সোমবার   ২৫ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ১১ ১৪৩১   ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মাছের বাজারে আগুন, গরীবের  মাথায় হাত

নুরুন নাহার নিরু

যুগের চিন্তা

প্রকাশিত : ০৮:৫২ পিএম, ১৯ আগস্ট ২০২২ শুক্রবার


 # কম আয়ের মানুষ খাবে কি?

 

বাঙালী জাতির সাথে মাছ এর একটি শখ্যতা ছিল। তাই এক সময় মাছে-ভাতে বাঙালি বলে একটি প্রবাদের বেশ প্রচলন ছিল। এমন একটা সময় ছিল যখন ভাতের সাথে মাছ থাকবে না এই কথাটি যেন ভাবা-ই যেত না। আর এই মাছের অন্যতম উৎস হিসেবে ব্যবহৃত হতো খাল বিল, নদী-নালা, পুকুরসহ বিভিন্ন জলদ্বারা।

 

কিন্তু সভ্যতার অগ্রতির সাথে সাথে শিল্প ও বাণিজ্যের প্রসারের সাথে তাল মিলিয়ে যান্ত্রিক যুগের শুচনায় এসব মাছের উৎসগুলো বিলীন হতে শুরু করায় এবং আধুনিক কলকারখানার কেমিক্যাল বর্জ্যে নদী নালাগুলোর পানি বিষাক্ত হওয়ার কারণে সেখান থেকেও মাছ আহরণ করা সম্ভব হচ্ছে না।

 

একদিকে যখন জনসংখ্যার বৃদ্ধি পাচ্ছে, অন্যদিকে কমে যাচ্ছে মাছের উৎস। তাই মাছের দরদামও হয়ে যাচ্ছে আকাশ ছোঁয়া। ফলে নিম্ন আয়ের মানুষের পক্ষে এমন বেশি দামে মাছ ক্রয় করা ধীরে ধীরে যখন অসম্ভব হয়ে পড়তে শুরু করে তখনই গরীবের মাছ হিসেবে পরিচিতি লাভ করে বেশ কয়েক প্রজাতির চাষের মাছ।

 

এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো তেলাপিয়া, পাঙ্গাস, থাইল্যান্ডের মাগুর, পোয়া, সুরমাসহ আরো কয়েক প্রজাতির মাছ। তবে এদের মধ্যে আবার চাষ করা পাঙ্গাস ও তেলাপিয়া মাছ সাধারণ মানুষের নাগালের মধ্যে থাকায় নিম্ন আয়ের মানুষের কাছে খুবই জনপ্রিয় হয়ে উঠে। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলেও সত্য এই দুই প্রজাতির মাছের মূল্যও এখন তাদের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে বলে নিম্ন আয়ের মানুষের আভিযোগ।


 
এমনিতেই নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যের লাগাম টেনে ধরা যাচ্ছে না। চাল, তেল, সবজি থেকে শুরু করে  সকল কিছুর দাম বেড়েই চলেছে। মাছের বাজারগুলো ঘুরে এর মূল্যের যে চিত্র পাওয়া যায় তাতে বলা চলে সাধারণ বা নিম্ন আয়ের মানুষকে তাদের দৈনন্দিন খাবারের তালিকা থেকে মাছের নাম বাদ দিতে হবে। বর্তমানে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দামের উর্ধ্বগতির সাথে লাগামহীন হয়ে পড়ছে মাছের বাজার। এমন অবস্থায় স্বল্প আয়ের মানুষের কপালে পড়েছে চিন্তার ভাজ।


 
নারায়ণগঞ্জে দিগুবাবুর বাজার ঘুরে দেখা যায়, পাঙ্গাস মাছ আকার ভেদে বিক্রি হচ্ছে ১৬০ টাকা থেকে ২০০ টাকা কেজিতে। যা গত কিছুদিন আগেও ছিল ১১০টাকা থেকে ১৩০টাকা। অন্যদিকে তেলাপিয়া মাছ বিক্রি হচ্ছে ২২০ টাকা কেজিতে। যা আগে বিক্রি হতো ১৬০ থেকে ১৮০ টাকায়।


 
বাজারে মাছ কিনতে আসা শহীদুল্লাহ বলেন, ‘সব কিছুর দাম বাড়ার কারনে আমাদের ব্যয় বেড়েছে, সে অনুযায়ী কিন্তু আয় বাড়েনি। যার ফলে আমাদের সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। আগে কিছুটা কম দামের মাছ হিসেবে তেলাপিয়া ও পাঙ্গাস মাছ দিয়ে চাহিদা মিটিয়েছি। কিন্তু এখন বাজারে এসে দেখি সেই মাছও নাগালের বাহিরে। এভাবে সকল কিছুর দাম বাড়তে থাকলে মানুষ খাবেটা কি?’

 

গার্মেন্টস কর্মী রহিমা বেগম বলেন, ‘আগে পাঙ্গাস ও তেলাপিয়ার দাম কিছুটা কম থাকায় সেই মাছটা কিনতে পারতাম। কিন্তু এখন সব মাছই আমাদের সাধ্যের বাহিরে। যেই মাছ আগে বাজারে বিক্রি হতো ১০০ টাকায় সেই মাছ এখন ১৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।’


 
গৃহিনী রিনা বেগম বলেন, ‘আগে ফার্মের মুরগী দিয়ে মাংসের চাহিদা পূরণ করেছি। সেটার দামও বেড়েছে, এখন বাজারে মাছ কিনতে এসে দেখি মাছের দামও আকাশ ছোঁয়া। ছেলেমেয়েদের আর কতো-ই-বা শাকসবজি খাওয়াবো। আমার স্বামী একজন অটে-রিকশা চালক। পাঁচ সদস্যের সংসার চালাতে তাকে হিমশিম খেতে হয়।


 
মাছের এই আকস্মিক মূল্য বৃদ্ধির কারণ জানতে চাইলে মাছ বিক্রেতা আমিনুল ইসলাম বলেন, জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির কারণে পরিবহন ভাড়া বেড়েছে। এরফলে মাছ চাষের সকল উপাদানের মূল্যই বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই মাছ চাষীদের কাছ থেকে আমাদের বেশি মূল্যে মাছ কিনতে হয়। অন্যদিকে সেই মাছ বাজারে নিয়ে আসতেও আমাদের বেশি টাকা খরচ করতে হয়। তাই বাধ্য হয়েই আমাদের বোশি মূল্যে মাছ বিক্রি করতে হচ্ছে। তা নাহলে আমাদের মাছ কিনার টাকা-ই উঠবে না।এসএম/ জেসি