রোববার   ২৪ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ১০ ১৪৩১   ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

পল্লী বিদ্যুতের ২০০ ডিজিটে ভোগান্তিতে গ্রাহক  

যুগের চিন্তা রিপোর্ট

যুগের চিন্তা

প্রকাশিত : ০৬:৫৮ পিএম, ২৬ জানুয়ারি ২০২৩ বৃহস্পতিবার

 

# বিদ্যুতের দাম বাড়লে সফটওয়্যারের জন্য এটা করতে হয় : ডিজিএম বন্দর
 

আগে টাকা পরিশোধ পরে ব্যবহার এই পদ্ধতিতে সেবা প্রদানের কৌশলে গ্রাহকদের প্রিপেইড মিটার সংযোগ দিয়েছে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি। যদিও চুরি ও লোকসান প্রতিরোধ, বিল দিতে গ্রাহকদের ভোগান্তি কমানো এবং বিদ্যুতের পরিমিত ব্যবহার নিশ্চিত করতে সরকারের পক্ষ থেকে গ্রাহকদের জন্য প্রিপেইড মিটার স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।

 

 

তবে প্রি-পেইড মিটার সংযোগের শুরু থেকেই এর সেবার মানসহ ভোগান্তির বিভিন্ন অভিযোগ ছিল গ্রাহকদের কাছ থেকে। এর মধ্যে বড় অভিযোগটি হলো আগের মিটারের তুলনায় এই মিটারের বিল বেশি কেটে নেওয়া। আগের এনালগ মিটারের তুলনায় দেড়গুন দুইগুন এমনকি তিনগুন বেশি বিল কেটে নেওয়ারও অভিযোগ ছিল গ্রাহকদের কাছ থেকে।

 

 

এ নিয়ে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন মিডিয়ায় সংবাদও এসেছে বহুবার। তবে এবার কার্ড রিচার্জের পর মিটারে কোড এন্ট্রিতে গ্রাহকদের ব্যাপক ভোগান্তির অভিযোগ পাওয়া গেছে। অবশ্য এই ভোগান্তি এই প্রথম নয়। প্রতিবার বিদ্যুতের মূল্য পরিবর্তন হওয়ার পর মিটারে ২০০ ডিজিটের কোড চেপে এন্ট্রি করতে গ্রাহকদের এরকম সমস্যায় ভূগতে হয় বলে অভিযোগ তাদের।

 

 

তাই যারা কার্যালয়ে বিদ্যুত কার্ড রিচার্জ করতে আসেন এই সময়টার জন্য তাদের মিটারের এন্ট্রির দায়িত্ব কর্তৃপক্ষ নিলে এই ভোগান্তি কম হতো বলে গ্রাহকরা দাবি করেন। অন্যদিকে গ্রাহকের তুলনায় টেকনিশিয়ানের অভাবে সকল গ্রাহকের বাড়ি গিয়ে কোড এন্ট্রি করে দেওয়া সংস্থার পক্ষে সম্ভব হয় না বলে কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে।

 


 
এই বিষয়ে পল্লী বিদ্যুতের বিভিন্ন গ্রাহকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, পল্লী বিদ্যুতের এলাকা সাধারণত গ্রামের এলাকা। এসব এলাকায় বিদ্যুতের বিল রিজার্জে মিটারে নাম্বার এন্ট্রির কাজটি করে থাকেন মহিলারা। যারা নিজেরা না বুঝেন তারা অন্যজনের সহযোগিতা নিয়ে এই কাজটি করেন।

 

 

বিল রিচার্জে মিটারে এন্ট্রি করার জন্য সাধারণত ২০ ডিজিটের একটি নাম্বার দেওয়া থাকে যা মিটারের বাটন চেপে এন্ট্রি করতে হয়। গ্রাম্য মহিলারা অনেকটা সাদামাটা হওয়ায় প্রায়ই এই ২০ ডিজিটের নাম্বার এন্ট্রিতেই ভুল করে ফেলেন কিন্তু আবারও বিদ্যুৎ বিলের দাম বেড়ে যাওয়ায় মিটারের সফট্ওয়্যার পরিবর্তনের জন্য ২০০ ডিজিটের নাম্বার দেওয়া হচ্ছে গ্রাহকদের। এর ফলে বেশিরভাগ গ্রাহকই এই নাম্বার চাপতে গিয়ে হয়রানির শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ করছেন তারা।

 

 

