সোমবার   ২৫ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ১০ ১৪৩১   ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

না’গঞ্জে অস্থির ভোগ্য পণ্যের বাজার

আবু সুফিয়ান

যুগের চিন্তা

প্রকাশিত : ০৭:২৪ পিএম, ৮ ডিসেম্বর ২০২২ বৃহস্পতিবার

 

ডলার সংকট আর এলসি জটিলতায় তেল, চিনি, ময়দার মতো বেশকিছু ভোগ্য পণ্যের দাম বেড়েছে কয়েকগুন। সরবরাহ সংকটের অজুহাতে প্রতিনিয়ত অস্থির হয়ে ওঠে এসব পণ্যের বাজার। সারা দেশের মতো যার প্রভাব পরেছে নারায়ণগঞ্জ জুড়ে। তবে ব্যতিক্রম পেঁয়াজ, রসূন, আদা, এলাচের দাম।

 

 

আজ বুধবার (৭ ডিসেম্বর) নারায়ণঞ্জের বিভিন্ন পণ্যের বাজার ঘুরে দেখা যায়, হাতে গোনা কয়েকটি পণ্য ছাড়া প্রতিটি ভোগ্য পণ্যের দামই আকাশ চুম্বি। তাছাড়া সরবরাহ থাকার পরও শীতকালীন সবজির দামও যেন কমছেই না। যার কারনে বিপাকে পরেছেন নিম্ন আয়ের মানুষ।

 

 

নারায়ণগঞ্জ শহরের দ্বিগুবাবুর বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতি কেজি সিম বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা, রবরটি ৬০ টাকা, মূলা ১৫ থেকে ২০ টাকা, লম্বা বেগুন ৫০ টাকা, কাঁচা মরিচ ২০ টাকা, করলা ৬০ টাকা, কচুর লতি ৪০ টাকা, গাজর ১২০ টাকা, টমেটো ১২০ টাকা, আলু ২২ টাকা, নতুন আলু ৬০ টাকা, চিচিঙ্গা ৪০ টাকা, পটল ৩০ টাকা, কচু মুখি ৫০ টাকা, লাল আলু ২৫ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ২৫ টাকা, লাউ ২০ থেকে ২৫ টাকা, ফুলকপি ২০ থেকে ৩০ টাকা, শালগম ৩০ টাকা, শসা ৭০ টাকা, বাঁধা কপি ৩০ থেকে ৩৫ টাকায়।

 

 

ফুলকপি নিয়ে বিক্রি করতে দ্বিগুবাবুর বাজারে এসেছেন মোঃ আকরাম হোসেন। তিনি যুগের চিন্তাকে বলেন, আমার ফুলকপিগুলো মাঝারি সাইজের ১৫ থেকে ২০ টাকা দরে প্রতি পিস ফুলকপি বিক্রি করেছি। অন্যান্য বারের থেকে এবছর দাম কিছুটা কম। শীতের শুরুর দিকে দাম সবসময় ভালো পাওয়া যায়। তবে এবার বাজারে চাহিদা একটু কম মনে হচ্ছে, ফলে দামটাও আশানুরূপ পাচ্ছি না।

 

 

দ্বিগুবাবুর বাজারের সবজি ক্রেতা আসাদুল ইসলাম বলেন, বাজারে সবজির চাহিদা সব সময় থাকে। কিন্তু মানুষের পকেটে টাকা না থাকায় কিছুই কিনতে পারছে না। তিনি আরো বলেন, দ্রব্য মূল্যের ঊর্দ্ধগতির কারনে মানুষ ঠিক মতো জিনিসপত্র কিনতে পারছেন না। তাই মানুষের জীবনযাপনে ব্যঘাত ঘটছে।

 

 

একই বাজারের সবজি ক্রেতা আসরাফ আলি জানান, ভরা মৌসুমেও সবজির চরা দাম। সব রকমের সবজির সরবরাহ থাকার পরও দাম কমছে না। আরোও বলেন, বাজারে যে দাম তাতে আমাদের মতো মানুষের সাধ্যের বাইরে।

 

 

মসলা বাজারের দামও যেন আকাশ চুম্বি। প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকায়, সরকার কর্তৃক নির্ধারিত মূল্য ৪৮ টাকা হলেও বিক্রি হচ্ছে কমপক্ষে ২ টাকা বেশিতে। রসূন ৭০ থেকে ১০০ টাকা, আদা ১০০ টাকা, শুকনা মরিচ ৩৬০ টাকা, হলুদ ২১০ থেকে ২৫০ টাকা।

