মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রের নার্সদের রূঢ় ব্যবহারে অতিষ্ঠ রোগীরা
যুগের চিন্তা রিপোর্ট
যুগের চিন্তা
প্রকাশিত : ১২:৪৭ পিএম, ২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ বৃহস্পতিবার
# খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নিবো: স্বপন কুমার
# আমাদের আসা আর যাওয়াই কাজ: সেতেরা
নারায়ণগঞ্জ শহরের নগর ভবন সংলগ্ন মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রের সেবা নিতে আসা রোগীরা দায়িত্বরত কর্মরত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে নান অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। সেবাগ্রহীতাদের অভিযোগ, সেবা পেতে গিয়ে নানা হয়রানি ও কাঙ্খিত সেবা না পাওয়া। এখানকার নার্স ও আয়াদের রূঢ় ব্যবহারে হেনস্থার শিকার হয়ে সেবা না পেয়ে প্রতি নিয়ত ভোগান্তির শিকার হচ্ছে বলে গর্ভবতী মায়েদের অভিযোগ। অথচ নগরীর মা ও শিশু কল্যান হাসপাতালে দেয়ালে লেখা রয়েছে স্বাভাবিক প্রসব সেবা, সিজারিয়ান অপারেশন, গর্ভত্তোর পরিচর্যা সেবা দেয়া হয়। কিন্তু রোগীদের অভিযোগ তারা সেবার নামে মানুষের দুর্ভোগের আর রোগীদের হেনস্থা করার দরজা খুলে বসেছে। তাদের বিরুদ্ধে যেন ব্যবস্থা নেয়ার কেউ নেই।
এদিকে সবাগ্রহীতাদের সাথে দুর্ব্যবহার, নির্দিষ্ট ক্লিনিকে আলট্রাসোনোগ্রাম করতে বাধ্য করা, ডাক্তার ও প্রভাবশালী মহলের আত্মীয়-স্বজন ছাড়া, টাকা ছাড়া সিজার না করা, রাজস্ব খাতে জমা না করে উর্পাজিত অর্থ আত্মসাৎ, প্রতিবছর আসা সংস্কার বাজেটের কাজ না করে অর্থ ও গর্ভবতীদের জন্য আসা ওষুধ লোপাট করাসহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে নগরীর মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রে কর্তব্যরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে। অবশ্য এসব অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছেন মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রের দায়িত্ব প্রাপ্ত কর্মকর্তা জেলা পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের উপ-পরিচালক ডাক্তার স্বপন কুমার শর্মা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মা ও শিশু কল্যান কেন্দ্রে চিকিৎসা নিতে গেলে প্রথমে নিচতলার ৪ নম্বর কক্ষে থাকা সেতেরা ও তার সহযোগীর কাছ থেকে চেক আপ করে এখানকার মেডিকেল অফিসার ডা. ফাতেমা শিরিনের কাছে যেতে হয়। তার পাশে ৩ নম্বর কক্ষে পরিবার পরিকল্পনা সেবা দেয়া হয়। কিন্তু অভিযোগ রয়েছে তারা সেবা না দিয়ে এখানে বসে আড্ডাবাজিতে মেতে থাকেন। দুই ঘন্টায় দুজন রোগী দেখে।
বুধবার এক গর্ভবর্তী রোগী হাফসা বলেন, সেতেরা জোরে আমার পেটে জাতা দিয়ে রূঢ় আচরণ করে আমাকে বলে তোমার কি হয়েছে দেখি। তখন আমি তাকে সব কিছু বলি। শুনার পর তারা তিন জনে মিলে ঘন্টা খানিক সময় খোশ গল্পে মেতে উঠেন। আমাকে চেক আপ কার্ড লিখে না দেয়ায় আমি এক পর্যায় সেখান থেকে চলে আসি। এসময় আপনাদের কাজ কি সেতারাকে এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি জবাবে বলেন, আমাদের কাজ আসা আর যাওয়া। মন চাইলে বসে থাকেন আর না হয় চলে যান। তখন আমি চলে আসতে বাধ্য হই। তার পাশে থাকা আরেক গর্ভবতী রোগী বলেন, আমরা সকাল ৯ টা থেকে বসে আছি। সাড়ে ১২ টার পরেও তারা এখনো চেক আপ করে নাই। তার মাঝে পূরবী নামের এক হিন্দু নার্স আমার সাথে আসা বোনকে ধাক্কা দিয়ে বের করে দেন। তাদের সাথে কোন কথা বলা যায় না। তারা যেন এখানকার সর্বময় ক্ষমতাধর ব্যক্তি।