এরই মধ্যে পল্লী বিদ্যুতের বেশ কয়েকজন গ্রাহক যাদের কাছে পল্লী বিদ্যুতের কর্মকর্তা বা কর্মচারীদের নাম্বার আছে তারা মিটারের সামনে দাঁড়িয়ে থেকে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে পরামর্শ নিয়ে কয়েকবার চেষ্টা করার পর সফল হয়েছেন। অনেকেই আবার নিজেরা চেষ্টা করে সফল না হওয়ায় ছুটে যাচ্ছেন জোনাল কার্যালয়ে।

 


 
বন্দর ২২ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা মাহমুদা জানান, তিনি বেশ কয়েকবার চেষ্টা করেও সফল হননি তাই এখন বিদ্যুৎ অফিসে ছুটে এসেছেন। এখানে আসার পর তাকে একটি মোবাইল নাম্বার দেওয়া হয়। বাসায় গিয়ে মিটারের সামনে দাঁড়িয়ে মোবাইলের পরামর্শের মাধ্যমে রিচার্জ করার কথা বলা হয় তাকে।

 

 

বন্দরের দাঁসেরগাও এলাকার তুষার আব্দুল্লাহ জানান তিনি বেশ কয়েকবার চেষ্টা করেও কার্ডটি রিচার্জ করতে পারেননি এবং তার পক্ষে মোবাইলের মাধ্যমে সহযোগিতা নিয়েও করা সম্ভব হবে না জানালে তাকে একজন টেকনিশিয়ানের নাম্বার দিয়ে বলা হয় যোগাযোগ করতে। সেই টেকনিশায়ন তার বাসায় গিয়ে সময় মতো এন্ট্রি করে দিবে বলে তাকে জানানো হয়েছে।

 

 

লুৎফা বেগম এসেছেন নাসিক ২৪ নং ওয়ার্ড থেকে। তিনিও কয়েকবার চেষ্টা করে সফল হননি বলে এখানে সহযোগিতার জন্য নবীগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ অফিসে সহযোগিতার জন্য এসেছেন বলে জানান তিনি।

 


 
এরই মধ্যে পল্লী বিদ্যুতের পক্ষ হতে মাইকিংয়ের মাধ্যমে গ্রাহকদের টাকা রিচার্জের জন্য নির্দিষ্ট সময় বেধে দেওয়া হয়েছে। তাই বন্দর জোনাল অফিস গুলোতে গিয়েও দেখা যায় কার্ড রিচার্জ করতে গ্রাহকদের ভিড়। একই সাথে কোড এন্ট্রিতে হয়রানির শিকার হওয়া গ্রাহকদের উপস্থিতি। এখানে উপস্থিত থাকা টেকনিশিয়ানদের সাথে তাদের সমস্যার সমাধান নিয়ে কথা বলছেন সেসব গ্রাহকগণ।

 

 

সেখানে উপস্থিত থাকা গ্রাহকগণ অভিযোগ করে বলেন, প্রতিবার বিদ্যুৎ বিলের মূল্য বাড়ালেই আমাদের এই হয়রানির শিকার হতে হয়। একদিকে বাড়তি বিলের হয়রানি অন্যদিকে মিটারের কোড এন্ট্রিতে হয়রানি। তবে যাদের মিটারে এখনও টাকা ব্যালেন্স আছে তাদের একটু সময় নিয়ে সমস্যার সমাধান করার সুযোগ থাকলেও যাদের ব্যালেন্স শেষ তাদের হয়রানি আরও বেশি বলে জানা গেছে।

 


 
এই বিষয়ে জানতে চাইলে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির বন্দর জোনাল অফিসের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (ডিজিএম) প্রকৌশলী শ.ম. মিজানুর রহমান বলেন, এই সমস্যা সব সময়ের জন্য না। যখনি সরকার বিদ্যুৎ বিল বাড়ায় তখনই নতুন বিলের রেটের সাথে মিটারের সফটওয়্যারকে সমন্বয় করার জন্য একটি ২০০ ডিজিটের কোড দেওয়া হয়। এটি শুধু একবারের জন্য।

 

 

একবার এই রিফিল করার পর থেকে প্রতিমাসে আবারও আগের নিয়মানুযায়ী-ই (২০ ডিজিটে) রিফিল করা যাবে। তবে এই ২০০ ডিজিট রিফিলে গ্রাহকদের কোন তেমন কোন সমস্যা হচ্ছে না বলে তিনি দাবি করেন। যদি কেউ রিফিল করতে না পারেন এবং কেউ কোন অভিযোগ করেন তাহলে তাদের সাহায্য করার জন্য তাদের কয়েকটি টিম প্রস্তুত আছে বলে জানান তিনি। এসব টিমের সদস্যরা মোবাইল ফোনে কিংবা প্রয়োজন হলে গ্রাহকদের বাড়িতে গিয়ে সমাধান করেন।