পঞ্চবটি-মুক্তারপুর সড়ক প্রশস্তকরণে নেই অগ্রগতি
আবু সুফিয়ান
যুগের চিন্তা
প্রকাশিত : ০৭:০১ পিএম, ৩০ নভেম্বর ২০২২ বুধবার
পঞ্চবটি-মুক্তারপুর সড়কটি সরু হবার কারনে প্রতিদিন যানজট লেগেই থাকে। সরু এই সড়কের গড় প্রশস্থতা মাত্র ৫.৫ মিটার। রাজধানী ঢাকার সঙ্গে মুন্সিগঞ্জের যোগাযোগের একমাত্র সড়কটির গুরুত্ব দিনদিন বাড়ছে।
মুক্তারপুর সিমেন্ট কারখানা, হিমাগার সহ ভারি ভারি শিল্প কারখানায় ২৪ থেকে ৫০ মেট্রিক টন ওজনের যান চলাচল করে। কিন্তু আঁকা বাঁকা সড়কের কারনে প্রায় ঘটে দূর্ঘটনা আর যানজটতো লেগেই থাকে।
কথা হয় এই সড়কের কয়েকজন পথচারী এবং বিভিন্ন পরিবহনের চালকদের সঙ্গে। বিসিকের যানজটে আটকে পড়া বাস যাত্রী মামুন শেখ বলেন, মুক্তারপুর থেকে ঢাকায় যাচ্ছি। ১ ঘন্টার রাস্তা যেতে সময় লাগে ৪ ঘন্টা। যানজটের কারনে বাড়তি সময় লাগে বলে তিনি জানান।
এই সড়কের পথচারী মোঃ রিয়াজ বলেন, অবৈধ গাড়ি পার্কিং, রাস্তা দখল করে ব্যাবসা, ফুটপাত দখল, সব জায়গায় গাড়ি থামিয়ে যাত্রী উঠানো-নামানো, অবৈধ গাড়ি ও এই সরু সড়ক যানজটের প্রধান কারন।
এই যানজট সমস্যার সমাধানের জন্য ও পুরো সড়কের চেহারা বদলে দিতে নেয়া হয়েছে আধুনিকায়ন প্রকল্প। পঞ্চবটি-মুক্তারপুর সড়ক প্রশস্তকরণ ও দোতলা রাস্তা নির্মাণ প্রকল্পটির সময়কাল ০১ জানুয়ারি, ২০২১ হতে ৩০ জুন, ২০২৫ পর্যন্ত ধরা হয়েছে। কিন্তু প্রকল্পের বেঁধে দেয়া সময়ের প্রায় ২ বছর চলে গেলেও নেই কোন কাজের অগ্রগতি।
স্থানীয় ব্যাবসায়ী মোঃ রুবেল মিয়া বলেন, কয়েকদিন আগে মাটি পরীক্ষা করতে দেখেছি। এই কাজ কবে যে শেষ হবে তা আমরা জানিনা। তিনি আরো বলেন, যেভাবে কাজ এগুচ্ছে তাতে ২০২৫ সালের মধ্যে শেষ করতে পারবে না।
আরেক বাসিন্দা ওমর ফারুক বলেন, আমরা অনেক ভোগান্তিতে আছি। সাড়ে চার বছরের দুই বছর চলে গেছে, এই প্রকল্প কবে শেষ হবে তা আমরা সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের নিকট জানতে চাই। প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, ১০.৩৭ কিলোমিটার দীর্ঘ এ সড়কে ২.৮০৫ কিলোমিটার র্যাম্প সহ দোতলা হবে ৯.০৬ কিলোমিটার।
আর পঞ্চবটী মোর হবে ভাঙ্গার আদলে। পঞ্চবটীকে কেদ্র করে সড়কটি ৬ লেনে উন্নিত হয়ে ৩১০ মিটরি করে ফতুল্লা ও নারায়ণগঞ্জ দুই দিকে প্রসারিত হবে। আর শীতলক্ষা ৩ সেতু পর্যন্ত ৬ কিলোমিটার পথ দোতলা হবে দুই লেনে। সাথে পুরনো সড়কটিও উন্নিত হবে ২ লেনে। আর একটি গোল চত্তর হবে চর সৈয়দপুরের শীতলক্ষা ৩ পয়েন্টে।
