সোমবার   ২৫ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ১০ ১৪৩১   ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বিশুদ্ধ পানির সংকটে দুই ওয়ার্ডে কারবালা

লিমন দেওয়ান

যুগের চিন্তা

প্রকাশিত : ০৭:১৮ পিএম, ৪ ডিসেম্বর ২০২২ রোববার

 

# টানা তিনদিন পানির সংকটে মানবেতর জীবন-যাপন
# কেমিক্যাল সংকটের কারণে এমন সমস্যা হয়েছিল : নির্বাহী প্রকৌশলী নাসিক

 

নারায়ণগঞ্জের সিটি কর্পোরেশনের ১২ ও ১৩ নং ওয়ার্ডের পুরো এলাকায় তিন দিন যাবৎ পানি সংকটে ভুগছে এলাকাবাসী। পুরো  এলাকা জুড়ে পানির জন্য হাহাকার সৃষ্টি হয়েছে। এলাকার প্রায় ১৫ হাজারের ও অধিক লোকের দৈনন্দিন কাজকর্ম ব্যাহত হচ্ছে। কোন ভাবে তারা ভালোভাবে জীবন যাপন করতে পারছে না। ওয়ার্ডগুলোর মানুষ পানির জন্য হাহাকার করছে।

 

 

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ১২ নং ওয়ার্ডের খানপুর জোড়া ট্যাংকি ও ১৩ নং ওয়ার্ডের আমলাপাড়া এলাকার সকল পর্যায়ের মানুষ অনেকটাই অস্বস্তিকর অবস্থায় রয়েছে। তিনদিন যাবৎ পানি না থাকার কারনে এলাকাবাসী পানি সংকটে ভুগছে। অনেকে কষ্ট করে আরেক বাসার ডিপকল থেকে কিছু পানি সংগ্রহ করে কোনো রকম জীবন যাপন করছে।

 

 

সকল এলাকাবাসী বলছে আমরা ওয়াসার এ ধরণের কর্মকাণ্ডে অনেকটাই কষ্টে আছি। কাউন্সিলরসহ সকলে জানে এ বিষয়টা কিন্তু কোন পদক্ষেপ তারা নিচ্ছে না। এবং পুরো এলাকায় ঘুরে দেখা যায় সব বড় বড় বিল্ডিং যার কারণে যদি আশেপাশে কোন পানির ব্যবস্থা ও করে সরকারি লোকেরা তার পরে ও তারা সেই সুবিধাভোগ করতে পারবে না।

 

 

সকলের একটাই দাবি করছে আমরা ভালোভাবে বাঁচতে চাই। পানির অপর নাম জীবন। এই জীবন আমাদেরকে সঠিকভাবে দেওয়া হচ্ছে না। আর এবার আমরা ওয়াসার বিল দিবো না। দরকার হলে বিচার করবো।

 

 

এ বিষয়ে ১২ নং ওয়ার্ডের ভুক্তোভোগী রুনা যুগের চিন্তাকে বলেন, বিগত তিনদিন যাবৎ আমাদের পুরো ১২ নং ওয়ার্ডে পানি নেই। আমাদের ট্যাংকির মধ্যে যতটুকু পানি ছিল তা দিয়ে কালকে পর্যন্ত আমরা কোন রকম চলতে পেরেছি। কিন্তু আজকে সেই পানি ও শেষ এখন আর আমাদের পানি ছাড়া চলার পথ নেই।

 

 

আর পানি থাকুক আর না থাকুক বিলের সময় তারা কোন ছাড় দেয় না। পুরো বিলটাই নেয় আবার কিছু বলতে ও পারি না। পানি না থাকার বিষয়ে বর্তমান কাউন্সিলর শকু সাহেবকে বলেছি সে সরকারি যে ডিপ আছে সেটাকে চালু করে দিয়েছে।

 

 

কিন্তু এতো দূর থেকে পানি নিয়ে এসে চার তলায় পাঁচ তলায় উঠানো অনেকটাই সমস্যা তার পরে ও আমরা জীবনের তাগিদে একটু একটু করে পানি নিয়ে চলছি। শুধু যাতে খেয়ে কোন রকম থাকতে পারি।

 

 

কিন্তু গোসল, অযু আমরা কোনটাই পাক পবিত্রভাবে করতে পারি না। এখন আমাদের এই ১২ নং ওয়ার্ড পুরোটাই কারবালায় পরিনত হয়েছে। আমার কাউন্সিল যে ডিপ দিয়েছে সেটা থেকে সকলে পানি নিয়ে যায় লাইন ধরে। যার কারণে শুধু খাবার পানি নেওয়া ছাড়া বেশি পানি নেওয়ার কোন সুযোগ নাই।

 

 

আমাদের মনে হচ্ছে আমরা একটা দোযখে বসবাস করছি। আর যে ওয়াসার পানি তার দাম অনুসারে আবাসিক সংযোগে প্রতি ইউনিট (এক হাজার লিটার) পানির দাম পড়ছে ১৫ টাকা ১৮ পয়সা। বাণিজ্যিক সংযোগে এই দাম ৪২টাকা। তবে নারায়ণগঞ্জে বিশুদ্ধ পানির সংকট তীব্র। ওয়াসা থেকে নাসিকে হস্তান্তর করার পরও তেমন কোনঅগ্রগতি হয়নি।

