সোমবার   ২৫ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ১১ ১৪৩১   ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

লিংক রোডের প্রশস্তকরণ কাজে উদাসীনতা

লতিফ রানা

যুগের চিন্তা

প্রকাশিত : ০২:৪৯ পিএম, ১৮ আগস্ট ২০২২ বৃহস্পতিবার


 # কাজের ধীরগতি, জনসাধারণের নিরপত্তার বিষয়টি উপেক্ষিত

# প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ার সাথে সাথে ভোগান্তিও বাড়ল

 

শিল্প ও বাণিজ্যে সমৃদ্ধ নারায়ণগঞ্জ শহরের কদর শত শত বছর ধরে। শহরটি রাজধানী ঢাকার নিকটবর্তী হওয়ায় এর গুরুত্ব আরও ব্যাপকভাবে বেড়ে গেছে। নারায়ণগঞ্জের সাথে ঢাকার এবং ঢাকা-চিটাগাং রোডের সাথে নারায়ণগঞ্জের সংযোগ সড়ক হিসেবে তিনটি সংযোগ সড়ক ব্যবহার করা হয়। চাষাঢ়া-ফতুল্লা-পাগলা হয়ে যাত্রাবাড়ি, চাষাঢ়া-সাইনবোর্ড ও চাষাঢ়া-আদমজী হয়ে চিটাগাং রোড। 

 


তবে চাষাঢ়া হতে সাইনবোর্ড সড়কটি যেটি সংযোগ সড়ক বা লিংক রোড হিসেবে পরিচিত, তা ব্যাপক হারে ব্যবহারের কারণে খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এই সড়কটি যখন নানাবিধ সমস্যায় জর্জরিত হয়ে যানবাহন চলাচলের অনুপযোগী হয়ে উঠে তখন তা প্রশস্তসহ মেরামতের দাবী উঠে। দীর্ঘদিনের এই দাবিকে গুরুত্ব দিয়ে সরকার এই সড়কটি শুধু প্রশস্তকরণই নয়, বেশকিছু সুবিধা জুড়িয়ে দিয়ে ৪৪৯ কোটি ৫৮ লাখ টাকার একটি প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া হয়। 

 


জনগণের সুবিধার্থে করা এই প্রকল্পের কাজে কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় জনমনে ক্ষোভে সৃষ্টি হচ্ছে। বিশেষ করে কাজের ধীরগতিসহ জনসাধারণের নিরপত্তার বিষয়টি উপেক্ষিত হওয়ায় বিশেষ করে সন্ধ্যার পর সড়কটি মৃত্যু ফাঁদে পরিণত হয় বলে গাড়ি চালক ও যাত্রীদের অভিযোগ। তাদের মতে প্রকল্পটির কাজে সুষ্ঠু পরিকল্পনার অভাবে সড়কে মাঝখানে আচমকা মোড়ের সৃষ্টি হয়েছে, যা ইচ্ছে করলেই এড়ানো যেত। 

 


অন্যদিকে এসব আচমকা মোড়ে সতর্কতামূলক কোন নোটিশ বোর্ড বা সাইনবোর্ড স্থাপন করা হয়নি। সন্ধ্যার পরই সড়কটির এসব বিপদজনক এলাকায় নেমে আসে গুটগুটে অন্ধকার। সেখানে যানবাহনের হেড লাইটের প্রতিফলনের জন্য কোন রেডিয়াস লাইট বা রিফ্লেকশন লাইটও ব্যবহার করা হয়নি। ফলে এখানে প্রায়ই রাতের বেলা দুর্ঘটনার সংবাদ পাওয়া যায়। 

 


অথচ এ সড়কের আশপাশে রয়েছে বিভিন্ন সরকারী বে-সরকারী অফিস, আদালত। নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসন, জেলা পুলিশ সুপার, জেলা সিভিল সার্জনের কার্যালয়, নারায়ণগঞ্জ গণপূর্ত বিভাগ, জেলা ও দায়রা জজ আদালত, জেলা পরিষদ, এলজিইডির কার্যালয়, জেলা কারাগার, জেলা নির্বাচন অফিস, পাসপোর্ট অফিস ও শিল্প পুলিশ-৪’র পুলিশ লাইনসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। তাই এ সড়কটি অত্যন্ত ব্যস্ততম ও গুরুত্বপূর্ণ সড়কে পরিণত হয়েছে।

 


প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, ২০১৯ সালের ৮ জুলাই এই সড়কটি ছয় লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্পের প্রস্তাব পরবর্তী প্রকল্প মূল্যায়ণ কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির সভায় উপস্থাপন করা হলে প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়। দুই লেনের এই সড়কটির তখনকার প্রশস্ততা ছিল প্রায় ৫০ ফুট। নতুন প্রকল্প বাস্তাবায়নে ৪৪৯ কোটি ৫৮ লাখ টাকা ব্যয়ে সড়কটি ১২৯ ফুট প্রশস্ত হবে। 

