শুক্রবার   ১৮ অক্টোবর ২০২৪   কার্তিক ৩ ১৪৩১   ১৪ রবিউস সানি ১৪৪৬

গ্রেফতার হয়ে ফিরলেন জাকির খান

যুগের চিন্তা রিপোর্ট

যুগের চিন্তা

প্রকাশিত : ১১:৫২ পিএম, ৪ সেপ্টেম্বর ২০২২ রোববার


# দীর্ঘ ২১ বছর পলাতক থাকার পর বসুন্ধরা এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার

# বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুলসহ জেলা বিএনপির নিন্দা


একসময় নারায়ণগঞ্জ শহরে তো বটেই গোটা দেশে পলিটিক্যাল হিরো হিসেবে অভিষেক হয়েছিল জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি জাকির খানের। খুন, অপরাধ আর দোর্দণ্ড প্রতাপের কারণে নারায়ণগঞ্জে রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক আলোচিত নাম ছিল এই জাকির খান।

 

 

তবে খুনের মামলায় আসামি হয়ে দীর্ঘ ২১ বছর লাপাত্তা ছিলেন জাকির খান। এমনকি তার বর্তমান ছবি নিয়েও ছিল নানা মতভেদ। অবশেষে জাকির খান ফিরলেন, তবে গ্রেফতার হয়ে।  নারায়ণগঞ্জের কুখ্যাত সন্ত্রাসী ও জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি জাকির খানকে বিদেশী পিস্তলসহ গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব-১১।

 

 

শনিবার (৩ সেপ্টেম্বর) ভোরে রাজধানীর ভাটারা থানার বসুন্ধরা এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তারের পর এ তথ্য নিশ্চিত করেছে র‌্যাব-১১-এর অধিনায়ক তানভীর মাহমুদ পাশা। তবে বিএনপির নেতাকর্মীদের কাছে ব্যাপক জনপ্রিয় জাকির খান। র‌্যাব-১১’র অধিনায়ক তানভীর মাহমুদ পাশা জানান, তিনি জানান, জাকিরের নামে বেশ কয়েকটি মামলা রয়েছে।

 

 

তিনি দীর্ঘদিন ধরে বিদেশে পলাতক ছিলেন। সম্প্রতি দেশে ফিরে আত্মগোপন করেন। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে তাকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব।  জাকির খান ইন্টারপোলের রেড নোটিশপ্রাপ্ত বলে কিছু সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তবে ইন্টারপোলের সাইটে রেড নোটিশের তালিকায় যে ৬২ জন বাংলাদেশি আছেন, তাদের মধ্যে নেই জাকির খানের নাম।

 


এ বিষয়ে র‌্যাব কর্মকর্তা তানভীর জানান, তারাও সংবাদমাধ্যমের কাছ থেকে জাকির খান ইন্টারপোলের রেড নোটিশে আছেন বলে শুনেছেন। এ বিষয়ে তদন্ত করে প্রকৃত তথ্য পাওয়া যাবে। তিনি বলেন, একসময়কার শীর্ষ সন্ত্রাসী, একচ্ছত্র, ক্ষমতার অধিকারী আন্ডার ওয়ার্ল্ড এর গডফাদার এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যপক আলোচিত নাম জাকির খান।

 

 

যার নামে ৪টি হত্যাসহ অসংখ্য মামলা রয়েছে এবং বিভিন্ন সময়ে তিনি এসকল মামলায় জেল খাটেন। জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর তিনি আরও দুর্ধর্ষ হয়ে ওঠেন। এসময় তিনি নারায়ণগঞ্জ এর দেওভোগ এলাকায় বিশাল সন্ত্রাসী বাহিনী ও মাদকের সম্রাজ্য গড়ে তোলেন। এক পর্যায়ে দেওভোগ এলাকার অপর শীর্ষ সন্ত্রাসী দয়াল মাসুদকে শহরের সোনার বাংলা মার্কেটের পিছনে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করে শহরের ত্রাস হিসেবে পরিচিত হয়ে ওঠেন।

