যত্রতত্র ঝুঁকিপূর্ণ অনুমোদনহীন মোবাইল টাওয়ার
ইফতি মাহমুদ
যুগের চিন্তা
প্রকাশিত : ০৭:৩৮ পিএম, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২২ বুধবার
# আবাসিক এলাকায় অনুমোদন দেইনি: নগর পরিকল্পনাবিদ
# রেডিয়েশনের অবশ্যই ক্ষতি আছে: তত্ত্বাবধায়ক ৩০০ শয্যা হাসপাতাল
নারায়াণগঞ্জ শহর জুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে অসংখ্য মোবাইল টাওয়ার শহরের বহুতল ভবনগুলোর ছাদে লক্ষ্য করলেই দেখা মিলে এই মোবাইল টাওয়ারের। যতরকম দূষণ আছে সবচেয়ে ভয়াবহ দূষণ হতে যাচ্ছে মোবাইল টাওয়ারের রেডিয়েশন দূষণ।
এই নীরব অদৃশ্য ঘাতকের কারণে ভয়াবহ স্বাস্থ্যা ঝুঁকিতে আছে সাধারণ মানুষ। বেশিরভাগ অনুমোদনহীন বিশাল আকারের এই মোবাইল টাওয়ার ভবনের ছাঁদের ধারণ ক্ষমতার বাহিরে যার কারণে ছাদ ধসে, ঘটতে পারে ভয়াবহ দূর্ঘটনা।
সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নারায়ণগঞ্জ শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ভবন, অফিস, হাসপাতাল, বাসা বাড়ি বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ছাদের উপর বিশাল আকারের মোবাইল টাওয়ার। বিশেষ করে নগরের ঘনবসতি এলাকাগুলোতে দেখা যায় সবচেয়ে বেশী মোবাইল টাওয়ার।
নগরের বাসা বাড়ি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে স্বার্থলোভী প্রাইভেট কোম্পানীগুলো যত্রতত্র মোবাইল টাওয়ার স্থাাপন করছে এবং বাসা বাড়ির মালিকরা অল্প কিছু টাকার জন্য ভয়াবহ স্বাস্থ্যা ঝুঁকিতে পড়ে যাচ্ছে। মোবাইল টাওয়ার স্থাপিত ভবন থেকে শুরু করে আশেপাশের বসাবসরত বয়স্ক মানুষ ও শিশুরা রয়েছে চরম স্বাস্থ্যা ঝুঁকিতে রয়েছে।
আরও একটি বিষয় লক্ষ্য করা যায়, বেশিরভাগ ভবনের ছাদে যে পরিমাণ ধারণ ক্ষমতা রয়েছে তার চেয়ে বেশী মাত্রা ওজনের এই বিশাল আকারের মোবাইল টাওয়ার স্থাাপন করা হয়েছে। এসব ভবনের ছাদ ধসে ঘটতে পারে বড় ধরণের ভয়াবহ দূর্ঘটনা।
উচ্চমাত্রায় ভূমিকম্পন হলে মোবাইল টাওয়ারগুলো ধসে পাড়তে পারে ভবনের উপর। জানা যায়, প্রতিটি ভবনের যে প্রাইভেট মোবাইল কোম্পানীর টাওয়ার রয়েছে বেশির ভাগই সিটি কর্পোরেশনের অনুমোদনহীন। এই অনুমোদনহীন টাওয়ার বসিয়ে পার পেয়ে যাওয়ার কারণে বেপরোয়া ভাবে নগরজুড়ে বিভিন্ন স্থাাপনায় মোবাইল টাওয়ার বসিয়ে যাচ্ছে প্রাইভেট কোম্পানীগুলো।
