পানির নিচে ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্র ভোগান্তিতে জনগণ
যুগের চিন্তা রিপোর্ট
যুগের চিন্তা
প্রকাশিত : ০৫:২৮ পিএম, ২৫ নভেম্বর ২০২২ শুক্রবার
ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ-মুন্সিগঞ্জ সড়কের অ্যাডভেঞ্চার ল্যান্ড পার্ক এর বিপরীতে অবস্থিত এনায়েতনগর ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রটির অবস্থান। সারা বছরই পানির নিচে নিমজ্জিত থাকে এই স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রটি। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রটির পাশেই বড় আকৃতির একটি পুকুর রয়েছে। যার ফলে জমাট পানি এবং পুকুরের উপচে পড়া পানি ডুবিয়ে রেখেছে স্বাস্থ্য কেন্দ্রটিকে।
এর আগের বছর গুলোতে স্বাস্থ্য কেন্দ্রটি জলাবদ্ধতার কবলে পড়লেও কিছুদিন পর সেই পানি সরে যেত। তবে প্রায় বছর খানেক ধরে সেই পানি আর নামছে না। কারণ পানি নামার কোন সুযোগ নেই। তাই এখন সারা বছরই যেন কোমর পরিমান পানি থাকে নারায়ণগঞ্জের এনায়েতনগর স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কেন্দ্রে।
এমন অবস্থায় ভবন সংলগ্ন উঁচু স্থানে টিনশেডের ছোট একটি ঘর তুলে রোগীদের সেবা দেওয়া হচ্ছে এমনটাই জানিয়েছেন স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ফ্যামিলি ওয়েলফেয়ার ভিজিটর অফিসার (এফডব্লিউভি) সালেহা আক্তার । কিন্তু সেখানে রয়েছে সাপের উপদ্রব। নেই কোন আধুনিক সুযোগ সুবিধার সংযোগ। এখন যদিও শীতকাল কিন্তু বিদ্যুৎ না থাকায় গ্রীষ্মকালে মাথার সামান্য উপড়ে থাকা টিনের তীব্র গরমে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েন সেবাদানকারী ও সেবাগ্রহীতারা। ফলে ব্যাহত হচ্ছে এই স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের সেবা দানের প্রক্রিয়া।
এনায়েতনগর ইউনিয়নের এই স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের পরবর্তী সংস্কার কার্যক্রম সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে এনায়েতনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান ভালো বলতে পারবেন। ২৪ নভেম্বর (বৃহস্পতিবার) সরেজমিনে দেখা যায়, সমতলভূমি থেকে নিচু হওয়ায় এনায়েত নগর ইউনিয়ন পরিষদের এই স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রটি প্রায় কোমর সমান পানিতে তলিয়ে গেছে।
বছর খানেক আগে মাঝে মধ্যে পানি জমে থাকলেও কিছুদিন পর সেই পানি নেমে যেত। কিন্তু এখন আর পানি নামছে না। অবশ্য পানি নামার বা সরে যাবার কোন সুযোগও এখানে দেখা যায়নি। যে কারণে এনায়েতনগর স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের কার্যালয় ভবনটি ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।
পরিত্যক্ত এই ভবনের সামনের সড়কের পাশে থাকা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে সেখানে একটি টিনশেড ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। কিন্তু সেই টিনশেড ঘরের মেঝেটি পাকা না হওয়ায় সেখানে রয়েছে সাপের উপদ্রব। প্রায়ই গর্ত থেকে সাপ বের হয় বলে শোনা গেছে। উল্লেখ্য ইউনিয়নের এই স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রটি ফতুল্লার বিসিক শিল্পাঞ্চলের কাছেই অবস্থিত। বিসিকের এই শিল্প নগরীতে প্রায় ৭৫০টি শিল্প কারখানায় অবস্থিত। যেখানে নিয়োজিত আছেন প্রায় সাড়ে তিন লাখ শ্রমিক, কর্মকর্তা ও কর্মচারী।
এছাড়া পঞ্চবটি এবং এর আশপাশে গড়ে উঠেছে আরো প্রায় দুই শতাধিক ছোট বড় কলকারখানা। এছাড়া আছে ছোট ছোট বিভিন্ন হুঁশিয়ারি। যেখানে লাখের কাছাকাছি শ্রমিক কাজ করে থাকেন। যাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় এই স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের ভূমিকা অনস্বীকার্য। এই স্বাস্থ্য কেন্দ্রে বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা, ওষুধ ও জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রী দেওয়া হয়।
এছাড়া পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শকের বেশ কয়েকজন মাঠকর্মী রয়েছেন যারা মাঠ পর্যায়ে কাজ করছেন। এই স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র থেকে বিনামূল্যে খাবার বড়ি, কনডম ও ইনজেকশন পাওয়া যায়। এছাড়া নারীদের জন্য জন্মনিয়ন্ত্রণে দীর্ঘমেয়াদি ও অস্থায়ী ক্লিনিক্যাল পদ্ধতি (আইইউডি), দীর্ঘমেয়াদি ও অস্থায়ী ক্লিনিক্যাল পদ্ধতি (ইমপ্ল্যান্ট) এবং পুরুষ ও নারীদের জন্য স্থায়ী ক্লিনিক্যাল পদ্ধতি চিকিৎসাসেবা বিনামূল্যে দেওয়া হয়ে থাকে।
পাশাপাশি অন্তঃসত্ত্বা মায়ের স্বাস্থ্য সেবা সহ শিশুদেরও স্বাস্থ্যসেবা বিনামূল্যে দেওয়া হয়। এছাড়া এখানে বিনামূল্যে বয়োসন্ধিকালীন সেবাসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যসেবাও দেওয়া হয়ে থাকে বলে জানা গেছে। স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ফ্যামিলি ওয়েলফেয়ার ভিজিটর অফিসার (এফডব্লিউভি) সালেহা আক্তার আরোও বলেন, এই স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কেন্দ্র থেকে বিনামূল্যে সাধারণ রোগীদের চিকিৎসাসেবা, মা ও শিশুদের সেবা এবং পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতিসেবা দেওয়া হয়।
সেই সঙ্গে রোগীদের আয়রন ট্যাবলেট ও জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রী দেওয়া হয়। কিন্তু মূল ভবনটি পরিত্যক্ত হওয়ায় বর্তমানে আমরা এখানে নানা সমস্যায় রয়েছি। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সহযোগিতায় পাশে একটি টিনশেড ঘর নির্মাণ করলেও সেখানে প্রায়ই সাপের উপদ্রব দেখা যায়। যার কারণে রোগীদের ঠিকমতো সেবা দেওয়া যাচ্ছে না।
এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা প্রদীপ চন্দ্র রায় যুগের চিন্তা কে জানান, এনায়েতনগর ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রটি যেখানে পরিত্যক্ত আছে সেখানেই তিন তলা বিশিষ্ট একটি ভবন নির্মাণের অনুমোদনের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে আমরা কয়েক বছর আগে আবেদন করি। ভালো খবর হলো এটি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে পাশ হয়েছে। আশা করি আগামী বছরের জুনের মধ্যে কাজ শুরু হয়ে যাবে। কাজ শেষ হলে নিরবিচ্ছিন্ন স্বাস্থ্য সেবা প্রদানে আর কোন জটিলতা থাকবে না।