গ্যাসের পাইপ লাইনে জ্বীন-ভূত ঢুকেছে
যুগের চিন্তা রিপোর্ট
যুগের চিন্তা
প্রকাশিত : ০১:৩৯ পিএম, ১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ বুধবার
# আমাদের অধিকার বুঝিয়ে দেন না হলে টিকতে পারবে না: হাজী নূরউদ্দিন
# সিলিন্ডারের ব্যবসা বাড়ানোর জন্য গ্যাস উত্তোলন বন্ধ রাখা হয়েছে : রফিউর রাব্বি
# গ্যাস নাই কিন্তু জনপ্রতিনিধিরা চুপচাপ বসে আছেন: এড.মাসুম
প্রায় দীর্ঘদিন যাবৎ নারায়ণগঞ্জ শহর ও শহরতলীর বিভিন্ন এলাকাতে জ্বালানি গ্যাসের তীব্র সংকট দেখা দিচ্ছে। যার কারণে চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন রান্নার কাজে নারীরা। আর নারায়ণগঞ্জে দেখা মিলে নানা অনিয়ম ও সমস্যার কিন্তু সব কিছুকে পিছনে ফেলে সব থেকে বেশি সমস্যা হয়ে দাড়িয়েছে গ্যাস সংকটের সমস্যা। আর আগে জনগণ সারাদিনে এক সময় হলে ও গ্যাসের সুফল ভোগ করতে পারতেন কিন্তু এখন সকাল-বিকাল-সন্ধ্যাা কোন সময়ে এই গ্যাস সংযোগ পাচ্ছেন না নগরবাসী যার কারণে তিতাস গ্যাসের এ ধরণের কর্মকাণ্ডে নাখোশ ও দুঃখ প্রকাশ করছেন নারায়ণগঞ্জের জনগণ।
তার কারণে আমরা নারায়ণঞ্জবাসীর সংগঠনের উদ্দ্যোগে আবাসিকে পর্যাপ্ত গ্যাসের দাবীতে তিতাস অফিস ঘেরাও করা হয়। আর তাদের এই ঘেরাও কর্মসূচিতে গ্যাস না পাওয়া বিভিন্ন এলাকা থেকে ভুক্তভোগীরা অংশগ্রহণ করে শহরে ঝাড়ু– মিছিল করেন। সেখানে অনেকে দাবি করেন, গ্যাস কর্মকর্তাদের কাছে অনেকবার গ্যাস যাতে সুন্দরভাবে পাওয়া যায় সেই দাবি জানানো হয়েছে কিন্তু তারা আমাদের কথা শুনে হজম করে ফেলে। আমরা তার কোন পরিবর্তন দেখছি না। আবার গ্যাস না পাওয়ার কারণে যদি তাদের বিল আটকিয়ে রাখে তাহলে তারা বিল না দেওয়ার কারণে বাসায় গিয়ে গ্যাস লাইন বিছিন্ন করে আরো দুর্ভোগ সৃষ্টি করছেন।
আরো জানা গেছে, অনেক সাধারণ জনগণ আবার তারা যাতে অতি শীঘ্রই সুন্দর গ্যাস সরবারহ করে। সেই প্রেক্ষিতে তাদের সাথে দেনদরবার ও করেছে। কিন্তু তাতে ও কোন লাভ হয়নি। যার কারণে সকলেই তাদের চোর বলে আখ্যা দিয়েছে। আর গ্যাসের দাবিতে এই অফিসের চত্বরে অনেকবারই আন্দোলন সংগ্রাম হয়েছে কিন্তু কোনটাতেই তাদের টনক নড়েনি। তাই আমরা এবার যে পর্যন্ত আমাদের গ্যাস না পাবো সে পর্যন্ত আমরা আমাদের কর্মসূচি অবহৃত রাখবো। আর এই গ্যাসের অফিসের অফিসার ও কর্মচারীদের সিলিন্ডার সিন্ডিকেট ভেঙ্গে দেওয়ার ও দাবি জানান।
গতকাল মঙ্গলবার (৩১ জানুয়ারি) সকালে ‘আমরা নারায়ণগঞ্জবাসী’ সংগঠনের ব্যানারে চাষাঢ়া বালুরমাঠ এলাকায় অবস্থিত তিতাস গ্যাস অফিসের মূল ফটক ঘেরাও করা হয়। আর তাদেরকে হুঁশিয়ারি করা হয় যে, তাদের দাবি না মানলে অবস্থান কর্মসূচি করা হবে। গ্যাসের চুলায় গ্যাস নাই, মা-বোনদের ঘুম নাই’ বিভিন্ন স্লোগানের মাধ্যমে গ্যাস অফিস চত্বর প্রায় দুই থেকে তিন ঘন্টা গরম থাকে।