 

 

পানি পান করা তো দূরের কথা বাড়ির কাজে ব্যবহার করা যায় না ওয়াসার পানি। কালো পঁচা ও পানির দূর্গন্ধ এতোটা খারাপ অবস্থা কিছু না বলার মতো। আমরা এটার একটা সুরাহা চাই। আমরা ও চাই একটু ভালোভাবে জীবন যাপন করতে। আর পানি নেই বিষয়ে আমাদের এলাকাবাসী নিয়মিত কাউন্সিলর শকু সাহেবকে বলছে কিন্তু সে কোন পদক্ষেপ নিচ্ছে না।

 

 

এ বিষয়ে ১৩ নং ওয়ার্ডের ভুক্তভোগী সুমন যুগের চিন্তাকে বলেন, আমাদের এলাকার প্রায় তিনদিন যাবৎ ছাপলাইয়ের পানি নেই। আমরা অনেক সমস্যার মধ্যে জীবন যাপন করছি। আমরা কাউন্সিলর সাহেবকে এলাকার  অনেক লোক দ্বারা অনেকবার জানানো হয়েছে আমরা ও গিয়ে বলেছি।

 

 

তারা বলে মটর লাগাবো পাইপে একটু প্রবলেম হইতাছে ঠিক হয়ে যাবে। আর সকলে জানে পানির কষ্ট সবচেয়ে বড় কষ্ট। আর পানি থাকুক আর না থাকুক বিল অনবরত দিতে হবে। আমাদের কিছু এলাকার পরিচিত লোক আছে ডিপ বসিয়েছে আমরা তাদের অনেক বলে একটু পানি নিয়ে কোন রকম জীবন যাপন করেছি। আর পরের বাড়িতে কয়দিন যাওয়া যায় একবার না করে দিলে লজ্জা না।

 

 

আবার আমাদের এলাকার কিছু বড় ভাই আছে যারা বলে ভাই কিছু বলার দরকার নাই। আমরা অনেকবার বলেছি ওয়াসার অফিসাররা অনেক ঠ্যাডা। পানির অপর নাম জীবন কিন্তু কিছু দায়িত্ব প্রাপ্ত অবহেলিত লোকদের কারণে এখন আমাদের সেই জীবন নিয়ে টানাটানি।

 

 

আর যখন পানি থাকে তখন দেখা যায় পানি কোন জাতের থাকে না। আমরা মেয়র আপাকে অবগত করে বলতে চাই আমরা যাতে একটু সুন্দরভাবে জীবন যাপন করতে পারি সেদিকে একটু খেয়াল রাখবেন। আমরা অনেকটাই পানির সংকটে ভুগছি। আমরা এটার একটা সুরহা চাই।

 

 

১৩ নং ওয়ার্ডের আরেকজন ভুক্তভোগী হামিদা যুগের চিন্তাকে বলেন, বিগত তিনদিন যাবৎ আমাদের পানি নেই। আবার ওয়াসা অফিস থেকে কোন মাইকিং করা হয়নি যে পানি থাকবে না। এটা তাদের সব চেয়ে বড় ভূল তাদের উচিত ছিল এলাকাবাসীকে আগে থেকে একটু অবগত রাখা কিন্তু তারা তা না করে আমাদের দূর্ভোগের মধ্যে ফালিয়ে দিল।

 

 

এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের পানি সরবারহ নির্বাহী প্রকৌশলী এস.এম. মাসুদ পারভেজ যুগের চিন্তাকে বলেন, গোদনাইলের যে ট্যাপ লাইন প্ল্যান সে ট্যাপ লাইন প্ল্যানের ক্যামিক্যাল আমাদের শেষ হয়ে গিয়েছিল মার্কেটে পাওয়া ও যাচ্ছিল না। আর এক রাতেই ক্যামিক্যালের দাম একটু বেশি হয়ে গিয়েছিল যার কারণে পাওয়া একটু মুশকিল ছিল।

 

 

কিন্তু এখন আমরা তা কিনে নিয়ে এসেছি এবং কাজ ও চালু হয়ে গেছে আশা করি আজকের মধ্যেই পানি সরবারাহ স্বাভাবিক হয়ে যাবে।১২ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর শওকত হাসেম শকু যুগের চিন্তাকে বলেন, বৃহস্পতিবার থেকে ১২ নং ওয়ার্ডের প্রায় অনেক সাইডে পানির সংকট চলছে।

 

 

আমি এ বিষয়ে ওয়াসার অফিসারসহ সিটি কর্পোরেশনের অফিসারদের সাথে যোগাযোগ করেছি তারা আমাকে আশ্বাস দিয়েছে একটু সমস্যা হয়েছে কালকের মধ্যে আবার পানি ঠিক হয়ে যাবে।

 

 

এ বিষয়ে জানার জন্য ১৩ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মাকসুদুল আলম খোরশেদের মুঠোফোনে অনেকবার কল দেওয়ার চেষ্টা করলে ও তার ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।

এস.এ/জেসি