সোমবার   ২৫ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ১০ ১৪৩১   ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে বিসিকের সাধারণ মানুষ

আবু সুফিয়ান

যুগের চিন্তা

প্রকাশিত : ০৫:২১ পিএম, ১২ ডিসেম্বর ২০২২ সোমবার

 

# শীঘ্রই বিসিকে অভিযান চালানো হবে : সেলিমুজ্জামান

 

নারায়ণগঞ্জের বিসিক শিল্পাঞ্চলের অধিকাংশ খাবার হোটেলে অপরিচ্ছন্ন পরিবেশে তৈরি হয় সব ধরনের খাবার। নোংরা, আর্বজনা, বাসি ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে এখানকার বেশিরভাগ হোটেলেই খাবার তৈরি হচ্ছে। রান্নার যেমন পরিবেশ নেই হোটেল গুলোতে তেমনি নেই খাওয়ারও পরিবেশন।

 

 

অথচ নোংরা ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে তৈরি করা এসব খাবারই খেতে হচ্ছে বিসিকের বিভিন্ন শ্রমিকসহ দূরদূরান্ত থেকে আসা লোকদেরকে। এছাড়া খোলা জায়গায় অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে রাখা হয় ভাত, বিরিয়ানি, খিচুরি, তেহেরিসহ বিভিন্ন রকমের রান্না করা তরকারি।

 

 

খাবার হোটেল গুলোর বাইরের দিকেও খোলা এবং নোংরা পরিবেশে রাখা হয় সিঙ্গারা, পুরি, ছমুচা, ডিম, খিচুরি, ছোলা, জিলাপি, আলুর চপ, পেঁয়াজু, বেগুনি, লুচি, পরোটাসহ বিভিন্ন প্রকার খাদ্য সমগ্রী। আর এগুলোতে ধুলাবালিসহ মাছিও দেখা যায়।

 

 

তাছাড়া দীর্ঘ দিনের পুরনো তেলে এসব জিনিস ভাজা সহ বিভিন্ন কাজে পরনো তেলের ব্যবহার দেখা যায়। যা স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। হোটেলের এসব দৃশ্য দেখলে মনে হয় হোটেল মালিকরা ক্রেতাদের স্বাস্থের ব্যাপারে মোটেও সচেতন নয়। বিসিক শিল্পাঞ্চলের এই গুরুত্বপূর্ণস্থানে বেশিরভাগ খাবার হোটেল বা রেস্টুরেন্ট গুলোর বাইরের দৃশ্য চকচকে থাকলেও খাবার তৈরির জায়গা দেখলে সচেতন মানুষ আঁতকে উঠবে।

 

 

অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে তৈরি খাবার পরিবেশন করা হচ্ছে চাকচিক্য পরিবেশে। এই এলাকার বেশির ভাগ রেস্টুরেন্ট গুলো বাইরে চকচকে হলেও ভেতরে রান্না ঘরের অবস্থা খুবই অস্বাস্থ্যকর। শিল্পাঞ্চল হওয়ার কারনে এখানে অনেক গার্মেন্টস কর্মী খাবার গ্রহন করে থাকেন।

 

 

বিশেষ করে দুপুরে এখানকার পোষাক কর্মীরা দুপুরের খাবার খেয়ে থাকেন। তারা রীতিমত বাধ্য হয়েই এখানে খাবার গ্রহন করে থাকেন। কিন্তু তাদের খাবার এবং খাবারের মান নিয়ে রয়েছে নানা অভিযোগ।

 

 

গার্মেন্টস কর্মী মোঃ জাফর প্রতিদিন বিসিক ২ নং গেটের রেস্টুরেন্ট গুলো থেকে দুপুরের খাবার গ্রহন করে থাকেন। তিনি বলেন, এখানকার কোন হোটেলেরই খাবারের মান ভালো নয়। আর আমি এই হোটেল গুলোর খাবার তৈরির জায়গা দেখেছি। এখানকার পরিবেশ এটাই খারাপ যে একবার দেখলে আর খাবার ইচ্ছা হবে না।

 

 

তিনি আরো বলেন, আমি হোটেল মালিককে বলেছিলাম। কিন্তু তার কাছ থেকে কোন যৌক্তিক বক্তব্য পাইনি। হোটেল মালিক বলেন, কিসের অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ। মন চাইলে খান না চাইলে অন্য হোটেলে যান।

 

 

এখানকার বাসিন্দা মামুন মিয়া বলেন, এখানকার নিউ প্যাসিফিক রেস্টুরেন্ট, শুভেচ্ছা অভিজাত রেস্তোরা এন্ড সুইটস্ সহ বেশিরভাগ খাবার হোটেলের রান্নাঘরের পরিবেশ স্বাস্থ্যসম্মত নয়। আবার বিশুদ্ধ খাবার পানি সরবরাহেরও ব্যবস্থা নেই।

 

 

গ্রাহক সেবার মান একেবারেই নিম্নমানের। খাবার হোটেল গুলোতে স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না। কয়েকটা হোটেলের ফুড প্রসেসিং লাইসেন্স নেই। বিশেষ করে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান ঝিমিয়ে পড়ার কারনে খাবার হোটেল গুলোতে এ অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে।