 

 

খোলা আটা বিক্রি হচ্ছে কেজি প্রতি ৬৫ থেকে ৭০ টাকায়, আর প্যাকেট আটা কেজিতে ৭০ টাকার উপরে। চালের বাজারের যেন আগুন লেগে আছে। মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৬৫ টাকায়, সরু চাল মান ভেদে ৮০ থেকে ৯০ টাকায়। লাল ডিম ১ হালি বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকায়।

 

 

দেশি মুরগির ডিম ৭০ টাকায়, হাঁসের ডিম ৭০ টাকা। এদিকে কেজি প্রতি চিনি বিক্রি হচ্ছে, ১২০ টাকায়। খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে লিটার প্রতি ১৭০ থেকে ১৭৫ টাকা, পাম তেল ১৪৫ থেকে ১৫০ টাকায়, ৫ লিটারের সয়াবিন তেলের বোতল ৯২৫ টাকা। মসুর ডাল মোটা দানার ১২০ টাকায়, মাঝারি দানার ১২০ থেকে ১২৫ টাকায়, ছোট দানার ১৩০ থেকে ১৪০ টাকায়। খেসারি ৮০ টাকা, এ্যাংকর ৭০ টাকা, মটর ১২০ টাকা, মুগ ডাল ১২০ টাকা, ছোলা ৯০ থেকে ১০০ টাকা।

 

 

মাছের বাজারে কথা হয় মাছ ক্রেতা আমিনুলের সাথে। তিনি বলেন, মাছের দামতো কমছেই না। এরকম দাম থাকলে আমাদের মতো নিম্নবিত্তদের আর মাছ খাওয়া লাগবেনা। মাছের দাম কমানো দরকার। নইলে আমাদের মতো নিম্নবিত্তরা মাছ কিনতে পারবে না।

 

 

তিনি আরো বলেন, গরুর মাংস কিনি না প্রায় ১ বছর থেকে। এখন মাছের বাজারও যদি এরকম চরা থাকে তাহলে মাছ আর মাংস কোনটাই কেনা হবে না। এরকম দাম থাকলে আমাদের মাছে ভাতে বাঙ্গালির ইতিহাস মুছে যাবে। শেষে তিনি বলেন, আমি আপনাদের মাধ্যমে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষন করছি, সরকার যেন বাজার নিয়ন্ত্রনে রাখে আর দ্রব্যমূল্যের দাম কমায়।

 

 

মাছ বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতি কেজি কৈ মাছ বিক্রি হচ্ছে ২৫০ থেকে ৩৫০ টাকায়, শিং মাছ ৪০০ টাকায়, মাগুর ৪০০ টাকা, টাকি ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা, রুই ৩০০ থেকে ৩২০ টাকা, পাঙ্গাস ২০০ টাকা, ইলিশ মাছ সাইজ ভেদে ৬০০ থেকে ১২০০ টাকা পর্যন্ত।

 

 

এদিকে ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে কেজিতে ১৪০ টাকা। সোনালি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২৪০ টাকায়। অপরিবর্তিত রয়েছে গরুর মাংসের দাম, প্রতি কেজি ৭০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। খাসি মাংস বিক্রি হচ্ছে ৯০০ টাকায়। গরুর মাংস বিক্রেতা আনিসুল হক জানান, আমরা প্রতি কেজিচ মাংস ৭০০ টাকাই রাখছি। আমরা কখনই ক্রেতাদের কাছ থেকে বেশি দাম রাখি না। আমাদের সাইন বোর্ডে প্রতি কেজি মাংসের দাম লেখা আছে।

 

 

খাসির মাংস বিক্রেতা মামুন জানান, মানুষের বর্তমান অবস্থার হিসেবে মাংসের দাম অনেক বেশি। তাই আরকি ক্রেতা কম। আরোও জানান, খসির মাংসের দাম বেশি হওয়ায় ক্রেতা একেবারেই নাই বললেই চলে। সব কিছুর দাম বেশি, আমরা বেশি দামে খাসি কিনছি।

 

 

মাংস ক্রেতা ফজলু মিয়া বলেন, খসির মাংস শেষ কবে খাইছি মনে পরে না। আজ ৬ মাস পর আধা কেজি গরুর মাংস নিলাম। জিনিস পত্রের যে দাম তাতে মাছ মাংস তো দূরের কথা, সবাজ খাওয়াও দায় পরে গেছে।

এস.এ/জেসি