সোমবার   ২৫ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ১০ ১৪৩১   ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

খেটে খাওয়া মানুষের আতঙ্ক এখন ১০ ডিসেম্বর

লিমন দেওয়ান

যুগের চিন্তা

প্রকাশিত : ০৬:০৮ পিএম, ৮ ডিসেম্বর ২০২২ বৃহস্পতিবার

 

# কর্মসূচি করা-ঠেকানোর যাঁতাকলে কামাই বন্ধের শঙ্কা
 

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির ঘোষিত সর্বশেষ মহাসমাবেশ ১০ই ডিসেম্বর। এই ১০ই ডিসেম্বরের ডাকা সমাবেশ এখন আর সমাবেশেই সীমাবদ্ধ নেই এটা এখন দেশের সাধারণ জনগণের আতঙ্ক হিসেবে পরিনত হয়েছে। এখন খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষের মুখে শুধু একটাই কথা কি হবে ১০ই ডিসেম্বরে।

 

 

এই সমাবেশকে ঘিরে এখন সারাদেশেই এক প্রকার থমথমে অবস্থার বিরাজ করছে। জাতীয়তাবাদী বিএনপির নেতৃবৃন্দদের কাছ থেকে জানা যায়, সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদীদল বিএনপি দেশের প্রত্যেকটি দ্রব্যমূল্যের উর্ধগতি, জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি ও বিএনপি নেতাকর্মীদের মামলা হামলা এবং সারাদেশে পুলিশের গুলিতে নিহত কর্মীদের হত্যার প্রতিবাদে প্রত্যেক জেলায় জেলায় বিভাগীয় সমাবেশ হয়েছে।

 

 

আর সকল সমাবেশের মতো সর্বশেষ সমাবেশ হতে যাচ্ছে ১০ই ডিসেম্বর এই সমাবেশ ঘিরেই ইতি মধ্যে প্রশাসনের পক্ষ থেকে নানা নাশকতা মামলা দেওয়া হচ্ছে জাতীয়তাবাদী দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে যার কারণে তারা সবাই বাড়িঘর ছাড়া হয়ে আছে। আবার অনেক নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করছে পুলিশ।

 

 

কিন্তু কোভাবেই দমানো যাচ্ছে না এ বিএনপিকে। যার কারণে সাধারণ জনমনে একটাই কথার আবাস পাওয়া যাচ্ছে কি হবে ১০ই ডিসেম্বরে। বর্তমান বাজারে দ্রব্য মূল্যে বৃদ্ধিসহ মানুষের হাতের নাগালে এখন কিছুই নেই। যার কারণে মানুষ এখন একবেলা খেলে আরেক বেলা খেতে পারে না।

 

 

খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষ এখন বিএনপি ও আওয়ামী লীগের মাঝে পরে পিষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তারা না পারছে কিছু বলতে না পারছে করতে। সকলে মিলে এখন দুই দলের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া দেখছে। যার কারণে সুশীল মহলের লোকদের ধারনা নেতাকর্মীদের এ ধরণের আচরণে ভয়ে অনেক সাধারণ মানুষ ১০ ডিসেম্বরের আগেই নিজের গ্রামে চলে যাচ্ছে।

 

 

তাদের ধারনা দেশের খারাপ পরিস্থিতি হলে পরবর্তীতে আর নিজেরে জন্মস্থানে আর পৌছাতে পারবেন না। আবার অনেকে আল্লাহর কাছে পার্থনা করছে যাতে ১০ ডিসেম্বর কিছু না হয় সব কিছু সুষ্ঠুভাবে হয়ে যায়। কোন সমস্যার সম্মূখিন যাতে তাদের না হতে হয়।

 

 

এ বিষয়ে রাসেল গামেন্টর্সের কর্মকতা মোজাম্মেল জানান, আগামী ১০ই ডিসেম্বর আমরা শুনতে পারছি বিএনপির মহাসমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। এই সমাবেশকে ঘিরে ইতি মধ্যে আমরা শুনতে পারছি অনেক নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করছে পুলিশ। এবং আমরা টিভিতে ও বিভিন্ন পত্রিকায় দেখতে পাচ্ছি বাংলাদেশের বড় দুই দল আওয়ামী ও বিএনপির সকলেই পাল্টা বক্তব্য প্রধান করছেন।

 

 

তাদের বক্তব্যের মাধ্যমে আমরা ধারণা করছি দেশে ১০ই ডিসেম্বর কিছু হতে পারে। এমনিতেই আমরা বর্তমান সরকার থাকাকালীন কোন সহযোগী পায়নি। আবার দেশের এখন নাজেহাল অবস্থা আমরা শুনতে পারছি। দেশের রিজার্ভ নেই দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি সকল প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের যে দাম আমরা আর ভালো নেই।

 

 

