সোমবার   ২৫ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ১১ ১৪৩১   ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

নিম্নআয়ের মানুষের জীবন ওষ্ঠাগত

হাসিবা নিঝুম

যুগের চিন্তা

প্রকাশিত : ০৮:৫০ পিএম, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২২ রোববার

 

 

# এখন টিকে থাকাই মুশকিল বলছে খেটে খাওয়া মানুষ
 

এ দেশের বিপুল সংখ্যক মানুষকে বছরের একটা সময় শুধু ডাল ভাত খেয়ে বেঁচে থাকতে হয়। চালের দাম তাদের ক্রয়সাধ্যের বাইরে চলে গেলে তারা অনাহার অধ্যহারে ঝুঁকিতে পড়ে যায়। খাদ্য নিরাপত্তার দিক থেকে আমরা এখন এক গুরুতর সংকটে। গতকাল শহরের কিছু দিনমজুরের সাথে কথা বলে যানা যায়, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় তাদের চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়। আবার কেউ কেউ বলেন, যত টাকা উর্পাজন করি সে টাকা দিয়ে বাসা ভাড়া, খাবার খরচ, ছেলে মেয়ের পড়ালেখার খরচ চালানো দুস্কর হয়ে পড়েছে। এমনকি শহরে টিকে থাকাও মুশকিল হয়ে পড়ছে।

 


 
দীর্ঘ প্রায় ২৪ বছর যাবৎ ঠেলা গাড়ি চালিয়ে সংসার চালাচ্ছেন দিন মজুর মফিজুল ইসলাম। এই উপার্জন দিয়ে অতি কষ্টে তিনি স্ত্রী, দুই ছেলে ও একটি মেয়েসহ পাঁচ জনের সংসার চালাচ্ছেন। মফিজুল ইসলাম জানান, তিনি প্রতিদিন সকাল ৮ টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত ঠেলাগাড়ি চালিয়ে ৬০০ টাকার মতো উপার্জন করতে পারেন। তবে যখন কাজ কম থাকে তখন আবার দিনে ২০০ টাকাও উপার্জন করা কষ্টকর হয়ে পড়ে।

 

 

এর মধ্যে বড় ছেলে সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করে সংসারের অভাব অনটনের কারণে পড়াশোনা বাদ দিয়ে হোসীয়ারিতে সুতা কাটার চাকরি নিতে বাধ্য হন। তার মেয়ে একটি বেসরকারি স্কুলে ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে। ছোট ছেলে সরকারি স্কুলে তৃতীয় শ্রেণিতে পড়াশোনা করে। তার প্রতিদিন যে পরিমান টাকা উপার্জন হয় তা দিয়ে সংসার খরচ চালাতে হিমশিম খেতে হয় তাকে।

 

 

ছেলে মেয়ের পড়ালেখা, বাসা ভাড়া ও খাবার ইত্যাদি খরচ চলাতে  হয়। বর্তমান বাজারে জিনিস পত্রে যে মূল্য তাতে আয়ের তুলনায় ব্যায় বেশি। নিত্যপ্রয়োজনীয় খাবারের দাম বেড়ে যাওয়ায় শুধু ডাল-ভাত খেয়ে কোনো রকমে দিন কাটিয়ে যাচ্ছেন বলে জানান তিনি। ভালো কোন খাবার খাওয়ার সুযোগ সহজে তার পরিবারের হয় না।

 


 
অন্যদিকে ইট-বালু-সিমেন্টের লোড আনলোডের কাজ করেন নাজিমউদ্দিন নামের আরেক দিনমজুর। তিনি জানান, ৪ মেয়ে ও স্ত্রীসহ ৬ জনের পরিবার তার। পরিবারের সম্পূর্ণ খরচ তার উপর। বাসা ভাড়া, খাবার খরচ মেয়েদের পড়া-লেখার খরচ সবকিছুই আমাকে দেখতে হয়। তিনি বলেন,  ভাত খাই আর নুন খাই সবকিছুই আমার উপর নির্ভর করে।

 

 

মাংস খাওয়ার ভাগ্য সহজে আমাদের হয় না। খাবারের যেই দাম, তাতে করে সেই কবে যে মাংস দিয়ে ভাত খাইছি তা মনে নেই। জিনিস পত্রের দাম যে হারে বাড়ছে, তাতে মনে হয় না ঠিক মতো আর সংসার খরচ চালাতে পারমু। অন্যদিকে বয়সওতো বাড়তেছে, এমন করে যদি দিন দিন সব কিছুর দাম বেড়ে যায় তাহলে শহরের টিকে থাকা মুশকিল হয়ে পড়বে।

 


 
দিনমজুর রুবেল যুগের চিন্তাকে জানান, দিন দিন সবকিছুর দাম যে উচ্চমানে বাড়ছে মনে হয় না পরিবার সহ শহরে টিকে থাকতে পারবো। দিনে যে টাকা উর্পাজন করি তা দিয়ে ঠিকমত সংসার খরচ চালাতে পারি না। বাজারে গেলে মনে হয় যেন আগুন লেগে আছে। যা কিছুই কিনতে যাই সব কিছুরই দাম বেশি। সবকিছুই এখন যেন ধরা ছোঁয়ার বাইরে। কোন কিছুর দাম একবার বাড়লে তা যে হারে বাড়ে সেই হারে আর দাম কমে না। তাই এখন সংসারের চাহিদার তুলনায় উপার্জন দিন দিন কমেই চলছে।