাহ করা হয়েছে।

 

অভিযোগ রয়েছে, সরকার কর্তৃক সরবরাহ করা এসব সরঞ্জাম তথ্যসেবা কেন্দ্রে যথাযথ ব্যবহারের অভাবে বিকল হয়ে পড়ে আছে। সোনারগাঁ উপজেলার ১০ টি ইউনিয়নের তথ্যসেবা কেন্দ্রের যে ৪/৫ টি কেন্দ্র (ইউআইএসসি) চালু রয়েছে সে কেন্দ্রগুলোও দু-চারটি সেবার মধ্যে আটকা পড়ে আছে। কম্পিউটার ব্যবহারে অদক্ষতা, সচেতনতা, প্রচারনার অভাবে তথ্য সেবা কেন্দ্রগুলো কোন কাজে আসছেনা সাধারন মানুষের।


সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষে ইউএনডিপির আর্থিক ও কারিগরি সহায়তায় এ প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। একেবারে প্রত্যন্ত অঞ্চলের কৃষক পর্যায় থেকে শুরু করে গ্রামের সাধারন মানুষ যাতে কম খরচে, কম সময়ে দেশ বিদেশে টেলিযোগাযোগ, ইন্টারনেট সুবিধা, কম্পিউটার কম্পোজ ও প্রিন্ট, ছবি তোলা ও স্ক্যানিং, কৃষি, স্বাস্থ্য সেবা, শিক্ষা, অনলাইনে চাকুরীর তথ্য ও আবেদন, বিদ্যুৎতের বিল পরিশোধ, অনলাইনে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি, অনলাইনে জমির পর্চার আবেদন, সরকারি ফরম পূরন, জীবন বীমা সুবিধা, মোবাইল ব্যাংকিং, আইন ও মানবাধিকারসহ যেকোন সেবা সহজে পেতে পারে সে লক্ষে এ প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়।

 

সোনারগাঁ উপজেলার ৫টি ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে এসব কেন্দ্রে অল্প খরচে ইন্টারনেট সুবিধা, কম্পিউটার কম্পোজ, ফটোস্ট্যাট, ছবি তোলা ও স্ক্যানিংয়ের সুবিধা পাওয়ার কথা থাকলেও অল্প খরচের পরিবর্তে সেবা কর্তৃপক্ষের মনগড়া মত টাকা নেওয়া হচ্ছে। তথ্য সেবা কেন্দ্রের সেবার মূল্য নির্ধারন ও মনিটরিংয়ের জন্য কমিটি থাকলেও তা নামের মাঝেই সীমাবদ্ধ রয়েছে।

 

আজও সেবার মূল্য তালিকা দেওয়া হয়নি কোন সেবা কেন্দ্রে। উপজেলার বেশ কয়েকটি ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে গিয়ে দেখা গেছে তথ্য সেবা কেন্দ্রের জন্য নিজস্ব কোন ভবন না থাকায় পরিষদের ছোট্ট একটি অফিস কক্ষে তথ্য সেবা কেন্দ্রটি চালাতে হচ্ছে। এসেবা কেন্দ্রে নিয়োজিত একজন উদ্যোক্তা জানান, এ তথ্য সেবা কেন্দ্র থেকে কম্পিউটার কম্পোজ এবং অনলাইনে কাজ করা হচ্ছে। কিন্তু কালার প্রিন্টার নষ্ট হওয়ার কারনে ডিজিটাল ক্যামেরাটি অলস পড়ে আছে।

 

নেই ফটোস্ট্যাট মেশিন। শুরু থেকে তথ্য সেবা কেন্দ্রগুলো অনেকটা সচল থাকলেও সম্প্রতি বন্ধ হয়ে গেছে কয়েকটি। আবার কোন কোন পরিষদের নিজস্ব ভবন না থাকায় স্থানান্তর করে অন্যত্র সড়িয়ে নিয়েছে তথ্য সেবা কেন্দ্র। সে জন্য অনেকেই ইউনিয়ন পরিষদে এসে সেবার নামে ভোগান্তির শিকার হচ্ছে। অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া সেবা কেন্দ্রে নিজেদের ইচ্ছেমত সাধারন মানুষের কাছ থেকে বিভিন্ন কৌশলে সেবার নামে টাকা আদায় করছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

 

তাছাড়া তথ্য সেবা কেন্দ্র গুলিতে বিদ্যুৎ এর বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় ভোগান্তি আরো বেড়েছে। তবে একাধিক সূত্রে জানা গেছে, এসব তথ্য সেবা কেন্দ্র থেকে সঠিক কোন সেবা পাচ্ছেনা গ্রামের সাধারন মানুষ। তথ্য সেবা কেন্দ্র থেকে সাধারন মানুষ সঠিক কোন সেবা না পেলেও স্থানীয় সরকার বিভাগ ও ইউএনডিপির অর্থায়নে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের একসেস টু ইনফরমেশন (এটুআই) প্রোগ্রামের যৌথ উদ্যোগে এসব কেন্দ্র চালু রয়েছে।এসএম/জেসি