দফায় দফায় বাড়ছে এলপিজি’র দাম
আবু সুফিয়ান
যুগের চিন্তা
প্রকাশিত : ০৭:১৫ পিএম, ১১ ডিসেম্বর ২০২২ রোববার
# না’গঞ্জে নির্ধারিত মূল্যে বিক্রি হয়না এলপি গ্যাস
# ক্রেতাদের দাবি কর্তৃপক্ষের নজরদারির অভাব
নারায়ণগঞ্জে দফায় দফায় এলপিজি’র দাম বাড়ায় এবং নির্ধারিত দামের চেয়ে বাড়তি দাম আদায়ের কারনে নানা ভোগান্তিতে পরেছেন এখানকার নিম্ন আয়ের মানুষ। ক্রেতাদের ক্ষোভ সরকার কেন বারবার এই এলপিজি’র দাম বাড়াচ্ছে আর বিক্রেতারা কেন সরকারের নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে অতিরিক্ত মূল্যে এলপিজি বিক্রি করছে।
গত দু’দিন নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন এলপিজি’র দোকান ঘুরে দেখা গেছে, নির্ধারিত দামের থেকে অতিরিক্ত দামে এলপিজি বিক্রির চিত্র। এই এলপিজি’র মূল্য বৃদ্ধির কারনে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলেরও ক্ষোভের চিত্র লক্ষ করা যায়।
একজন ক্রেতা জানান, দফায় দফায় এলপিজি’র দাম বাড়িয়ে সরকার জনগনের সঙ্গে তামাশা করছে। এর এই তামাশার কারনে আমাদের মতো নিম্ন আয়ের মানুষদের নানা রকম ভোগান্তিতে পরছেন।
তিনি আরো বলেন, সরকার সবকিছুর দাম বাড়িয়ে দিয়েছে কিন্তু আমাদের আয় বাড়েনি। তাহলে আমরা এই বাড়তি দামে জিনিসপত্র কিভাবে কিনবো। আরেকজন ক্রেতা মোঃ রাজু বলেন, বর্তমান আমাদের দেশটা সিন্ডিকেট দিয়ে ছেয়ে গেছে। সব জায়গায় সিন্ডিকেট আর সিন্ডিকেট। এই সিন্ডিকেটের কারনে আমাদের নানা রকম ভোগান্তিতে পরতে হয়।
আমাদের মতো নিম্ন আয়ের মানুষের আয় সীমিত, যার কারনে সব সময় আমরাই সব রকমের ভোগান্তির স্বীকার। বিসিক শিল্পাঞ্চলের কয়েকটি দোকান ঘুরে দেখা যায়, এলপিজি বিক্রেতারা নির্ধারিত দামের থেকে অতিরিক্ত দামে বিক্রি করছেন।
এখানকার পঞ্চবটীর নাসির ট্রেডার্স, হোসেন ইলেকট্রনিক, আহমেদ ইলেকট্রনিকস এ্যান্ড হার্ডওয়্যার, মেসার্স আলিফ এন্টারপ্রাইজ, ভূইয়া ট্রেডার্স, বিসমিল্লাহ এন্টারপ্রাইজ, সুমাইয়া ট্রেডার্স, মা ইফফা এন্টারপ্রাইজ, ইফফা এন্টারপ্রাইজ উল্লেখযোগ্য।
এখানকার দোকানদারদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিভিন্ন কোম্পানি ভেদে রিফিল করতে লাগে ভিন্ন দাম। দোকানি জানায়, প্রতি ১২ কেজি এলপি গ্যাসের বোতল রিফিল করতে লাগে ১৩৫০ টাকা থেকে ১৫৫০ টাকা পর্যন্ত। ওমেরা ১৪০০ টাকা, বসুন্ধরা ১৪৫০ টাকা, ইউনিগ্যাস ১৫৫০ টাকা, ডেল্টা ১৩৫০ টাকা লাগে।
কিন্তু বেশি টাকা আদায়ের ব্যাপারে তাদের কাছ থেকে কোন যৌক্তিক বক্তব্য পাওয়া যায় নাই। যদিও ডিসেম্বর ২০২২ এর জন্য বেসরকারি এলপিজি’র রিটেইলার পয়েন্টে ভোক্তা পর্যায়ে মূসক সহ মূল্য প্রতি কেজি ১০৮.০৯ টাকা নির্ধারিত।
