সোমবার   ২৫ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ১০ ১৪৩১   ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

গ্যাস সংকট যেন মৃত্যু ফাঁদ

যুগের চিন্তা রিপোর্ট

যুগের চিন্তা

প্রকাশিত : ০৭:৩৭ পিএম, ৮ ডিসেম্বর ২০২২ বৃহস্পতিবার

 

# এক বছরে ২৭ জন দগ্ধ, ৫ জনের মৃত্যু

 

গ্যাস আছে কি না; চুলায় চাবি দিয়ে চেক করে ছিলেন সিদ্ধিরগঞ্জের গৃহবধু আফরোজা। গ্যাস না থাকায় সঠিকভাবে বন্ধ করতে পারেনি। ভোর সাড়ে ৫ টায় স্বামী-সন্তানদের জন্য রান্নার করতে চুলায় দিয়াশলাই দিয়ে বিস্ফোরণ। সেদিনই গৃহবধুর মৃত্যু হয়েছে। দগ্ধ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছে স্বামীসহ ২ সন্তান।

 

 

একই ভাবে গ্যাস লিকেজ থেকে বিস্ফোরণে গত বছরের ডিসেম্বরে আড়াইহাজারে একটি বাড়িতে দুই শিশুসহ একই পরিবারের ৪ জন দগ্ধ হয়েছেন। তাদের কারো মৃত্যু না হলেও দগ্ধ হয়েছিল শরীরের বিশাল অংশ। শুধু সিদ্ধিরগঞ্জ আর আড়াইহাজার নয়, গত ১২ মাসে নারায়ণগঞ্জে ৫টি গ্যাস বিস্ফোরণে ২৭ জন দগ্ধ হয়েছে। এর মধ্যে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয়েছে ৫ জনের।

 

 

বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, সবচেয়ে বেশি বিস্ফোরণে দগ্ধ হয়েছে ফতুল্লায়। সেখানে ১৮ জন, সিদ্ধিরগঞ্জ ও আড়াইহাজারে ৪ জন করে ৮ জন দগ্ধ হয়েছে। এছাড়া রূপগঞ্জে দগ্ধ হয়েছে ১ জন। এদের মধ্যে ফতুল্লায় মারা গেছে ৪ জন আরও সিদ্ধিরগঞ্জে ১ জন।

 

 

ভুক্তভোগী এমনই এক পরিবারের সদস্য আমেনা বেগম বলেন, ‘দিনে বেশির ভাগ সময় গ্যাস থাকে না। তাই চেক করার জন্য চুলায় চাবি দেওয়া হলেও পরে গ্যাস না থাকলে বন্ধ হয়েছে কি না? বুঝার উপায় থাকে না। তাছাড়া গ্যাসের অবস্থান গন্ধের কারণে বুঝা যেতো, এখন সেটাও পাওয়া যায় না। তাই এই ধরণের বিস্ফোরণের ঝুঁকি বেড়ে যায়।’

 

 

সুজনের (সুশাসনের জন্য নাগরিক) সভাপতি ধীমান সাহা জুয়েল বলেন, এই ধরণের দুর্ঘটনার প্রধানত অসাবধানতা বসত হয়। তিতাস কর্তৃপক্ষ পাইপ লিকেজের ব্যাপারে সচেতন হলে দূর্ঘটনা কমে আসবে। আরও কমবে সচেতনতা মূলক প্রচারণা করলে। তল্লা মসজিদের ঘটনায় তারই একটি বড় অবহেলার একটা বড় উদহরণ। সেখানে তিতাসের বড় একটা দ্বায় লক্ষ্য করা যায়। পাশাপাশি আগে গ্যাসের গন্ধে উপস্থিতি নিশ্চিত হতো, এখন সেই গন্ধের প্রখরতা নেই।

 

 

নারায়ণগঞ্জ তিতাস গ্যাস উপমহাপরিচালক মো. মামুনুর রশিদ জানান, বিস্ফোরণের মতো দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ অসাবধানতা। তাই সচেতনতাতেই বেশি গুরুত্ব দিতে বলবো সাধারণ মানুষকে। আমরা চাই মানুষ সব সময় সতর্ক রাখতে। তাই গ্যাসের বিলের কাগজেও গ্যাস ব্যবহারের নিয়ম লিখে দেওয়া হয়। মানুষকে সচেতন করতে আমরা এখন থেকে মাইকিংও করবো। পাশাপাশি ক্যামিকেল মিশ্রিত (গন্ধ যুক্ত) গ্যাস সরবরাহ করবো। যাতে গন্ধ শুকে মানুষ গ্যাসের উপস্থিতি টের পেয়ে সচেতন হতে পারে।

 

 

তবে, নারায়ণগঞ্জ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের উপ সহকারী পরিচালক ফখর উদ্দিন আহাম্মদ জানান, প্রতিদিনই অগ্নিকাণ্ডসহ গ্যাস বিস্ফোরণের মতো দুর্ঘটনা থেকে মানুষকে বাঁচাতে সচেতন করি। মহড়ার পাশাপাশি মসজিদ, মন্দির আর বাসাবাড়িতে প্রচারণা চালায়। তবে, বেশির ভাগ মানুষ ব্যস্ততার কারণে শুনতে চায় না। তাছাড়া কেউ যদি কারো এলাকায় ক্যাম্পেইন করানোর জন্য ডাকে, আমরা প্রস্তুত আছি।

 

 

যে ভাবে করবেন গ্যাস বিস্ফোরণ প্রতিরোধ: ৭টি উপায়ে রান্না ঘরে গ্যাস বিস্ফোরণ প্রতিরোধ করা সম্ভব। প্রথমত রান্না করার পর চুলা এবং এলপিজি সিলিন্ডারের রেগুলেটরের সুইচ বন্ধ করে রাখা। রান্না ঘরের উপরে ও নিচে ভ্যান্টিলেটরের ব্যবস্থা করা, ঘরের মধ্যে গ্যাসের গন্ধ পেলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ঘরের দরজা জানালা খুলে দেওয়া এবং সিলিন্ডারের রেগুলেটর বন্ধ করে দেওয়া। রান্না করার সময় অন্তত আধা ঘণ্টা আগে রান্না ঘরের দরজা জানালা খুলে রাখা। এতে করে আটকে থাকা গ্যাস থাকলে সেটা বের হয়ে যাবে এবং দুর্ঘটনার ঝুঁকি কমে যাবে। এলপিজি সিলিন্ডার চুলা থেকে দূরে রাখা এবং সিলিন্ডারটি দরজা জানালার কাছে বা বাতাস চলাচল করে এমন জায়গায় রাখা। রান্নাঘরে গ্যাসের গন্ধ পেলে কোনোভাবেই লাইটার জ্বালানোর চেষ্টা না করা ও মোবাইল ফোন বা ইলেক্ট্রিক্যাল সুই অফ অফ বা অন না করা। পাশাপাশি গ্যাসের চুলা এলপিজি চুলার নিচে রাখা।

এস.এ/জেসি