 

 

সর্বশেষ ২০০৩ সালে সাব্বির আলম হত্যাকাণ্ডের পরে তিনি দেশ ছেড়ে থাইল্যান্ডে পাড়ি জমান। এ সময়ে বিভিন্ন মামলায় বিজ্ঞ আদালতে জাকির খান দোষী সাব্যস্থ হলে বিজ্ঞ আদালত তাকে সাজা প্রদান করেন। এর পর থেকেই গ্রেফতার এড়াতে জাকির খান দেশের বাইরে অবস্থান করছিলেন।

 

 

তাকে জিজ্ঞাসাবাদে আরো জানা যায়, তিনি দীর্ঘ দিন থাইল্যান্ডে আত্মগোপনে ছিলেন এবং সম্প্রতি ভারত হয়ে তিনি বাংলাদেশে আসেন। এরপর থেকে তিনি পরিচয় গোপন করে ঢাকার বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় স্বপরিবারে বসবাস করছিলেন।

 


সূত্রমতে, ১৯৯১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর জাকির খানের সঙ্গে নারায়ণগঞ্জের রাজনীতিতে প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতা নাসিম ওসমানের সাথে বিরোধ বাধে। পরে জাকির খান বিএনপি নেতা কামালউদ্দিন মৃধার নেতৃত্বে ১৯৯৪ সালে বিএনপিতে যোগ দেন। ১৯৯৫ সালে দেওভোগ এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী দয়াল মাসুদকে শহরের সোনার বাংলা মার্কেটের পেছনে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করে শহরে পরিচিত পান জাকির।

 


১৯৯৬ সালে বিএনপি সরকারের শেষ দিকে শহরের খাজা সুপার মার্কেটে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় হওয়া মামলায় ৭ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড পেয়ে কারাগারে যান জাকির খান, কিন্তু রাষ্ট্রপতির সাধারণ ক্ষমায় তিনি মুক্ত হন। তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল মতিন চৌধুরীর নাতি হিসেবে শহরে পরিচিত হয়ে ওঠেন জাকির।



১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার ৭ মাসের মাথায় কাশীপুর বাংলাবাজার এলাকায় এক ঠিকাদারের কাছে চাঁদা দাবির অভিযোগে করা মামলায় দ্বিতীয় দফায় জাকির খানের ৫ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড হয়। আওয়ামী লীগের আমলে প্রায় ৪ বছর কারাগারে ছিলেন জাকির।



১৯৯৯ সালে স্বল্প সময়ের জন্য কারামুক্ত হয়ে জাকির খান জেলা ছাত্রদলের সভাপতির পদ পেয়ে যান। আওয়ামী লীগের শাসনামলের শেষ দিকে ২০০০ সালে শামীম ওসমান নারায়ণগঞ্জ থেকে টানবাজার ও নিমতলী যৌনপল্লি উচ্ছেদ করলে জাকিরের পরিবারের আর্থিক মেরুদণ্ড ভেঙে যায়।

 

 

২০০১ সালে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে বিশাল গাড়িবহর নিয়ে অস্ত্রের মহড়া করে আবার কারাবন্দি হন জাকির। ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পরও প্রায় ৫ মাস তিনি কারাবন্দি ছিলেন।

 

 

২০০৩ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি নারায়ণগঞ্জ বিএনপি নেতা তৈমূর আলম খন্দকারের ছোট ভাই তৎকালীন বিএকেএমইএর সহসভাপতি সাব্বির আলম খন্দকার খুন হন। ওই মামলার প্রধান আসামি ছিলেন জাকির খান। মামলার পর থেকে বিদেশে পলাতক ছিলেন তিনি।



এদিকে জাকির খানের গ্রেফতারের নিন্দা জানিয়েছে বিএনপি। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ জেলা বিএনপির পক্ষ থেকে জাকির খানের গ্রেফতারের নিন্দা জানিয়ে প্রেস বিজ্ঞপ্তি প্রেরণ করেছেন। এন.এইচ/জেসি