মসজিদ সংলগ্ন ময়লার ভাগাড়ে ভোগান্তি
আবু সুফিয়ান
যুগের চিন্তা
প্রকাশিত : ০৪:০৭ পিএম, ১৬ জানুয়ারি ২০২৩ সোমবার
ফতুল্লার শাসনগাঁও এলাকার মোল্লাবাড়ি-বনশ্রী মোড় সংলগ্ন মসজিদের পাশে ফেলা পচা ময়লা-আবর্জনার দুর্গন্ধ বাতাসের সঙ্গে মিশে আশপাশের পরিবেশ দূষিত করছে। স্থানীয় বাসিন্দা সহ এখানকার আশেপাশের মানুষ বাসাবাড়ির ময়লা-আবর্জনা নিয়ে এসে মসজিদ সংলগ্ন উন্মুক্ত এই জায়গায় এলোমেলোভাবে ফেলে যায়।
আর টোকাইরা পচা ময়লার স্তূপ এদিক-ওদিক সরিয়ে ভাঙাচোরা প্লাস্টিক, পলিথিন, বোতল প্রভৃতি কুড়িয়ে নিয়ে যায়। এভাবে ময়লা-আবর্জনা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে মূল রাস্তাসহ আশেপাশের বিভিন্ন স্থানে। এসব ময়লা দীর্ঘদিন ধরে থাকার পরে যে পচা দুর্গন্ধ হয় তার থেকে বাঁচার জন্য পথচারীদের দেখা যায় নাকে রুমাল দিয়ে চলাচল করছে।
কেউ কেউ হাত দিয়ে নাক-মুখ চেপে ধরে চলাচল করছে। ফলে প্রতিদিনই এলাকাবাসী, পথচারী, শিক্ষার্থী, চাকরিজীবী, ব্যবসায়ীসহ শত শত মানুষ অবর্ণনীয় ভোগান্তিতে পড়ছে। স্থানীয়রা জানান, এসব ময়লা আবর্জনার ফলে পার্শ্ববর্তী ভাড়াটিয়া ও পথচারীদের ভোগান্তিতে পড়তে হয়। এছাড়া এখানে রয়েছে একটি মসজিদ।
শনিবার (১৪ জানুয়ারি) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মাস্ক পরা পথচারীরাও ময়লা-আবর্জনার গন্ধে নাক চেপে ওই স্থান অতিক্রম করছেন। কেউ কেউ আবার নিজের পরনের কাপড়ের একাংশ নাকে চেপে ধরছেন। তবে শাসনগাও এবং বনশ্রী মোড় এলাকার স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সবথেকে বেশি ভোগান্তিতে আছেন ময়লার এই ভাগার সংলগ্ন মসজিদের মুসল্লিরা।
এখানকার মসজিদের মুসল্লিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ময়নার দুর্গন্ধের কারণে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়তে মুসল্লিদের চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। একজন মুসল্লি মোঃ আনিসুল হক বলেন, ময়লা দুর্গন্ধের কারণে আমাদের মসজিদে ঢুকে তাড়াতাড়ি নামাজ পড়ে বের হতে হয়।
ময়লার দুর্গন্ধের কারণে মসজিদে বেশি সময় নিয়ে নামাজ পড়া কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর একজন মুসল্লি মফিজুল ইসলাম বলেন, মসজিদের পাশে এভাবে ময়লা ফেলা কোনভাবেই উচিত নয়। এভাবে ময়লা ফেলার কারণে মুসল্লিদের পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়তে ভীষণ অসুবিধা হচ্ছে।
তিনি বলেন, এখানকার ময়লার দুর্গন্ধ এতটাই ভয়াবহ যে কিছুক্ষণ থাকলেই মাথা ঘোরা শুরু হয়ে যায়। তিনি মসজিদ সংলগ্ন এলাকায় যেন ময়লা না ফেলা হয় এবং দ্রুত এই জায়গা পরিষ্কার করার দাবি জানান।
শাসনগাঁও এলাকার বাসিন্দা মোঃ ইসমাইল হোসেন বলেন, মসজিদের পাশে প্রতিদিন মাছ, মুরগির নাড়িভুঁড়ি, নষ্ট সবজি, বিভিন্ন ধরনের পচা ফলমূল ও হোটেলের যাবতীয় বর্জ্যসহ সব ময়লা-আবর্জনা ফেলা হচ্ছে।
