রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় দখলে ফুটপাত
যুগের চিন্তা রিপোর্ট
যুগের চিন্তা
প্রকাশিত : ০৬:৫৯ পিএম, ২ নভেম্বর ২০২২ বুধবার
ঢাকা-মুন্সীগঞ্জ সড়কের বিসিক শিল্প নগরীর সামনের ফুটপাত দখল করে বিভিন্ন ধরনের দোকান বসিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করায় জনদুর্ভোগ সৃষ্টি হয়েছে। ফুটপাত নাগরিকদের হাঁটার জন্য তৈরি করা হলেও বিসিক শিল্পাঞ্চলের এই ফুটপাত হাটার জন্য মোটেও উপযোগী নয়।
ঢাকা-মুন্সীগঞ্জ এই সড়কটি অত্যন্ত ব্যস্ত হওয়ার কারণে প্রতিদিন হাজার হাজার যানবাহন চলাচল করে। ফুটপাতের এই অবৈধ দখলের কারণে এই সড়ক দিয়ে সাধারণ মানুষদের চলাচল করা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। তাই প্রতিদিন ঝুঁকি নিয়েই এই সড়ক দিয়ে মানুষ চলাচল করছেন।
ফুটপাত মারিয়েও কোথাও কোথাও রাস্তা দখলের চিত্র দেখা গেছে। তাই পথচারীদের অনেকক্ষেত্রে বাধ্য হয়েই হাঁটতে হয় মূল সড়ক দিয়ে। এতে শুধু ছোটখাটো দুর্ঘটনাই নয় রয়েছে প্রাণ হারানির ঝুঁকি। ঢাকা - মুন্সীগঞ্জ এই সড়কটি অত্যন্ত সংকীর্ণ, তার ওপর অবৈধ ফুটপাত দখল যানজটের মাত্রা বাড়িয়ে দিয়েছে।
বিশেষ করে বিসিক শিল্পাঞ্চলের গার্মেন্টস কর্মীদের পোহাতে হয় নানা দুর্ভোগ। গার্মেন্টস কর্মী মনোয়ারা বেগম জানান, রাস্তার ফুটপাতের উপরে এই দোকানগুলোর কারণে আমাদের বেশি ভোগান্তির শিকার হতে হয়। বিসিকের ভিতরে অনেক মানুষ কাজ করে।
সবাই যখন একসাথে আসে আর এই ফুটপাতের কারণে রাস্তা যখন বন্ধ থাকে তখন মানুষ যেতে পারে না। আমাদের অফিসে যেতে দেরি হয় আর প্রায় প্রতিমাসেই হাজিরা বোনাস থাকে না। এতে আমরা আর্থিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি।
এই এলাকায় সকাল আটটার দিকে যখন গার্মেন্টস গুলো শুরু হয় তখন মানুষের ভিড় এবং যানজট যেন বিরক্তিকর এমন মন্তব্য করে স্কুল ছাত্র আখতার মিয়া জানান, রাস্তায় যানজটের কারণে আমাদের চলাচল অসুবিধা হয়। প্রায় স্কুলে যেতে দেরি হয়। যার কারণে ম্যাডামের বকা শুনতে হয়।
শিক্ষিকা মনিরা বেগম বলেন, বিকেল পাঁচটার পর যখন গার্মেন্টস গুলো ছুটি হয় তখন থেকে শুরু করে প্রায় মধ্যরাত পর্যন্ত যানজটের কারণে এ রাস্তা দিয়ে চলাচল করা একেবারেই সম্ভব না। এই যানজটের মূল কারণ হলো এই অবৈধ ফুটপাত দখল। এই ফুটপাত দখলের কারণে এখানকার সংকীর্ণ রাস্তা গুলো আরো সংকীর্ণ হয়ে গেছে।
পথচারী মানিক মিয়া বলেন, সড়কের ফুটপাতে এই দোকান গুলো থাকার কারণে ঠিক মতো হাঁটা যায় না। দিনের বেশিরভাগ সময়ই সড়কে জ্যাম তৈরি হয়। সন্ধ্যায় তো আরো বেশী খারাপ অবস্থা হয়। স্বাভাবিক চলাফেরায় ঝামেলা হয়।
এছাড়াও এসব দোকানের কারণে ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা। রাজনৈতিক ছত্রছায়ার দখলে এই ফুটপাত এমন মন্তব্য করে তিনি বলেন, এখানকার স্থানীয় কয়েকজন নেতার দখলে এই ফুটপাত। যারা টাকার বিনিময়ে ফুটপাতে থাকা দোকানদারদের প্রোটেকশন দিচ্ছে। প্রটেকশন দিচ্ছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী থেকেও।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই ফুটপাতের একাধিক দোকানদার জানান, প্রতিমাসে দোকান ভাড়া বাবদ এক এক দোকানদারকে দোকান ভেদে দিতে হয় তিন হাজার থেকে পাঁচ হাজার করে টাকা। এই টাকা কাকে দিতে হয় এমন প্রশ্নের উত্তরে তারা জানান 'সবুজ আল সাকি' নামের যুবলীগ নেতার নাম।
তিনি আরো জানান, ঐ নেতারা প্রতিমাসে ভাড়ার নামে চাঁদাবাজি করে এই টাকা তুলে পুলিশ সহ অন্যান্য বড় নেতাকেও দেন। সবুজ আল সাকির সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
এসব বিষয়ে ফতুল্লা মডেল থানার ওসি রেজাউল হকের সঙ্গে কথা বললে তিনি ফুটপাত দখল করে অবৈধ দোকানের কথা স্বীকার করেন। শেষে ফুটপাতের অবৈধ দোকান উচ্ছেদ এবং প্রতি মাসে ভাড়ার নামে চাঁদাবাজির বিষয়টি খতিয়ে দেখবেন বলে তিনি জানান।