বালুসেতু নির্মাণ কাজের ধীরগতিতে দুর্ভোগ ২০ গ্রামের মানুষ
রূপগঞ্জ প্রতিনিধি
যুগের চিন্তা
প্রকাশিত : ০৯:০৭ পিএম, ১৪ জানুয়ারি ২০২৩ শনিবার
রূপগঞ্জ উপজেলার বালু নদীর উপর ইছাপুরা-পাতিরা বালু সেতু নির্মাণ কাজের ধীর গতির কারণে বিশ গ্রামের প্রায় ৫ লাখ মানুষ দুর্ভোগে পড়েছেন। সেতুটি সময় মতো নির্মাণ কাজ সমাপ্ত না করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এলাকাবাসী। বর্তমানে বাল্য নদীর দুই পাড়ের মানুষ নৌকা যোগে পারাপার হচ্ছেন। স্থানীয়রা জানান, সেতুর এক পাশে রাজধানী ঢাকা অন্য পাশে পূর্বাচল নতুন শহর আর নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের জনপদ। ইছাপুরা-পাতিরা বালু নদীর ওপর একটি লোহার ব্রিজ ছিল। আর ওই ব্রিজ দিয়েই শত শত গাড়ি ও হাজার হাজার মানুষ চলাচল করত। গত চার বছর আগে নতুন সেতু নির্মাণের লক্ষ্যে পুরনো সেই লোহার ব্রিজটি ভেঙে ফেলা হয়। আর এ কারণেই গত ৪ বছর ধরে রাজধানীর সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ থাকায় বেড়েছে চরম দূর্ভোগ।
বিশেষ করে, রুপগঞ্জ, ইছাপুরা, গোয়ালপাড়া, কেয়ারিয়া, পরশি, বাগবের, মুশুরি, ভক্তবাড়ি, ব্রাহ্মণখালী, পাতিরাসহ অন্তত ২০ গ্রামের ৫ লাখ বাসিন্দা এ সেতু দিয়ে চলাচল করে। এছাড়া বালু নদীর দুই পাড়ের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী শিক্ষক ও অভিভাবকরা হয়রানির শিকার হচ্ছেন নদী পারাপার হতে গিয়ে। ঝুঁকি নিয়েই নৌকা যোগে পারাপার হচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। এছাড়া ইছাপুরা বাজারটি এক সময় অনেক জমজমাট ছিল। বালু নদীর দুইপাড় থেকে সবজিসহ বিভিন্ন ধরনের পণ্য ইছাপুরা বাজারে নিয়ে আসতো কৃষকরা। সেতুটি নির্মাণ কাজ সমাপ্ত না হওয়ায় নৌকা যোগে ঝুঁকি নিয়ে এখন আর বাজারে আসছে অনেকেই চায়না। ফলে লোকসানের মুখে রয়েছেন যেমন ব্যবসায়ীরা তেমনি পুরনো এই বাজারটি এখন লোক সমাগমও কমে গেছে অনেকটা। বৃহত্তর হাট ইছাপুরা বাজারের ব্যবসায়ীদের কমেছে কেনাবেচা। ফলে বাড়ছে ক্ষোভ। তাই এ সেতুটির নির্মাণ কাজ দ্রুত শেষ করার দাবী জানিয়েছেন এসব গ্রামের মানুষ ।
উপজেলা এলজিইডি অফিস সূত্রে জানা গেছে, ইছাপুরা বাজার থেকে রাজধানীর খিলক্ষেত পাতিরায় বালু নদীর ওপর উভয়পাশে ৩২০ মিটার পিএসসি গার্ডার সেতু নির্মাণাধীন রয়েছে গত ৪ বছর ধরে। সেতুটি ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরের বিল পাস হলে ৩৮ কোটি ৮৮ লাখ টাকা ব্যয়ে ২০১৮ সালের ১৩ জুলাই কাজ শুরু হয়ে ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২১ সালে শেষ হওয়ার কথা। অথচ দু'বছর পার হয়ে গেলেও সেতু নির্মাণ কাজ অসমাপ্ত রয়ে গেছে। সেতু নির্মাণ কাজ শেষ করতে আরও এক থেকে দুই বছর অপেক্ষা করতে হবে বলে এলজিইডি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন।
গোয়ালপাড়া এলাকার কাউসার আহমেদ বলেন, এক সময় বালু নদীর ওপর এ সেতুটি দিয়ে আমাদের রূপগঞ্জের মানুষ রাজধানী ঢাকায় প্রবেশ করতেন এবং রাজধানী ঢাকা থেকে মানুষ রূপগঞ্জ প্রবেশ করতেন। দুই পাড়ের মানুষের ভালো সুসম্পর্ক ছিল। কয়েক বছরে সেতুটি না থাকায় এখন অনেকটা দূরত্ব তৈরি হয়েছে। এ পথে মানুষের চলাচলও অনেকটা কমে গেছে। সেতুটি চালু হলে আবারও আগের অবস্থায় ফিরে যাবে বলে আমি মনে করি। বাগবের এলাকার জজ মিয়া বলেন, বর্তমানে সেতুটির কারণে ইছাপুরা বাজারটি মৃত প্রায়। বালু নদীর উপর ব্রিজ দিয়ে হাজার হাজার মানুষের চলাচল ছিল। নৌকার যোগে চলাচলের কারণে এখন আর বেশি মানুষ দেখা যায় না।
পাতিরা এলাকার মোহাম্মদ হোসেন বলেন, সেতুটি চালু না হওয়ার কারণে এখন আর রূপগঞ্জে প্রবেশ করা হয় না। নৌকা দিয়ে পারাপার না হয়ে আমরা রাজধানীতে গিয়ে আমাদের দৈনন্দিন কাজ শেষ করে চলে আসি। ইউসুফগঞ্জ স্কুল এন্ড কলেজের অভিভাবক রহমতুল্লাহ বলেন, আগে বালু নদীর পশ্চিমপাড় থেকে বেশ কিছু শিক্ষার্থী এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আসতো। পুরনো ব্রিজ ভেঙে ফেলায় নৌকার যোগে ঝুঁকি নিয়ে এখন আর শিক্ষার্থীরা আসে না। সেতু নির্মাণ প্রকল্পের সুপারভাইজার আনোয়ারুল ইসলাম টিটু বলেন, সেতু নির্মাণ কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে। চেষ্টা করা হচ্ছে যত দ্রুত নির্মাণ কাজ সমাপ্ত করা যায়। আশা করি বছরখানেকের মধ্যেই সেতুর কাজ সমাপ্ত হবে।
উপজেলায় এলজিইডির প্রধান প্রকৌশলী জামাল হোসেন বলেন, ২০২১ সালে সেতু নির্মাণ কাজ সমাপ্ত করতে না পারলেও আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই সেতু নির্মাণ শেষ হবে। সাধারণ মানুষের দুর্ভোগের চিন্তা করে দ্রুত গতিতে কাজ এগিয়ে নেওয়ার জন্য আমরা সব সময় তদারকি করে আসছি। ২২ টি পিলারের মধ্যে সর্বশেষ পিলারটি হয়তো আগামী সপ্তাহের মধ্যে ঢালাই হয়ে যাবে।
এস.এ/জেসি