২০২০ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারী বিটিআরসির করা একটি জরিপ প্রকাশ নিয়ে ‘টাওয়ার রেডিয়েশনের মানদণ্ড ও সাম্প্রতিক জরিপ’ শীর্ষক এক আলোচনা হয়। বিটিআরসির স্পেকট্রাম বিভাগের কমিশনার মো. আমিনুল হাসান বলেন, ‘বাংলাদেশে টাওয়ার রেডিয়েশন আন্তর্জাতিক ও কমিশনের মানদণ্ডের অনেক নিচে রয়েছে এজন্য এ নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ারও কিছু নেই। কিন্তু বর্তমানে যেখানে সেখানে মোবাইল টাওয়ার স্থাাপনের কারণে আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের সীমারেখা অতিক্রমের সম্ভবনা রয়েছে।’
তথ্যসূত্রে জানা যায়, মোবাইল টাওয়ার থেকে প্রতি বর্গমিটারে তেজস্ক্রিয়তার মাত্রা হচ্ছে ১৭১০০ থেকে ৭২০০০ মাইক্রোওয়াট। ইলেকট্রো ম্যাগনেটিক ফ্রিকুয়েন্সি হলো ১৯০০ মেগাহার্জ যা ভবন ও ভবনের আশপাশের বসবাসকারীদের শরীরে সহজেই ভেদ করতে পারে।
এটা মানুষের শরীরে মুক্ত বা সুপার আয়ন তৈরি হওয়ার কারণসহ ক্যান্সার, হৃদরোগ, ব্রেন টিউমার এবং গুরুত্বপূর্ণ অর্গান ড্যামেজের আশঙ্কা দারুণভাবে বাড়িয়ে দেয়। ফলে মোবাইল টাওয়ারের কারণে এক কিলোমিটারের মধ্যে বসবাসকারী মানুষ ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে।
এই মোবাইল টাওয়ারের রেডিয়েশনের ফলে জেনেটিক পরিবর্তনসহ মানুষের স্মৃতিশক্তি নষ্ট, অবসন্নতা, লিউকেমিয়া, এলার্জি, মাথাব্যথা এবং চর্মরোগও হতে পারে। শিশুদের শারীরিক বৃদ্ধি ও মানসিক বিকাশও ব্যাহত হতে পারে। এসব রোগ উপসর্গ ১০-২০ বছর পরে দেখা দেয়ার আশঙ্কা বেশি।
সাধারণত এই সকল টাওয়ারের থেকে নিরাপদ দূরত্ব হচ্ছে ৪০০ মিটার তবে সবচেয়ে বিপদজনক দূরত্ব হলো ৩০০ ফুট কতটা দূরত্বে আছে মানুষ। আরও জানা যায়, আমাদের দেশের বেশিরভাগ টাওয়ারই পরিবেশ বান্ধব নয় কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে কার্বন ফাইবার টাওয়ার সবচেয়ে বেশি পরিবেশ বান্ধব ও স্বাস্থ্যোর জন্য কম ঝুঁকিপূর্ণ।
এ ব্যাপারে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের নগর পরিকল্পনাবিদ মো. মঈনুল ইসলাম জানান, ‘সিটি কর্পোরেশন কিছুসংখ্যক টাওয়ারের অনুমোদন দিয়েছে। আবাসিক এলাকায় কিছু টাওয়ারের অনুমোদন চেয়েছিল আমরা দেইনি।
আমরা ছয়টা টাওয়ারের স্থাাপন করা বন্ধ করে দিয়েছি এর আগে যেগুলো স্থাাপন করা হয়েছে সেগুলোর মধ্যে অনুমোদিত প্রতিষ্ঠান ট্যাক্স দেয়; অনুমোদনহীন প্রতিষ্ঠানগুলো ট্যাক্স প্রদান করে না। যারা অনুমোদন নেয়নি তাদের বিরুদ্ধে সরাসরি ব্যবস্থা নেয়ার পরিকল্পনা করছি।’
এব্যাপারে ৩০০ শয্যা হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাক্তার আবুল বাসার জানান, ‘টাওয়ারগুলো রেডিয়েশনের একটি অংশ রেডিয়েশনের অবশ্যই ক্ষতি আছে যার কারণে ব্রেইনের সমস্যা হতে পারে কানের সমস্যা এমনকি টিউমারও হতে পারে; ব্রেইনে আমাদের ম্যামরি শক্তি কমে যায়; চোখের সমস্যা হতে পারে।’ এন.এইচ/জেসি