 


শিবু মার্কেট, জালকুড়ি ও ভুঁইগড় এই তিনটি পয়েন্টে হবে আন্ডারপাস এবং সাইনবোর্ড ও জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনের দুটি পয়েন্টে হবে ফুট ওভারব্রিজ। কাজটি সম্পন্ন করার জন্য ১৭ মাস সময় বেধে দিয়ে ২০২২ সালের জুন মাসের মধ্যে প্রকল্প বাস্তবায়নের মেয়াদ নির্ধারণ করা হলেও কাজের ধীর গতির কারণে প্রকল্পের মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়। এর ফলে বেড়ে যায় যানজটের ভোগান্তির মেয়াদও।

 


সরেজমিনে দেখা যায়, সড়কের দুই পাশের কালভার্ট তৈরির কাজ চলছে। এর ফলে দৃশ্যমান হচ্ছে সড়কের প্রশস্ততা। অন্যদিকে সড়কের বিভিন্ন জায়গায় ভরাট মাটির মাধ্যমে কার্পেটিংয়ের জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে। কিছু কিছু জায়গায় চলছে কার্পেটিংয়ের ঢালাই। তবে সবচেয়ে দুশ্চিন্তার বিষয়, এতবড় একটি পকল্পে যেখানে রাস্তার বিভিন্ন জায়গায় ডান থেকে বামে আবার বাম থেকে ডানে আচমকা মোড় নিয়েছে সেসব জায়গায় নেই কোন নিরাপত্তামূলক সতর্কতার চিহ্ন। 

 


স্থানীয়রা জানান, এসব বিপদজনক মোড়ের এলাকায় রাতের বেলা একেবারে অন্ধকারে ঢাকা থাকে। ফলে এখানে অহরহ ঘটছে দুর্ঘটনা। এ সড়ক দিয়ে চলাফেরা করে এমন ধরণের স্বাভাবিক গতিতে আসা কোন গাড়িও এখানে এসে হঠাৎ করে গোলক ধাধায় পড়তে হয়। কিন্তু যারা এখান দিয়ে চলে অভস্ত্য নয় এমন চালকদের প্রায়ই দেখা যায় রাস্তার মাঝে থাকা ভাঙ্গা রাস্তার বড় বড় স্লাবের উপরে উঠে যেতে। 

 


এরই মধ্যে অনেকে এসব জায়গায় দুর্ঘটনার শিকার হয়েছেন বলে জানান, গাড়ী চালকেরা। ট্রাক ড্রাইভার আশিক জানান, ‌‌‘আমরা দিনের বেলায় গাড়ি চালালেও সাধারণত রাতের বেলায়ই গাড়ি বেশি চালাই। এসব আচমকা মোড়ে এসে আমাদেরও হতচকিত হয়ে যেতে হয়। প্রায় রাতেই দেখি এখানে গাড়ি ফেঁসে গেছে।’
 


জোয়াদুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তি জানান, ‘গত সোমবার রাত আনুমানিক ১২টার দিকে আমি আমার জীপ গাড়ি চালিয়ে সাইনবোর্ড থেকে নারায়ণগঞ্জ আসছিলাম। যখন আমি কতুবপুরের ভূইগড় এলাকার রঘুনাথপুর সোনালী মার্কেটের মোড় এলাকায় আসি, তখন হঠাৎ করে কিছু বুঝার আগেই আমার ঢাকা-মেট্রো-গ-১১- ৪৭৩৫ নাম্বারের গাড়িটি পাথরের (ভাঙ্গা রাস্তার ঢালাইয়ের টুকরো) উপর উঠে যায়। আমি মারাত্মক চোট পেয়ে গাড়িটি সেখানে রেখেই চলে আসি।’

 


তিনি আরও জানান, ‘এমন বড় একটি প্রকল্পের  কাজে এমন বিপদজনক জায়গায় কোন প্রকার আলো নেই; নেই কোন সতর্কতামূলক চিহ্ন। ধুলোময় এই রাস্তায় হেডলাইটের আলোও বেশি দূর পর্যন্ত যায় না। রাতের বেলা এমনিতেই রাস্তায় গাড়ির সংখ্যা কম হওয়ায় গতি একটু বেশি থাকে। আমার গাড়ির সে রকম গতি থাকলে আমার আরও বড় ধরণের কিছু হয়ে যেত। ভাগ্য ভাল যে আমার গাড়ির গতি ছিল সামান্য, তাই অল্প ইনজুরিতেই বেঁচে গেছি। কিন্তু আমার গাড়ির অবস্থা খুবই খারাপ।’ এন.এইচ/জেসি