এই গোল চত্তর থেকে মুক্তারপুর সেতু পর্যন্ত ৩.৭৫ কিলোমিটার সড়ক হবে সরাসরি ৪ লেন। ৫ টি ওজন স্কেল আর টোল প্লাজা থাকবে ৪ টি। পঞ্চবটি হতে মুক্তারপুর সেতু পর্যন্ত বিদ্যমান সড়কটি দুই-লেনে উন্নীতকরণ ও দুই-লেন দোতলা রাস্তা নির্মাণের মাধ্যমে মুন্সীগঞ্জ জেলার সাথে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ জেলাসহ অন্যান্য জেলার সড়ক যোগাযোগ নিরবচ্ছিন্ন, সহজতর ও ব্যয় সাশ্রয়ী হবে।
মুন্সীগঞ্জ জেলার সাথে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ জেলাসহ অন্যান্য অংশের সরাসরি সড়ক যোগাযোগে বিদ্যমান সড়কটি ব্যবহৃত হয়। আঁকাবাঁকা ও রাস্তার উভয় পাশে গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি, বসত-বাড়ি, দোকানপাট ইত্যাদি থাকায় যানবাহন চলাচলে প্রায়ই দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়।
মুন্সিগঞ্জের মুক্তারপুরে ৫ টি সিমেন্ট ফ্যাক্টরি এবং আলু সংরক্ষনের জন্য বেশ কয়েকটি কোল্ড স্টোরেজ থাকায় ২৪ টন হতে প্রায় ৫০ টন পর্যন্ত ওজনের ভারী যানবাহন চলাচল করায় প্রায়শঃই দূর্ঘটনার সম্মুখীন হতে হয় এবং এর ফলে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়।
প্রকল্পাধীন এলাকাটি বিসিক শিল্পাঞ্চল-এর অন্তর্ভূক্ত এবং এ এলাকায় কয়েকটি গার্মেন্টস ফ্যাক্টরী থাকায় প্রতিদিন প্রায় লক্ষাধিক শ্রমিক তিনবেলা রাস্তাটি ব্যবহার করে। ফলে রাস্তায় যানজটের সৃষ্টি হয়।
তাছাড়া এ এলাকায় বেশ কয়েকটি রপ্তানিমুখী শিল্পপ্রতিষ্ঠান রয়েছে যার উৎপাদিত পন্য পরিবহনের জন্যও রাস্তাটি ব্যবহার করা হয়। এ সড়কে বিদ্যমান গড় বার্ষিক দৈনিক ট্রাফিক ১৭৯১০ টি।
ট্রাফিক পূর্বাভাস অনুযায়ী এ যানবাহনের সংখ্যা ২০২৩ সালে দৈনিক ২৩৯২০ টি, ২০২৫ সালে দৈনিক ২৭০০০ টি, ২০৩৩ সালে দৈনিক ৩৯০০০ টি এবং ২০৪৩ সালে দৈনিক ৬৩৫৮০ টি। প্রকল্প সূত্রে আরো জানা গেছে, প্রকল্পের মোট ব্যায় ধরা হয়েছে ২২৪২৭৭.৪৫ লক্ষ টাকা।
যার মধ্যে জিওবি: ২০২০৭৬.৮৮ লক্ষ টাকা এবং নিজস্ব অর্থ: ২২২০০.৫৭ লক্ষ টাকা। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে ভ্রমণ সময় ৬২.৮৯% হ্রাস, যানবাহনের গতিসীমা ৪.৪৫ গুণ বৃদ্ধি এবং যানবাহনের বিলম্ব সময় ৭৪.৭৪ শতাংশ হ্রাস পাবে।