 

 

তিনি আরোও বলেন, শহরে অনেক সময় অপরিচ্ছন্নতার অভিযোগে হোটেল বন্ধ করেতে দেখা যায় কর্তৃপক্ষকে। আবার তাদের বলতেও শোনা যায়, ভেজাল ও অস্বাস্থ্যকর খাবার বিক্রেতাদের বিরুদ্ধে অভিযান অভ্যাহত আছে। কিন্তু বিসিক শিল্পাঞ্চলে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের কোন তৎপরতাই লক্ষ করা যায় না। আর সেই সুযোগে হোটেল মালিকরা নিজেদের মনের মতো করে হোটেল ব্যাবসা চালিয়ে যাচ্ছেন।

 

 

অন্যদিকে, ওই এলাকার খেটে খাওয়া মানুষগুলো এসব হোটেল-রেস্তোরার খাবার খেয়ে ক্ষুধা নিবারণ করেন। এসব খাবার খেয়ে প্রতিনিয়তই অসুস্থ হচ্ছেন অনেকেই। মোঃ আশফাক নামে এক গার্মেন্টসকর্মী বলেন, এখানকার এক গার্মেন্টসে চাকরি করি। দুপুরে তীব্র ক্ষুধা নিয়ে হোটেলে খেতে বসি। বিসিকের এই হোটেল গুলোর খাবারের মান খুবই খারাপ, একেবারেই নিস্নমানের।

 

 

অথচ দাম কখনোই কম রাখা হয় না। রাশেদুল ইসলাম নামের এক বেসরকারি চাকরিজীবী জানান, মাঝে মাঝে হোটেলে খেতে হয়। তাদের রান্না দেখলেই বোঝা যায়, যে খাবারের স্বাদ বাড়াতে তারা কত রকমের ভেজাল পণ্য মেশান। এতো কিছু নিজের চোখে দেখার পরও বাধ্য হয়েই পেটের টানে খেতে হয়।

 

 

রাকিব হোসেন নামের আরেকজন জানান, এখানকার নিউ প্যাসিফিক রেস্টুরেন্ট ও শুভেচ্ছা অভিজাত রেস্তোরা এন্ড সুইটস্ সহ প্রায় সব হোটেলের একই অবস্থা। খাবারের মান ভালো না। আবার বাসি খাবার ফ্রিজে রেখে পরের দিন বিক্রি করা হয়। তিনি বলেন, শরীর সুস্থ্য রাখতে টাটকা এবং স্বাস্থ্যকর পরিবেশে তৈরি করা খাবারের কোন বিকল্প নাই। কিন্তু এখানকার হোটেল গুলোর অবস্থা একদম বিপরীত। যা স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।

 

 

এসব অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে খাবার তৈরির ব্যাপারে জানতে চাইলে হোটেল মালিকরা তা প্রত্যাখ্যান করে বলেন, আমরা সব সময় চেষ্টা করি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন পরিবেশে খাবার তৈরি করার। নিউ প্যাসিফিক রেস্টুরেন্ট ও শুভেচ্ছা অভিজাত রেস্তোরা এন্ড সুইটস্ এ যারা খাবার খেতে আসেন তাদের সূত্রে জানা যায়, হোটেলে যেসব খাবার পরিবেশন করা হয় তা অত্যন্ত নিম্নমানের।

 

 

তাছাড়া বাসী খাবার ফ্রিজে রেখে পরদিন গরম করে তা টাটকা খাবার হিসেবে পরিবেশন করা হচ্ছে। বিসিকের বেশিরভাগ হোটেলেই এরকম চিত্র দেখা যায়। আরোও জানান, এসব নোংরা পরিবেশে খাবার তৈরি করে তারা আমাদের খাওয়াচ্ছেন। এগুলো দেখভালের জন্য সরকারের আলাদা বিভাগ থাকলেও তারা কার্যকর কোনো ভূমিকা রাখছে না। আর এসব খাবার খেয়ে সাধারণ মানুষ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন।

 

 

এ বিষয়ে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষন অধিদপ্তর, নারায়ণগঞ্জ জেলার সহকারী পরিচালক মোঃ সেলিমুজ্জামনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বিসিকের হোটেল গুলোর অপরিচ্ছন্ন পরিবেশের কথা স্বীকার করেন। তিনি বলেন, কিছুদিন আগে বিসিকের হোটেল গুলোতে আমরা অভিযান চালিয়েছি।

 

 

তিনি বলেন শুধু আমরা নই, বিভিন্ন সময় জেলা প্রশাসন, নিরাপদ খাদ্য থেকেও অভিযান পরিচালনা করা হয়। বিসিকের হোটেল গুলোতে তিনি আবার অভিযান চালাবেন বলে জানিয়েছেন। শেষে তিনি জানিয়েছেন, শুধু বিসিকেই নয় সারা নারায়ণগঞ্জের হোটেল গুলোর অবস্থা একই রকম কিন্তু আমাদের অভিযান চলমান আছে।