সোমবার   ২৫ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ১১ ১৪৩১   ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

কিশোর গ্যাংয়ে অতিষ্ঠ নারায়ণগঞ্জবাসী

যুগের চিন্তা রিপোর্ট

যুগের চিন্তা

প্রকাশিত : ০৩:১২ পিএম, ৭ সেপ্টেম্বর ২০২২ বুধবার


কিশোর গ্যাং এখন সারা দেশেই পরিচিতি পেয়েছে তবে নারায়ণগঞ্জে এর অধিক পরিচিত। এই পরিচিতি মোটেও ইতিবাচক নয়। নারায়ণগঞ্জে দিন দিন ভয়ংকর হয়ে ওঠা দলবদ্ধ এই অপরাধীচক্র এখন মাথা ব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে নারায়ণগঞ্জবাসী ও পুলিশ প্রশাসনের।

 

 

‘কিশোর গ্যাং’ এখন বড় ধরনের একটি জাতীয় সামাজিক সমস্যা। নারায়ণগঞ্জে কিশোর গ্যাংয়ের তাণ্ডব প্রকট হয়ে উঠেছে। প্রতিদিনই নারায়ণগঞ্জের কোনো না কোনো এলাকায় কিশোর গ্যাংয়ের তাণ্ডবের শিকার হচ্ছে কেউ না কেউ।

 

 

দিন ও রাতের যে কোন সময় এ তান্ডব চালিয়ে বেড়ায় কিশোর গ্যাং। দিন দুপুর বা মধ্য রাতেও দেখা যায় তাদের দেশীয় অস্ত্র নিয়ে তান্ডব চালাতে এলাকায় এলাকায়। কখনো কখনো গুলাগুলি, ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ এর মতো ভয়াবহ অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে এই কিশোর গ্যাং সদস্যরা।



সারা দেশে এই কিশোরগ্যাং কালচার ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। অধিকাংশ রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে কিশোররা ব্যবহৃত হচ্ছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তাদের অপরাধের ধরণও পাল্টে যাচ্ছে। এলাকায় আধিপত্য বিস্তার, চাঁদাবাজি, চুরি-ছিনতাই থেকে শুরু করে খুনা-খুনিসহ নানা অপরাধে কিশোর-তরুণরা জড়িয়ে পড়ছে।

 

 

মাদক ব্যবসা ও দখলবাজিতেও তাদের ব্যবহার করা হচ্ছে। আর এই সব নানা অপরাধে জড়িয়ে কিশোররা ক্রমেই অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠছে। অধিকাংশ কিশোর গ্যাং গড়ে ওঠার পেছনে ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় নেতাকর্মীরা মদদ দিচ্ছে। ‘হিরোইজম’ প্রকাশ করতেও পাড়া-মহল্লায় কিশোর গ্যাং গড়ে উঠছে।

 

 

আর জেলার প্রতিটি এলাকায় এলাকায় রয়েছে এ কিশোর গ্যাং। উদ্ভট নাম নিয়ে গড়ে ওঠা এসব দলের অনেক সদস্যই স্কুল-কলেজের গণ্ডি পার হয়নি। তাদের বয়স ১৮ বছরের নিচে। প্রকাশ্যে জনবহুল ও ব্যস্ততম এলাকাগুলোতেও চলে কিশোর গ্যাংয়ের তান্ডব। এই তান্ডবে কখনো কখনো ছিনতাই, মারধর কখনো বা খুনের শিকার হতে হচ্ছে।

 

 

সম্প্রতি নারায়ণগঞ্জ রাইফেল ক্লাবের সামনে এক কিশোরকে দেশীয় ছুড়ি নিয়ে মারধর করার একটি ভিডিও ভাইরাল হয়। অতিদ্রুত র‌্যাব-১১ সেই কিশোরগ্যাংদের গ্রেফতার করলেও অহরহ রাইফেল ক্লাব, নারায়ণগঞ্জ ক্লাব, ২নং রেলগেইট, রাসেল পার্ক, নিতাইগঞ্জ, টানবাজার, ৫নং ঘাট, খানপুর, তল্লা, কিল্লারপুল, নয়ামাটি, চানমারি, ইসদাইর, মাসদাইর, দেওভোগ, কাশিপুর, সৈয়দপুর, এনায়েতনগর, ফতুল্লা, লামাপাড়া, শিয়াচর, তক্কারমাঠ, দাপা, কুতুবপুর, পাগলা, জালকুড়ি, ভূইঘর, সিদ্ধিরগঞ্জ ১, ২ ও ৩নং ওয়ার্ড, চিটাংরোড, সানারপাড়, মৌচাক, চৌধুরী বাড়ি, গোদনাইল সহ নারায়ণগঞ্জ সদর, ফতুল্লা ও সিদ্ধিরগঞ্জ থানার সর্বত্র দেখা পরিলক্ষিত কিশোর গ্যাংয়ের তান্ডব।



আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সূত্রে জানা গেছে, কিশোর গ্যাং সদস্যদের তৎপরতা রোধে নারায়ণগঞ্জ জেলায় চলছে বড় ধরনের অভিযান; তবুও দমানো যাচ্ছে না জেলা থেকে কিশোর গ্যাং।



আধিপত্য বিস্তার, সিনিয়র-জুনিয়র দ্বন্ধ, প্রেমের বিরোধ, মাদকসহ নানা অপরাধে কিশোররা খুনাখুনিতে জড়িয়ে পড়ছে। সম্প্রতি কিশোর গ্যাংয়ের হাতে খুনের ঘটনাগুলো বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, বিভিন্ন এলাকায় কিশোর গ্যাং নিয়ন্ত্রণ করে স্থানীয় ‘বড় ভাই’রা। নারায়ণগঞ্জের আন্ডারওয়ার্ল্ডের খুনা-খুনিতে কিশোর ও তরুণদের ব্যবহার করার ঘটনাও ঘটেছে।



খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জ জেলায় কয়েক শতাধিক কিশোরগ্যাং সক্রিয়। এর মধ্যে ফতুল্লা, সিদ্ধিরগঞ্জ ও নারায়ণগঞ্জ সদর থানা এলাকায় সবচেয়ে বেশি কিশোর গ্যাং সক্রিয়। এ তিন থানা এলাকায় প্রায় শতাধিক কিশোর গ্যাং সক্রিয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় কিশোর গ্যাং কালচার ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে।



দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের আইনের আওতায় আনতে গত ২৩ মে মাঠে নেমেছিলো নারায়ণগঞ্জ পুলিশের একাধিক আইন প্রয়োগকারী সংস্থা। এরই মধ্যে নারায়ণগঞ্জ ও ঢাকার পাড়া-মহল্লার কিশোর গ্যাংয়ের তালিকা তৈরির নির্দেশ দিয়েছিলেন বাংলাদেশ পুলিশ।

 

 

তালিকা ধরে র‌্যাবও অভিযান শুরু করলেও জেলা থেকে কিশোর গ্যাং দমানো যাচ্ছে না; বলছেন নারায়ণগঞ্জবাসী। এর একটাই কারণ তারা বলছেন, রাজনৈতিক দলের ছত্রছায়া ও পুলিশের প্রশাসনের কঠোর ভূমিকা পালন না করা।



এদিকে নারায়ণগঞ্জে চলতি বছরের ৩০ জুলাই দেওভোগ মাদ্রাসার শেষ মাথায় রাকিবের চায়ের দোকানের সামনে মেহেদী হাসান (২১)কে ওমর ফারুক কিশোর গ্যাংয়েরা হাতে, জুন মাসে কাউন্সিলর মনিরুজ্জামান মনিরের কিশোর গ্যাংয়ের হাতে দেওভোগের সুব্রত নামে এক কিশোর খুন হয়।

 

 

১৭ মে ইসদাইর এলাকায় প্রেম ঘটিত বিষয় নিয়ে সিনিয়র-জুনিয়র দ্বন্ধে কিশোরগ্যাংদের হাতে খুন হয় দশম শ্রেনীর ছাত্র ধ্রুব দাস। ২৫ এপ্রিল মাসদাইরের শেরেবাংলা সড়কে এক গার্মেন্টস কর্মীকে ছুড়িকাঘাত করে হত্যা করে কিশোর গ্যাং।

 

 

২৮ জানুয়ারি রাতে অচেনা কিশোরগ্যাংয়ে হাতে ছুরিকাঘাতে খুন হন আমান। খুন ছাড়াও হামলার শিকার হয়ে থানায় শত শত অভিযোগ হচ্ছে কিশোরগ্যাংয়ের বিরুদ্ধে। এন.এইচ/জেসি