এখন আমাদের তিনবেলা খেয়ে পড়ে বেঁচে থাকতে অনেক কষ্ট হয়। আর তার মাঝে যদি আবার ১০ই ডিসেম্বরের পরে দেশে কোন সংকটের সৃষ্টি দেখা দেয় তাহলে আমরা পুরো শেষ হয়ে যাবো।

 

 

এ বিষয়ে অটো চালক রহমত মিয়া জানান, আমরা দিন আনি দিন খাই। প্রতিদিন আমাদের অটো চালিয়ে কমপক্ষে ১০০০ টাকা ইনকাম করা লাগে। তাহলে আমরা কোন রকম গ্যারেজে গাড়ির জমা দিয়ে কিছু টাকা বাসায় নিয়ে ডাল, ভাত থেতে পারি।

 

 

কিন্তু কিছুদিন যাবৎ অনেক মানুষের কাছ থেকে শুনতে পারছি। ১০ই ডিসেম্বর বিএনপি নাকি দেশকে কি করবে। তার পর থেকে নাকি দেশের আবার ও নতুন কোন বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হওয়ার আশংঙ্কা রয়েছে। এখন দেশের যে পরিস্থিতি প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম আগে থেকে অনেকটাই বৃদ্ধি পেয়েছে। যার কারণে আমাদের তিনবেলা খেয়ে বেঁচে থাকতে অনেক যুদ্ধ করতে হচ্ছে। তার মাঝে যদি দেশে আবার কোন বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয় তাহলে আমাদের বেঁচে থাকাটা অনেক কষ্টকর হয়ে দাঁড়াবে।

 

 

চাষাঢ়ার রাস্তার পাড়ে বাসা হকার সুমন জানান, আমরা এখনও ভালো নেই আর পরে ও ভালো থাকতে পারবো কিনা এটা আমার জানি না। ১০ই ডিসেম্বরের বিএনপির সমাবেশ নিয়ে জনমনে একটি আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। আমরা স্বাধীন দেশে স্বাধীনভাবে জীবনযাপন করতে চাই। আমরা সেইটুকু অধিকার কামনা করছি।

 

 

রাস্তার পাড়ে মুড়ি বিক্রেতা আফজাল মিয়া জানান, আমরা নিয়মিত মাথায় করে মুড়ি বিক্রি করে আমাদের সংসার চালিয়ে থাকি। আমি আফজাল মিয়া যতই কষ্ট হোক না কেন কাউর কাছ থেকে কখনোই কিছু চেয়ে বা দার চেয়ে খাই নাই। সকল বোঝা মাথায় নিয়ে সংসার চালিয়ে যাচ্ছি দীর্ঘ ২৫ বছর যাবৎ।

 

 

কিন্তু বিগত দুই বছর যাবৎ আমরা যারা দিন এনে দিন খাই আমাদের এখন চলতে অনেকটাই সমস্যা হচ্ছে। নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম এখন আর আমাদের হাতের নাগালে নেই। সব আমাদের নাগালের বাহিরে চলে এসেছে। তার মাঝে শুনতে পারছি ১০ ডিসেম্বর নাকি বিএনপি সরকার পতনের ডাক দিয়েছে। এখনতো দেশের আরো নাজেহাল অবস্থা সৃষ্টি হবে। যদি এমন হয় আমরা বাসা থেকে বাহির হতে না পারি তাহলে আমাদের সংসার চলবে কিভাবে। আমাদের দেখার কেউ নেই।

 

 

এ বিষয়ে টান বাজারের কুলি মালেক সরকার জানান, আমরা প্রতিদিন সকালে টানবাজার চলে আসি বোঝায় কাজ করতে। নিয়মিত ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা ইনকাম করি। সেই টাকা দিয়ে কোন রকম আমাদের সংসার চালাই। এখন দ্রব্যমূল্যের যে উর্ধ্বগতি মানুষ পুরো দিশেহারা হয়ে যাচ্ছে। মানুষ এখন আর সাভাবিক অবস্থায় নেই। মানুষকে পুরো পাগল বানিয়ে দেওয়া হয়েছে।

 

 

যার কারণে শহরে এখন দেখা যাচ্ছে ছিনতাই, চোর বাটপারী বেড়েই চলেছে। আমরা সবাই কিন্তু দুমুঠো খাওয়ার জন্যই কাজকর্ম করে থাকি কিন্তু এখন আমরা আর সেটা পারি না। এমনেই এখন দেশের অবস্থা ভালো নেই দেখতে পারছি।

 

 

তার মাঝে আবার বিএনপি সমাবেশ ডেকেছে ১০ই ডিসেম্বর কি হবে তা নিয়ে আমরা অনেকটাই এখন দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগছি। আমরা চাই ভালো কিছু হবে তা না হলে দেশের কিছু হয়ে গেলে আমরা সামনে না খেয়ে মরবো আমরা। আল্লাহ যেন সকলকে ভালোটা বুঝার তৌফিক দান করে।

এস.এ/জেসি