ভোক্তা পর্যায়ে বোতলজাতকৃত বেসরকারি এলপিজি’র সমন্নয়কৃত মূল্য মূসক সহ ৫.৫ কেজি ৫৯৪ টাকা, ১২ কেজি ১২৯৭ টাকা, ১২.৫ কেজি ১৩৫১ টাকা, ১৫ কেজি ১৬২১ টাকা, ১৬ কেজি ১৭২৯ টাকা, ১৮ কেজি ১৯৪৬ টাকা, ২০ কেজি ২১৬২ টাকা, ২২ কেজি ২৩৭৮ টাকা, ২৫ কেজি ২৭০২ টাকা, ৩০ কেজি ৩২৪৩ টাকা, ৩৩ কেজি ৩৫৬৭ টাকা, ৩৫ কেজি ৩৭৮৩ টাকা এবং ৪৫ কেজি ৪৮৬৪ টাকা।
নারায়ণগঞ্জ শহরের কালির বাজার ঘুরে দেখা যায়, ১২ কেজি বিএম এলপি গ্যাসের সিলিন্ডার রিফিলে খরচ হচ্ছে ১৪৫০ টাকায়। এলপিজি’র বাড়তি দামের বিষয়ে কথা হয় নারায়ণগঞ্জ শহরের কালির বাজারের নাসির ট্রেডার্সের মালিকের সাথে। তিনি জানান, সরকার তো দাম নির্ধারন করে দেন। কিন্তু এই গ্যাসের বোতল গুলো নিয়ে আসতে আমাদের পরিবহনের জন্য গুনতে হয় অনেক টাকা।
তাছাড়া দোকানের স্টাফের বেতন আছে। তাই আমাদের বাড়তি দাম নিতে হয়। কিন্তু দোকানদারের এই যুক্তি মেনে নিতে নারাজ এখানকার ক্রেতা মোঃ আরজু প্রধান। তিনি বলেন, সরকার যে মূল্য নির্ধারণ করে দিয়েছে তা সব কিছু সহ অর্থাৎ মূসক সহ। তারপরও দোকানদাররা বিভিন্ন অজুহাতে যে বাড়তি টাকা আদায় করছেন তা রীতিমত জুলুম করা।
তিনি ভোক্তাদের অধিকারের কথা বলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের বাজার তদারকি বাড়ানোর জোর দাবি জানান। শেষে তিনি বলেন, যথাযথ কর্তৃপক্ষ সজাগ থাকলে কখনোই দোকানদাররা ক্রেতাদের কাছ থেকে বাড়তি টাকা কখোনই আদায় করতে পারতো না।
নারায়ণগঞ্জের বিসিকের এলপিজি ক্রেতা ও ইঞ্জিনিয়ার মাজহারুল ইসলাম বলেন, এভাবে দফায় দফায় এলপি গ্যাসের দাম বাড়ার কারনে জনগনের মধ্যে নানা ধরনের ভোগান্তির সৃষ্টি হচ্ছে। আবার এই এলপি গ্যাসের দাম নিম্নবিত্তরা চরম বিপাকে পড়বে। বার বার এভাবে এই গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি জনসাধারনের জন্য মোটেও স্বস্থির নয়।
ব্যবসায়ীদের চাপের কারনে এভাবে এলপিজি’র দাম বাড়ানো মোটেও সমিচীন নয়। তাছাড়া এটা রীতিমত অযোক্তিক। তিনি আরোও বলেন, আমি মনে করি সারাবছর সাশ্রয়ী ও নির্ধারিত দামে নিরাপদ সিলিন্ডার মানুষের কাছে পৌঁছাতে বিদেশ থেকে এলপিজি আমদানি ও ব্যবসায়ীদের ওপর নির্ভরশীল থেকে সাধারণ মানুষের স্বার্থরক্ষা করা যাবে না।
এজন্য দেশের স্থল এবং সমুদ্রভাগের গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলন বাড়াতে হবে। সরকারি উদ্যোগে সিলিন্ডার গ্যাস উৎপাদন ও সরবরাহ করতে হবে। শেষে তিনি বলেন, গ্যাসের মত নিত্যপ্রয়োজনীয় ও গুরুত্বপূর্ণ জ্বালানির দফায় দফায় দাম বাড়ানোর আগে যথাযথ চিন্তা ও জনগণের স্বার্থের বিষয়টি মাথায় রেখে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে। কেননা, এর ওপর জনজীবনসহ, শিল্প কলকারখানা ও যোগাযোগের মত সেবাখাত পুরোপুরি নির্ভরশীল। যা সার্বিক পরিস্থিতির অবনতি সৃষ্টি করতে পারে।