এসময় কাশিপুর থেকে আসা শিমু আক্তার ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, তারা নিজেদেরকে অনেক বড় সরকারি কর্মচারী মনে করেন। তাদের কেউ কিছু জিজ্ঞেস করতে পারে না। পুরবী আর সেতেরা আমাদের সাথে দূর ব্যবহার করেন। প্রধানমন্ত্রী আসলেও তাদের কিছু করতে পারবে না বলে জানান পুরবী। তাদের বিরুেেদ্ধ কঠোর ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন। যাতে করে তারা কষ্ট করে আসা রোগীদের সাথে দুর ব্যবহার করতে সাহস না পায়।
এছাড়া অভিযোগ রয়েছে, সকল গর্ভবতীদের নিদিষ্ট করে সেবা ক্লিনিকে আলট্রাসোনোগ্রাম করতে পাঠানো হয়। অন্য কোথাও কেউ আলট্রাসোনোগ্রাম করে আসলে তাকে আবারো তাদের কমিশনকৃত ক্লিনিকে তা করতে বলা হয়। এমনকি অন্য কোথাও করে আসা রোগীর রিপোর্ট তেমন ভাবে দেখেন না। এছাড়াও গেটে থাকা দারোয়ানকে রোগীদের সেই নির্দিষ্ট ক্লিনিকে আলট্রাসোনোগ্রাম করতে যেতে বলতে বলেন তাদের কমিশনকৃত ল্যাবে। দেওভোগ এলাকা থেকে চিকিৎসা নিতে আসা এক গর্ভবতী নারী বলেন, এখানে সেবা নিতে এসে উল্টো হয়রানি হতে হয়। ঠিকমতো রোগী দেখেন না। এমনকি এখানকার নার্স, আয়া, দারোয়ানরাও খুব বাজে ব্যবহার করে। ডাক্তার আসে ১২ টার পরে। কিছুক্ষন থেকে চলে যান।
আমেনা খাতুন বলেন, ওষুধ নিতে গেলে নাই বলে তাড়িয়ে দেয়। এসব অনিয়ম, দুর্নীতি আর অব্যবস্থাপনার কারণে মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রে সিট আছে কিন্তু রোগী নেই। অথচ সরকারি বরাদ্ধ ও খরচ হয়ে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ দায়িত্বরত নার্স এবং কর্মকর্তা কর্মচারীদের মারাত্মক খারাপ আচরনের কারণে রোগীরা ডেলিভারী করতে আসেন না। মা ও শিশু হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেছে, নীচ তলায় কয়েকজন ভিজিটর এবং অন্যান্য কর্মচারী বসে আছেন। কোন রোগী আসলে তারা সেবা পাচ্ছে না। এখানে দায়িত্বরত কর্মচারীরা যে যার মত চাকরি করছেন।
এক গৃহবধূ জানালেন, আমি এক মাস আগে এখানে ডেলিভারি করেছি। পেটে একটু ব্যথাসহ অন্যান্য শারীরিক সমস্যা হওয়ায় আবার এসেছি। কিন্তু এই মা ও শিশু হাসপাতালে থাকা অবস্থায় দুর্বিষহ স্মৃতিগুলো মনে হলে, এসব নার্স ও ডাক্তারদের প্রতি ঘৃণাই আসে। এদিকে, দ্রুত নগরীর মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রের অনিয়ম দুর্নীতি বিষয়ে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান কক্সবাজারের সচেতনমহল।
হাসপাতালে আগত গর্ভবতী নারীর সাথে কথা হলে তিনি বলেন, এই হাসপাতালে ফ্রি তে চিকিৎসা দেয়। আমরা গরীবরা এই কারণেই এখানে আসি। কিন্তু কয়েকমাস ধরে সিজার হয়না। সিজার করতে অন্য হাসপাতালে হাজার হাজার টাকা খরচ হয়। সরকারি হাসপাতালে গেলেও বাড়তি খরচ আছে। সরকারিতে ব্যবস্থা করতে না পাইরা, আমার প্রাইভেটে সিজার হইছে। কিন্তু এখানে খরচ হয়না বললেই চলে। বিনা পয়সায় চিকিৎসা পাইলে আমাগো মতো মানুষের উপকার হয়।
নগরীর মা ও শিশু কল্যান কেন্দ্রের মেডিকেল অফিসার ফাতেমা শিরিন বলেন, এখানে অনেক খাতা মেইনটেন করতে হয়। তাই একটু দেরি হয়। অথচ অভিযোগ রয়েছে দুই ঘন্টায় প্রায় বিশ জন রোগী দেখে শেষ করতে পারে না। জেলা পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ের উপপরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) স্বপন কুমার শর্মা যুগের চিন্তার প্রতিবেদককে এ বিষয়ে বলেন, ভুক্তভোগী রোগী এসে অভিযোগ করলে আমাদের জন্য ভালো হয়। তার পরেও আমি এবিষয়ে খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
এস.এ/জেসি