এ থেকে চারদিকে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ছে। ফলে রাস্তার পাশ দিয়ে পথচারী ও স্থানীয়রা নাক-মুখ চেপে নিঃশ্বাস বন্ধ করে চলাচল করছেন। তিনি বলেন, এসব আবর্জনার দুর্গন্ধে একদিকে যেমন পথচারীরা অতিষ্ঠ ও অন্যদিকে পরিবেশ দূষণ হচ্ছে।
পথচারী মিলন মিয়া বলেন, প্রায় এক কিলোমিটার পর্যন্ত এসব ময়লা-আবর্জনার গন্ধ বাতাসে ভেসে আসে। যত্রতত্র ময়লা ফেলার কারণে কুকুর এসব আবর্জনা টেনে আনছে রাস্তার ওপর। ফলে আমাদের রাস্তা দিয়ে চলাচল অত্যন্ত কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ছে।
শাসনগাও এলাকার কয়েকজন পল্লী চিকিৎসক জানান, ময়লাগুলো পচে চারদিকে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ছে। এর দুর্গন্ধে এলাকার পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। এখানকার মানুষজন স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়ছে। এ ছাড়াও আমাদের কাছে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা দুর্গন্ধে আরও অসুস্থ হয়ে পড়ছেন।
এছাড়া এই ময়লার ভাগাড়ের পাশের কয়েকজন দোকানদার বলেন, আমরা অনেক দিন থেকে এখানে ব্যবসা করছি। এই দোকানের আয় দিয়েই আমরা সংসার চালাই। আগে বেচাকেনা মোটামুটি ভালোই হতো, কিন্তু এখানে ময়লা-আবর্জনার দুর্গন্ধে দিন দিন খরিদদার কমে যাচ্ছে। বর্তমানে বেচাকেনা একেবারেই কম হয়। এ আয় দিয়ে সংসার চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে আমাদের।
শাসনগাও এলাকার বাসিন্দা সুমন মিয়া ও রুস্তম বলেন, আমরা সবসময় এই রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করি। স্থানীয়রা সহ ভাড়াটিয়ারা এখানে ময়লা-আবর্জনা ফেলে ভাগাড় করে রেখেছে। প্রতিনিয়ত এখান থেকে দুর্গন্ধ বের হয়। যখন এই ময়লার ভাগাড়ের পাশ দিয়ে হেঁটে যাই তখন আমাদের বমি আসে। নাক চেপে রাস্তা পার হই। তারা আরও বলেন, আমরা যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ জানাচ্ছি, যেখানে মানুষের চলাচল নেই এমন জায়গায় যেন আবর্জনা ফেলা হয়।
কলেজ শিক্ষার্থী রাকিবুল ইসলাম বলেন, বিভিন্ন খাবার হোটেল ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের প্রতিদিনের পঁচা পরিত্যক্ত খাবার, দইয়ের খালিবাটি, ডিমের খোসা, পলিথিন, মুরগির নাড়িভুঁড়ি, প্লাস্টিকের বোতলসহ নানা ধরনের দুর্গন্ধযুক্ত ময়লা আবর্জনা এখানে ফেলা হচ্ছে। এতে আবর্জনার স্তূপ থেকে তীব্র দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ছে বাতাসে। দূষিত হচ্ছে পরিবেশ।
দুর্গন্ধে এই রাস্তা দিয়ে চলাচলকারী পথচারীরা সমস্যায় পড়ছেন। অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন এলাকার বাসিন্দারা। এ অবস্থায় মসজিদের মুসল্লিসহ এলাকার বাসিন্দারা ক্ষোভ প্রকাশ করে অবিলম্বে এই ময়লা আবর্জনা পরিষ্কার করে পরিবেশ সুরক্ষার দাবি জানান।