এ সময় মানববন্ধনের সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা নুর উদ্দিন আহমেদ বলেন, আমরা আমাদের অধিকার চেয়েছি, কারও দয়া চাইনি। বৈশ্বিক পরিস্থিতির কথা বলে আমাদের যৌক্তিক আন্দোলনকে দমিয়ে রাখা যাবে না। আপনারা প্রয়োজনে আপাতত ভোর থেকে দুপুর পর্যন্ত আবাসিক চুলায় গ্যাস সরবরাহ স্বাভাবিক করেন। দুপুর থেকে সন্ধা ৭টা পর্যন্ত গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রেখে রাত ১১টা পর্যন্ত সচল রাখেন। বিদ্যুতের মতো করে রেশনিং সিস্টেমে নিয়ে আসেন। আপনারা তিতাস কর্তৃপক্ষ যদি আমাদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের ভাষা না বুঝেন, তবে মনে রাখবেন নারায়ণগঞ্জ সব আন্দোলন সংগ্রামের সূতিকাগার। আমাদের অধিকার আমাদের বুঝিয়ে দেন। নয়তো টিকতে পারবেন না।
সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রফিউর রাব্বি, আমরা সমুদ্র পেলাম সেই সমুদ্রকে ১১টি ব্লকে বিভক্ত করে গ্যাস উত্তলনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। কিন্তু এই ১৪ বছরে বর্তমান সরকার এসে এই গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলন কিছুই করে নাই। যার ফলে আমাদের দেশে গ্যাসের সংকট একটি জাতীয় সংকটে পরিনত হয়েছে। আর গ্যাস না উত্তোলনের কারণটা হচ্ছে এই গ্যাস রেখে সিলিন্ডার ব্যবসায় যারা রয়েছে। তাদের ব্যবসা বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য সরকার এই উত্তোলন কাজ বন্ধ করেছে। আমরা সর্বক্ষেত্রে এই দূর্নীতির প্রতিবাদ করি। বলা যায় অনেকদিন যাবৎই আমাদের পাড়া মহল্লায় গ্যাস পাওয়া যায় না। এতে সরকারের ভুল সিদ্ধান্ত রয়েছে পাশপাশি তিতাসের যে অসাধু কর্মকর্তা রয়েছে তারা টাকা খেয়ে লক্ষ লক্ষ সংযোগ নগরীতে দিয়ে রেখেছে। আর আমাদের প্রায় বৈধ গ্যাস ৬৬ হাজার কিন্তু অবৈধ হচ্ছে লক্ষ লক্ষ। আর এর ফলে তারা লক্ষ লক্ষ কোটি কোটি টাকার বিনিময়ে তারা এই কাজটি করছে। আর তারা যদি এই অবৈধ কাজটি না করতো তাহলে যত গ্রাহক রয়েছে তারা সহজেই সুন্দর গ্যাস সরবারহ পেত। আর প্রধানমন্ত্রীকে বলতে চাই তিনি কিছুদিন আগে বলেছে কারা দূর্নীতি করে তাদের ব্যবস্থা নিবেন। আমি বলতে চাই আপনি আপনারা এই গ্যাস অফিসার ও কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন করুন।
এ সময় নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি মাহবুবুর রহমান মাসুম বলেন, এই তিতাস গ্যাসের চত্বরে আমরা বার বার আমরা এসেছি আর বার বারই আমরা কথা বলেছি। শুধু আমরা কথা বলেই যচ্ছি শুধু কথা বললেই তো আর কোন কাজ হবে না। এক দিকে আমরা কথা বলছি অপর দিকে তাদের অপতৎপরতা ঠিকই চলছে। আপনারা জানলে অবাক হবেন যে তারা গ্যাস দিতে পারে না। অথচ গতকাল প্রায় ৪০টি বাড়িতে গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়েছে। আমি তাদের কাছে প্রশ্ন করতে চাই কেন? আপনারা গ্যাস দিতে পারবেন না আবার বিলের জন্য গিয়ে লাইন কেটে দিবেন এটা তো কোন সর্বতার আচরণ না। উপরে যে গ্যাসের অফিসার বসে আছে তাকে আমি বলতে চাই বিলের জন্য আর গ্যাস লাইন কাটার চেষ্টা করবেন না।
