রোববার   ২৪ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ১০ ১৪৩১   ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

এএসআই হাসানের নেতৃত্বে সক্রিয় চাঁদাবাজ চক্র

যুগের চিন্তা রিপোর্ট

যুগের চিন্তা

প্রকাশিত : ০৭:০৭ পিএম, ১৫ জানুয়ারি ২০২৩ রোববার

 

ইজিবাইক কেন্দ্রিক চাঁদাবাজি নারায়ণগঞ্জের অন্যতম আলোচ্য বিষয়। কথিত আছে সাংবাদিক-পুলিশ ও প্রভাবশালীদের ত্রিমুখী চাঁদাবাজির যাঁতাকলে পিষ্ঠ আলোচিত এই শহর। তবে সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাটারি চালিত গাড়ির চালকদের কাছে মুর্তিমান আতঙ্কের নাম এএসআই হাসান। তিনি এ সেক্টরে চাঁদাবাজির জন্য নিজস্ব গ্যাং তৈরি করে তুলেছেন। প্রত্যহ রুটিন করে তিনি তার গ্যাংদের নিয়ে চাঁদাবাজির উদ্যেশ্যে শহরে বেড়িয়ে পড়েন। পঞ্চবটি , ফতুল্লা কিংবা দুই নম্বর গেইট  সর্বত্রই তার চাঁদাবাজির ক্ষেত্র।

 

তিনি তার গ্যাং সদস্যদের ব্যবহার করে যেসব ব্যাটারিচালিত গাড়ির চালক কোনো প্রশাসনের মান্থলি কিংবা সাংবাদিকদের ষ্টিকার ব্যবহার করেনা তাদের ধরে রেকার বিলের জন্য ডাম্পিং এ নিয়ে যায়। তবে তার গ্যাং সদস্যরা যে পরিমান গাড়ি ডাম্পিং এ পাঠায় তার কয়েকগুন বেশি গাড়ি  আটক করে। ডাম্পিংয়ে কিছু  গাড়ি দিয়ে বাকি চালকদের থেকে ৫০০ থেকে ৮০০ টাকার মতো একটা এমাউন্ট নিয়ে তাদের ছেড়ে দেয়। তিনি এভাবে প্রতিনিয়ত শহরে চাঁদাবাজি করে আসছেন। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে সাধারণ মানুষ থেকে সকল চালকগণ। চালকরা অভিযোগ করে বলেন, এএসআই হাসান চালকদের সাথে যথেষ্ট খারাপ ব্যবহার করে। মাঝে মাঝে মারমুখী হতেও দেখা যায় তাকে।

 

তারা যেসব গাড়ি মান্থলি অথবা ষ্টিকার করা তাদের না ধরে যেসব গাড়ি মান্থলী বা ষ্টিকারহীন তাদের আটক করে। আটক যদি করতেই হয় তবে চাষাড়া হাজার হাজার অটো ডুকছে তাদের আটক করুক। কিন্তু তা না করে সে পঞ্চবটি ফতুল্লা দুই নম্বর গেইট দাড়িয়ে গাড়ি আটক করে। শুধু আটক করে  ক্ষান্ত থাকেন না। তিনি তাদের থেকে টাকা নিয়ে ছেড়ে দেন আবার বাজে আচরণ ও করেন। সরেজমিনে পরিদর্শনে গিয়ে দেখা যায় পোশাকহীন কিছু লোক ঘুরে ঘুরে গাড়ি ধরছে। তাদের জিজ্ঞেস করলে বলে তারা হাসান স্যার এর লোক।

 

তবে হাসানের মুখোমুখি করলে তিনি বলেন এদেরকে চিনেন না তিনি। এক কথায় হাসান যেনো অপ্রতিরোধ্য। শুধু হাসান নয় একাধিক  ট্রাফিক পুলিশ এমন গ্যাং নিয়ে গাড়ি আটক করে চাঁদাবাজি করছে। শহরের দুই নম্বর গেইটে হাসান ও তার গ্যাংকে ধরলে হাসান বলেন, এরা কারা আমি চিনিনা। তিনি তার গ্যাংদের উদ্দ্যেশ্যে বলেন তোমরা চলে যাও। আমি তোমাদের চিনিনা। অথচ হাসানের সাথে প্রকাশ্যে তাদের কর্মকান্ড দৃশ্যমান সবত্রই। শুধু এই চাঁদাবাজি নয় প্রশ্ন উঠেছে পুলিশদের এসব  সহযোগী গ্যাংদের সদস্যরা আসলে কারা।

 

এদের সম্পর্কে জানতে চাইলে ট্রাফিক ইন্সপেক্টর (এডমিন) করিম জানান, এরা আসলে প্রশাসনের কেউ না। প্রশাসন যখন কোনো গাড়ি আটক করে তখন আটককৃত চালকদের বলা হয় সে যদি ৫ টি গাড়ি আটক করে দিতে পারে তবে সে জরিমানা ছাড়াই তার গাড়ি ছাড়িয়ে নিতে পারবে। ট্রাফিক সদস্য সংকটের কারণেই মূলত তাদের ব্যবহার করা হচ্ছে। তবে এখানেও রয়েছে ভিন্ন প্রেক্ষাপট। প্রশাসন কিছু কিছু মানুষদের প্রতিনিয়ত এসব কাজে ব্যবহার করার ফলে তাদের মধ্যো একপ্রকার সাহসের সঞ্চার হয়েছে। এই সাহসকে পুঁজি করে তারা রাজার মতো আচরণ করছে।

 

প্রতি গাড়ি থেকে ১০-২০ টাকা করে হাতিয়ে নিচ্ছে। কেউ দিতে না চাইলে তার গাড়ির চাকা ফুটো করে দেয়া হচ্ছে। এক কথায় তারা যেনো শহরের রাজা আর চালকরা হচ্ছে প্রজা। রাজার হাতে যেমন অস্ত্র থাকে ঠিক তেমনিভাবে এমন রাস্তার রাজাদের হাতে তুলে দেওয়া হয় চাকা ফুটো করার অস্ত্র। রাজা জদি প্রজাকে নিষ্পেষিত ও শোষণ না করে তবে কি রাজার মান থাকে? হাসানের মতো এএসআইদের প্রশ্রয় থাকলে অবশ্য সাধারণ মানুষও হয়ে উঠে অসাধারণ অত্যাচারী। আর রাজার পিছনের রাজা হলেন এএসআই হাসান।

 

সুধীজনরা বলছেন গাড়ি যদি আটক করতেই হয় তবে সব গাড়িকেই আটক করতে হবে। কোনো গাড়ি মাসোহারা দিয়ে পার পেয়ে যাবে আর যারা মাসোহারা দিবে না তারা আটক হবে এটা হতে পারেনা। আবার আটক যদি করতেই হয় তবে কিছু টাকা নিয়ে ছেড়ে দেওয়া চলবে না। কারণ টাকার বিনিময়ে গাড়ি ছেড়ে দেওয়া প্রকাশ্য চাঁদাবাজি। এতে করে ইমেজ সংকট প্রকট হবে ট্রাফিক বিভাগের।

এস.এ/জেসি