সোমবার   ২৫ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ১০ ১৪৩১   ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আফাজনগরে ময়লার দুর্গন্ধে বিপন্ন জনজীবন

আবু সুফিয়ান

যুগের চিন্তা

প্রকাশিত : ০৭:১৯ পিএম, ২৭ নভেম্বর ২০২২ রোববার

 

পঞ্চবটী থেকে নারায়ণগঞ্জ পর্যন্ত প্রধান সড়কের আশেপাশে অপরিকল্পিত বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কারণে যে ময়লার ভাগাড় তৈরি হয়েছে তার দুর্গন্ধ দূষিত করছে চারপাশের পরিবেশ। ২৬ শে নভেম্বর (শনিবার) এই প্রধান সড়ক ঘুরে দেখা গেছে, এরকম অপরিকল্পিতভাবে গড়ে ওঠা ময়লার ভাগাড়ের সংখ্যা একাধিক। যা থেকে প্রতিনিয়তই ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ।

 

 

পাশাপাশি এই ময়লা যখন আগুন দিয়ে পোড়ানো হয় তার অসহনীয় গন্ধে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে এখানকার মানুষজনকে। উল্লেখ্য এই শহরের প্রধান এই সড়কের আফাজনগরের পাশে অপরিকল্পিতভাবে গড়ে ওঠা এই ময়লার ভাগাড়ের কারণে একদম পাশের আবাসিক এলাকা এবং পাশে থাকা একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদেরও সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে।

 

 

কথা হয় কাছের পুলিশ লাইনস স্কুলের শিক্ষার্থী ফাইরুজ সাদাফের সাথে। তিনি বলেন, প্রতিদিন এইদিক দিয়ে স্কুলে যেতে খুব কষ্ট হয়। কারণ এই ময়লার ভাগাড়ের দুর্গন্ধ। আবার যখন আগুনে পড়ানো হয় তার গন্ধ আরো ভয়াবহ লাগে। আমার মাথা ব্যাথা শুরু হয়। এখনও এই ময়লার গন্ধে আমার মাথা তীব্র ব্যাথা করছে।

 

 

শেষে এই শিক্ষার্থী বলেন, এই ময়লা গুলো যেনো আমাদের পুলিশ লাইনস স্কুল থেকে দূরে ফেলা হয়। আফাজনগর আবাসিক এলাকার বাসিন্দা মো: মোশারফ যুগের চিন্তাকে জানান, এখানে কয়েকটা ময়লা ফেলার ভাগার আছে। এগুলোর দুর্গন্ধ পরিবেশ দূষণ করছে। তাছাড়া আমরাও অনেক ভোগান্তিতে আছি। আমরা এটার স্থায়ী সমাধান চাই।

 

 

সিটি করপোরেশনসহ পরিবেশ অধিদপ্তরের দৃষ্টি আকর্ষণ করে তিনি আরো বলেন, এই ময়লা আবর্জনা গুলো আমাদের এই আবাসিক এলাকার পাশে না ফেলে যেনো নির্দিষ্ট স্থানে ফেলা হয়। সারা নারায়ণগঞ্জ জুড়ে প্রতিনিয়ত অপরিকল্পিত বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কারণে দূষিত হচ্ছে শহর এবং আমাদের আশেপাশের পরিবেশ।

 

 

যেখানে সেখানে ময়লা ফেলা এবং কৃত্রিমভাবে ময়লার ভাগার তৈরি করার কারণে দূষিত হচ্ছে আমাদের বায়ু। সম্প্রতি বেসরকারি স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটির বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যায়ন কেন্দ্রের (ক্যাপস) এক গবেষণায় ৬৪ জেলার মধ্যে বায়ু দূষণে নারায়ণগঞ্জ তৃতীয় হলেও অতীতের তা রাজধানীকে ছাড়িয়ে যাবার অর্থাৎ প্রথম স্থান অধিকার করার ইতিহাস রয়েছে।

 

 

এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের মত, বায়ুদূষণে পুরুষের শুক্রাণু তৈরিতে ব্যাঘাত ঘটছে এমনকি শুক্রাণুর মানও কমে যাচ্ছে। অন্যদিকে নারীদের ডিম্বাণু কল্পনাতীতভাবে কমে গেছে। আবার যেসব ডিম্বাণু আছে সেগুলোও নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। দূষিত বায়ু মানুষের শ্বাসকার্যে ব্যাঘাত ঘটায় এবং দেহে নানা রোগ সৃষ্টি করে।

 

 

দূষিত বায়ুর কারণে মানবদেহে এলার্জি, কাশি, হাঁপানি, ব্রঙ্কাইটিস, উচ্চ রক্তচাপ, মাথাব্যথা, ফুসফুসে ক্যান্সার ইত্যাদি মারাত্মক রোগ হতে পারে। বিশ্বব্যাপী প্রতি ১০ জনের মধ্যে ৯ জন শ্বাসের মাধ্যমে দূষিত বায়ু গ্রহণ করছে। বায়ু দূষণের কারণে সৃষ্ট বিভিন্ন রোগে বছরে ৭০ লাখ মানুষ মারা যায় বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ।

 

 

যাদের বেশিরভাগই নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশের। আমাদের দেশও পিছিয়ে নেই। সুইজারল্যান্ড ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ার-এর ২০২১ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশে বাতাসের প্রতি ঘনমিটারে পিএম ২.৫-এর মাত্রা ৭৬.৯। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্ধারিত মান অনুযায়ী, প্রতি ঘনমিটারে যা থাকার কথা ১০ এর কম।

 

 

পরিবেশ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, পরিবেশ দূষণ রোধে নারায়ণগঞ্জকে মডেল করে কার্যক্রম হাতে নিয়েছে পরিবেশ অধিদফতর। এ লক্ষ্যে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছে অধিদফতর। আগামী বছর অর্থাৎ ২০২৩ সালে শুরু হয়ে এ কার্যক্রম ২০৪০ সাল পর্যন্ত চলবে।

 

 

নারায়ণগঞ্জে পরিবেশ দূষণ রোধের মডেল পরিকল্পনা সফল বাস্তবায়ন হলে তা ঢাকার আশপাশের অন্যান্য জেলাগুলোতেও পরিচালনা করা হবে বলে জানা গেছে। এছাড়া নারায়ণগঞ্জকে মডেল করে পরিবেশ দূষণ রোধে পদক্ষেপ নিয়ে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক সংসদীয় কমিটি থেকে একটি সুপারিশ আসে।

 

 

কমিটি তার ২৫তম বৈঠকে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন ও স্থানীয় সিভিল সোসাইটিকে সঙ্গে নিয়ে অংশী দারিত্বের মাধ্যমে সম্মিলিতভাবে একটি পরিকল্পনা প্রণয়নের সুপারিশ করেছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে পরিবেশ অধিদফতরের পক্ষ থেকে একটি খসড়া কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়েছে। খসড়া এই কর্মপরিকল্পনা আরও যাচাই-বাছাই করার পাশাপাশি নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন ও স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে মতবিনিয় করে চূড়ান্ত করা হবে। আগামীবছর ২০২৩ সাল থেকেই তা বাস্তবায়ন শুরু হবে বলে আরো জানা গেছে।

 

 


রাস্তার পাশে অপরিকল্পিতভাবে ময়লা সহ সামগ্রিক বিষয়ে জানার জন্য পরিবেশ অধিদপ্তর নারায়ণগঞ্জের উপ-পরিচালক মো. আব্দুল্লাহ আল মামুনের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তার মুঠোফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।