পরিস্থিতি যদি আপনি ভালো রাখেন তাহলে আমরা ও ভালো রাখবো। আর পরিস্থিতি যদি আপনি খারাপ রাখতে চান তাহলে আমরা ও খারাপ করবো। আর এখান থেকে আমি একটাই কথা বলতে চাই ‘গ্যাস পাবো না বিল দেব না’। যদি কেউ বিলের জন্য গ্যাস লাইন কাটার জন্য আসে তাহলে আমি বলছি দয়া করে তাকে এক কাপ চা খাইয়ে বিদায় করে দিবেন। কিন্তু অবস্থা যতই খারাপ হোক না কেন কোনভাবেই গ্যাসের লাইন কাটতে দিবেন না। কয়েকদিন আগে লাইন ঠিক করা হলো বলা হয়েছিল গ্যাস একদিন বন্ধ থাকবে গ্যাসের পাইপ লাইনে নাকি জমাট বেঁধে গেছে সেটা পরিষ্কার করতে হবে। আমরা আপনাদের কথা মানলাম কিন্তু এখানো সেই পাইপ লাইন ঠিক হয়নি কেন পাইপ লাইনে কি জ্বীন ঢুকছে নাকি ভূত ঢুকছে।
তিনি আরো বলেন, গ্যাস নিয়ে যারা দূনীতি করছে তারা সমসময় দূনীতি করছে তাদের বিরুদ্ধে আপনারা একটু তৎপর হন। আর কোথায় কোথায় গ্যাস সংযোগ দেওয়া হচ্ছে সেখানে খেয়াল রাখুন। আর ওই যে, গ্যাসের নেতা বন্দরে কাজিমউদ্দিন নামে একজন আছেন উনি বন্দরে, সোনাগাঁয়ে নানা জায়গায় সংযোগ দিচ্ছেন। আবার পত্রিকায় দেখা যায় হাজার হাজার গ্যাস লাইন বিচ্ছিন্ন। কত লক্ষ গ্যাস লাইন থাকলে বলে শত হাজার গ্যাস লাইন সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয় সেটা কিন্তু সহজেই অনুমান করা যায়। আমি কাজিম উদ্দিনকে উদ্দেশ্য করে বলতে চাই আপনি গ্যাস লাইন দেওয়ার ও কেউ না। আর আপনি অবৈধভাবে গ্যাস লাইন দিতে পারেন না। আর আপনি যদি নিয়ে থাকেন জব্দ করে দুর্নীতি করে আবার আপনি কেটে দিচ্ছেন সেই চোর পুলিশ খেলা বন্ধ করেন। আর এই দূনীতি দয়া করে বন্ধ করেন আর কোথাও এ অবৈধ গ্যাস লাইন দেওয়া যেতে পারে না।
তিনি আরো বলেন, আজকে নারায়ণগঞ্জে আমাদের মা বোনেরা হকারদের কারণে ফুটপাতে হাটতে পারে না। আজকে নারায়ণগঞ্জ শহর দূষিত বায়ু দূষিত। আজকে নিশ্বাস নেওয়া যায় না। কিন্তু আমাদের জনপ্রতিনিধিরা চুপচাপ বসে আছেন। আমাদের জনপ্রতিনিধিরা কোথায় শুধু চাঁদাবাজি করে যাচ্ছেন। এই করবেন সেই করবেন আপনাদের তো কোন সময় দেখলাম না। গ্যাস অফিসে এসে অফিসে গিয়ে জিজ্ঞেস করলেন বা কর্মচারীদের জিজ্ঞেস করলেন কেন গ্যাস লাইন নাই কেন। আর নারায়ণগঞ্জে গাড়ি অত্যাচার দেখা যায় বিভিন্ন স্ট্যান্ডে আজকে অটো রিকশা ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছে। এই সমস্ত বিষয়গুলো নিয়ে আমরা বার বার কথা বলি। কিন্তু আমাদের যোগ্য জেলা প্রশাসক আমাদের কথা শুনেন আর হজম করেন। উনার এ ছাড়া কিছু বলার নাই নারায়ণগঞ্জের সমস্যা তারা দেখতে চান না কারণ তাদের হাতে এগুলো দেখার সময় নাই।
এস.এ/জেসি